রফিকুল ইসলাম, ক্রাইম রিপোর্টারঃ
জামালপুর সদর উপজেলার অন্তর্গত দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র দিগপাইত উপশহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে কাঁচাবাজার সংলগ্ন মাংসের দোকানে প্রায় দুই বছর ধরে দিগপাইত গ্রামের হাফিজুর রহমান (৪৫) কেমিক্যাল রং মিশিয়ে ফ্রিজিং গরুর মাংস বিক্রি করে আসছিল।
গত ৭ জুন তার দোকানে ফ্রিজিং করা মাংস বালতিতে ভিজিয়ে রেখে বরফ ছাড়িয়ে বিক্রি করার সময় জনতা হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় যে, হাফিজুরে বাড়িতেও কয়েক মণ মাংস মজুদ আছে।
তারপর বিষয়টি জানাজানি হলে, ওই ওয়ার্ডের মেম্বার আমিনুল ইসলাম উজ্জ্বল ও মধুপুর রোড় বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল হারুন আলামিনসহ এলাকাবাসী এবং কয়েকজন সাংবাদিক মিলে হাফিজুরের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, ড্রিপফ্রিজ বোঝাই মাংসের তেল, গরুর কিডনি, ফেরফা ও কলিজাসহ প্রায় দুই মণ মাংস রয়েছে। এরপর বণিক সমিতি’র সিদ্ধান্তে তার ব্যবসা বন্ধ রয়েছে।
এর আগে এবছরেরই গত ১৩ ফেব্রুয়ারী ওই মাংস ব্যবসায়ীর দোকান থেকে পলিথিনে মোড়ানো ফ্রিজিং গরুর মাংসসহ মাংসের তেল, কিডনি, ফেরফা, কলিজার টুকরার বস্তা ও কেমিক্যাল রংয়ের বোতল সাংবাদিকরা হাতেনাতে ধরেন।
তখন হাফিজুর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, কেমিক্যাল রং মিশিয়ে ফ্রিজিং মাংস বিক্রি করাটা ভুল হয়েছে। এগুলো আপনি কোথা থেকে আমদানি করেন? এই প্রশ্নের জবাব দিতে হাফিজুর তখন অপারগতা প্রকাশ করেছিল।
পরে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন করা হলে, সামাজিকভাবে বিষয়টি সকলের সামনে চলে আসে। তার পরেই প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহলের টনক নড়ে। তার কয়েকদিন পরে দিগপাইত ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান অত্র ইউনিয়নের সকল মাংস ব্যবসায়ীদের নিয়ে পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন।
বৈঠকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান তালুকদার এবং ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ আমিনুল ইসলাম উজ্জ্বলসহ আরও বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।
ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল মাংস ব্যবসায়ীকে গরু জবাই করার আগে ইউনিয়ন পরিষদে এসে চৌকিদারকে ১৫০ টাকা দিয়ে গরু দেখিয়ে তারপর জবাই করতে হবে এবং মাংস ব্যবসায়ীরা ইউনিয়নের বাইরে থেকে মাংস কিনে এনে বিক্রি করতে পারবে না। গাই গরু জবাই করা যাবে না। ষাঁড় গরু এবং বকনা গরু জবাই করতে হবে। ষাঁড় গরুর মাংস ৭০০ টাকা কেজি ও বকনা গরুর মাংস ৬৮০ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
এই সিদ্ধান্ত গত ২২ ফেব্রুয়ারী তারিখ থেকে কার্যকর করা হয়েছিল। কিন্তু মাংস ব্যবসায়ী হাফিজুর নিয়মের তোয়াক্কা না করে আবারও অসাধুভাবে আগের মতই ফ্রিজিং গরুর মাংস বিক্রি করা শুরু করেছেন। এলাকাবাসীর মধ্যে কেউ বলছে, এগুলো মরা গরুর মাংস। কেউবা বলছে, এগুলো অসুস্থ গরুর মাংস। কেউ কেউ বলছে, এগুলো ইন্ডিয়ান ফ্রিজিং মাংস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার একজন বলেন, হাফিজুর অসংখ্য গাভীন গরু জবাই করেছে। তার বাড়ির পাশের খেতে অনেক বাছুর মাটিতে পুঁতে রাখেছে। আপনারা তার বাড়ির পাশের খেতের মাটি খোদলেই দেখতে পাবেন। এ বিষয়ে হাফিজুর বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
সচেতন মহল বলছে, যদি প্রথমবার ধরা পড়ার পরে হাফিজুরের শাস্তি হতো তাহলে ও আর এমন মাংস বিক্রি করতে পারতো না। এবার অন্তত হাফিজুরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। তারা প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজবাসীকে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
Leave a Reply