স্পোর্টস ডেস্ক
ভারতে চলমান ওয়ানডে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত যে কয়টি ম্যাচে বড় স্কোর হয়েছে, প্রতিটি ম্যাচেই অবদান রেখেছে টপ অর্ডারের ব্যাটাররা। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেন ভিন্ন চিত্রই দেখা যাচ্ছে। প্রায় প্রতি ম্যাচেই স্কোরবোর্ডে শতক তোলার আগেই আসা-যাওয়ার মিছিল শুরু হয় টাইগারদের ব্যাটিং লাইনে। সবশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও দেখা গেছে একই চিত্র। সাকিব বাহিনী মূলত স্কিলের দিক থেকেই পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার তারেক আজিজ খান।
বাংলাদেশ দলে একেক ম্যাচে একেক ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট। নিজেদের সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা থাকলে, এমন হতো না। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত বাজে পারফরম্যান্সের পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন তারেক আজিজ। বোলারদের ওপর দোষ চাপানোটা বোকামি হবে, বরং ম্যাচ হারের দায় টপ অর্ডারের ব্যাটারদের বলেই মনে সাবেক এই পেস বোলার।
দেশের এক টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তারেক আজিজ বলেন, ‘শেষ ১১টা ম্যাচ দেখেন। তার মধ্যে ৯ ম্যাচেই আমাদের ৪ উইকেট পড়ে যায় ১০০ রানের আগে। ওখান থেকে ইনিংসটাকে কতটুকুই মেরামত করা যায়! যেটা করা যায় সেটা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দেখা গেছে। এজন্য মাহমুদউল্লাহকে ধন্যবাদ। শেষে তিনি টেলএন্ডারদের নিয়ে স্কোরটাকে ২৪৫ রানে নিয়ে গেছে। ক্রিকেট স্কিল গেম। স্কিলে যখন আপনি পিছিয়ে থাকবেন, তখন আপনার চেয়ে যে ভালো করবে, তার সামনে আপনাকে অসহায় মনে হবে।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচের পারফর্মার লিটন দাস, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের জন্মদিনে প্রথম বলেই ফিরেছেন গোল্ডেন ডাক করে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অভিজ্ঞ লিটনের এভাবে আউট হওয়াটা প্রশ্ন তুলছে তার দায়িত্ববোধ নিয়ে। সমালোচনা হচ্ছে তাকে বারবার দলে সুযোগ দেয়া নিয়েও। লিটনের মতো ব্যর্থ তানজিদ তামিমও, যদিও তাদের বিকল্প নেই ম্যানেজন্টের হাতে।
আজিজ বলেন, ‘লিটনের ধারাবাহিকতার অভাবটাই সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। আমাদের ৮ নম্বরে একটা ব্যাটার খেলাতে হয়। আপনি বিশ্ব ক্রিকেটে বাকি দলগুলোর দিকে তাকান। আপনি দেখেন তো এখানে ৮ নম্বরে কোন ধরনের খেলোয়াড়কে তারা নিচ্ছে। পরিকল্পনার জায়গাটাতেই আমরা অনেকখানি পিছিয়ে আছি। ম্যানেজমেন্ট যেভাবে টিম নিয়েছে, ব্যাকআপ নেই। একাদশের বাইরে কারা আছে, নাসুম আর দুইটা পেস বোলার।’
নিউজিল্যান্ডে বিপক্ষে ম্যাচে জ্বলে উঠতে পারেননি টাইগার পেসাররা। তবে, ম্যাচে বোলারদের দোষারোপ করতে চান না তারেক আজিজ খান। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনার জায়গায় অটল থাকতে হবে। আমাদের বোলিং যেটা আছে, সেখানে আমি আস্থা রাখতে চাই। যদি ভালো একটা পুঁজি দিতে পারে আমাদের ব্যাটাররা।’
টিম কম্বিনশন নিয়ে প্রতি ম্যাচেই বেগ পেতে হয় বাংলাদেশকে। একজন বোলার বেশি নিলে ব্যাটারের প্রয়োজনীয়তা আর ব্যাটার বেশি নিলে বোলারের অপূর্ণতা। ম্যানেজম্যান্টের পরিকল্পনাহীনতার কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন সাবেক এই ক্রিকেটার।
তিনি বলেন, ‘টপ অর্ডারে তো আমরা অভিজ্ঞ চেয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ম্যানেজমেন্ট অভিজ্ঞকে রেখে গেছে। একমাত্র মেহেদী হাসান মিরাজকে আমরা গোল আলুর মতো ব্যবহার করছি। যখন যেখানে দেয়া যায়। আল্লাহর একটা বিশেষ রহমত যে মিরাজ পারফর্ম করছে। না করলে তার ওপর আরেকটা খড়গ নেমে আসতো। টপ অর্ডাররা আমাদের সে ফিডব্যাকটা দিতে পারছে না। যার কারণে আমরা সাহস পাচ্ছি না, কাকে কোন সময় নামাব। এই অস্থিরতার কারণেই সব সময় একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে।’
তবে, সব জটিলতা ভুলে এশিয়া কাপের মতো ভারতের বিপক্ষে জয় তুলে নেবে বাংলাদেশ এমনটাই বিশ্বাস সাবেক এই ক্রিকেটারের।