নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল তা আজ (২৭ আগস্ট) প্রত্যাহার হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মো. শিশির মনির।
বর্তমানে নিষিদ্ধঘোষিত এ রাজনৈতিক দলটির সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের মধ্যে বিগত সরকারের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে রাজনীতির মূলধারায় জামায়াতে ইসলামীকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ফলপ্রসূ আলোচনাও হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সম্পন্ন হয়ে গেছে জানিয়ে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিযুক্ত আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
তিনি বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে সব প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিন গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা আশা করছি, মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) অথবা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারা আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে অতীতে জারি করা প্রজ্ঞাপনটি বাতিল ঘোষণা করবে। তারা বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করেছে।’
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত কোটা সংস্কার আন্দোলন, সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিলে গত ১ আগস্ট বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সরকার। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারায় নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং তার অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসেবে গণ্য করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট দেওয়া রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে জামায়াতে ইসলামীর পাওয়া নিবন্ধন বাতিল করেন। যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের ওই রায়কে বহাল রেখেছেন এবং যেহেতু সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল। যেহেতু সরকার বিশ্বাস করে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত রয়েছে, সেহেতু সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ধারা ১৮(১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠনকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং উক্ত আইনের তফসিল-২-এ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
নিষিদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ৫ আগস্ট তৎকালীন সরকারের পতন হয় এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে সেনা প্রধানসহ রাষ্ট্রপতির দপ্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করার ক্ষেত্রেও জামায়াতে ইসলামী গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পলন করে। কার্যত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বর্তমান সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিভিন্ন উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের আশ্বাস দিয়েছে।
নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের মামলাটি আপিল বিভাগে পুনরুজ্জীবিত করা হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির।
তিনি বলেছেন, ‘নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহারের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপিল বিভাগে আবেদন করে নিবন্ধন মামলাটি পুনরায় শুনানি করার জন্য আবেদন করব। আমরা আশা করি, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আইনগতভাবে ফিরিয়ে দেবেন।’
উল্লেখ্য, এক রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াত। গত বছরের ১৯ নভেম্বর সেই আপিল খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।