ডেস্ক রিপোর্ট
দেশের মান নিয়ন্ত্রণকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের সনদ আছে কি নেই সেটা দেখে পণ্য কেনেন কি না? —এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল দেশের বিভিন্ন পেশার মানুষদের। অনেকেই বলেছেন, সব সময় দেখা হয় না। কেউ কেউ বলেছেন, দেখেই কেনা হয়। কোম্পানি দেখে কেনার কথাও বলেছেন কেউ কেউ। আবার কেউ বলেছেন, বিএসটিআই কী সেটাই জানেন না!
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) তাদের সনদ নেওয়া পণ্যের মান যথাযথ আছে কি না, পণ্যে কোনো ক্ষতিকর উপাদান কিংবা পণ্যের বিষয়ে কারও অভিযোগ রয়েছে কি না, তা তদারক করে থাকে। বিএসটিআইয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত এই ধরনের পণ্যের সংখ্যা ২২৯। অথচ দেশে পণ্যের সংখ্যা চার হাজারের বেশি।
বিএসটিআই কর্মকর্তারা বলছেন, আমাদের দেশের ত্রেতারা এখনো যথেষ্ট সচেতন নয়। অনেক দেশে মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সনদ দেখে পণ্য কেনার সংস্কৃতি চালু হলেও আমাদের দেশে সেটি এখনো চালু হয়নি।
অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু বলেন, পণ্য কেনার সময় বিশেষ কোনো কারণ না থাকলে বিএসটিআইয়ের সিল বা সনদ আছে কি না দেখি না। কোম্পানি দেখে কিনি, ভরসাটা তাদের গুডউইলের ওপরেই রাখি। বিএসটিআইর সনদ আমার কাছে কার্যত কোনো গুরুত্ব বহন করে না।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রথমত, নকল পণ্যের গায়েও এই বিএসটিআই এর সিলের ছবি প্রিন্ট করে বসিয়ে নেওয়া যায়, বসায়ও। দ্বিতীয়ত, একটি পণ্য বাজারজাত করণের অনুমতির সময় উৎপাদকেরা যে মানের নমুনা বিএসটিআই এর কাছে জমা দেন, অনুমোদন বা সনদ পাওয়ার পর উৎপাদকেরা সেই মান বজায় রাখে কি না সেটা রুটিন করে বাজার থেকে স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয় বলে আমার জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, সে ক্ষেত্রে বিএসটিআইর সনদের ওপর নির্ভর করা না করায় কোনো তফাত দেখি না। কোম্পানির নাম, তাদের গুডউইলটাকেই গুরুত্বে রাখি।
রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শামস্উদ্দিন ইলিয়াস বলেন, আমি সব সময়ই বিএসটিআই সনদ দেখেই পণ্য কিনি। আমার পরিবারের অন্যরাও কেনে। তবে অনেক সময় বিএসটিআই সনদ থাকলেও কোনো পণ্যের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গার্লস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, সব সময় দেখা হয় না। আমি সাধারণত বড় কোম্পানির পণ্য কেনার চেষ্টা করি। তাই বিএসটিআইয়ের লোগো দেখার প্রয়োজন মনে করি না। তবে কম পরিচিত বা অপরিচিত ব্রান্ডের পণ্য কিনতে হলে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে কি না দেখে নিই।
ঢাকার পশ্চিম মাটিকাটা এলাকার গৃহিণী লাভলী আক্তার বলেন, কোনো কিছু কেনার আগে তো বিএসটিআই দেখা হয় না। বেশির ভাগ সময়ই এই লাগবে সেই লাগবে বলে দোকান থেকে নিয়ে নেই।
তবে উত্তর ভাষানটেকের কলেজ শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, যত সময়ই লাগুক আগে সিলটা দেখে নিই। না থাকলে অন্য কোনোটা নিই।
আজ শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিশ্ব মান দিবস। পণ্য ও সেবার মানের প্রতি সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের মতো এবারও দেশে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএসটিআই। এবারের দিবসটিতে গত বছরের প্রতিপাদ্য ‘সমন্বিত উদ্যোগে টেকসই উন্নত বিশ্ব বিনির্মাণে—মান’ বহাল রাখা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাণীতে বলেন, বিশ্বায়নের যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা উৎপাদনের বিকল্প নেই। যেকোনো পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় তথা বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে ‘মান’ আস্থার প্রতীক হিসেবে কাজ করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে সকলের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে পণ্য ও সেবার জন্য আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা অপরিহার্য। ডিজিটাল প্রযুক্তি এখানে প্রণিধানযোগ্য।
পার্পল আইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাছুমুল হক বলেন, সব প্রোডাক্টের জন্য দেখি না। স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা রিলেটেড প্রোডাক্ট যেমন ওষুধ। ডিরেক্ট বডিতে ইউজ হয় লাইক শ্যাম্পু, সাবান এ ধরনের প্রোডাক্ট পার্চেজের আগে চেক করে কিনি। মেয়াদ ও বিএসটিআই সিল আছে কি না।
সাভারের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাইফুল ইসলাম বলেন, পণ্য কেনার সময় বিএসটিআইয়ের লোগো আছে কি না সেটা দেখেই কিনি। তবে অনেক সময় পণ্যের গায়ে বিএসটিআইয়ের লোগো এতটাই ছোট বা ঝাপসা থাকে যে ক্লিয়ার বোঝা যায় না। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।
তবে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটার পানির পাম্প এলাকার নাসিমা আক্তার বলেন, বিএসটিআই কী সেটাই তো জানি না। কোন জিনিসের গায়ে থাকে আর কোনটায় থাকে না তাও জানি না। দোকানে গিয়ে জিনিস চাই, দোকানদার দিয়ে দেয়।
একই কথা জানালেন মানিকগঞ্জের উথলী ইউনিয়নের গৃহিনী রেহেনা আক্তারও। তিনি জানান, বিএসটিআই দেখে কিছু কিনতে হবে সেটা তার জানা নেই। কখনো হয়তো শুনেছেন নাম, কিন্তু বিএসটিআইয়ের কী কাজ তা তিনি জানেন না।
এদিকে বাজারে বিক্রি হওয়া পণ্যের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, মোড়কীকরণ এবং বিক্রয় কার্যক্রমে নজরদারি বাড়িয়েছে বিএসটিআই। বেড়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও সার্ভিল্যান্স সেবাও। বর্তমানে রাজধানীসহ সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে দুটি ভেজালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বিএসটিআই।
বিশ্ব মান দিবস উপলক্ষে জাতীয় মান সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে বিএসটিআই’র প্রধান কার্যালয়ের পাশাপাশি বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়সমূহে আলোচনা সভাসহ প্রচার-প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারে বিশেষ সাক্ষাৎকারভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন মোবাইল ফোনে এসএমএস প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড লাগানো হয়েছে।