ঢাকারবিবার , ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. অন্যান্য
  2. অভিযোগ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন বিচার
  5. আওয়ামী লীগ
  6. আগুন
  7. আটক
  8. আন্তর্জাতিক
  9. আবহাওয়া
  10. আমাদের পরিবার
  11. আরো
  12. আলোচনা সভা
  13. ইতিহাস ও ঐতিহাসিক
  14. ইসলাম
  15. ইসলামী জীবন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মিঠাপুকুরে ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ভূমি অফিসে ছাত্র-জনতার অবস্থান 

50
admin
সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪ ১২:২৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

 নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ১৩নং গোপালপুর  ইউনিয়নের চিলাখাল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খাজনা খারিজ ও খতিয়ান সরবরাহ বাবদ অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার পাশাপাশি সেবা প্রত্যাশী জনসাধারণকে নানাভাবে হয়রানি করা সহ নানাবিধ দূর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় রবিবার, (০১সেটেম্বর) সকাল ১১ টা থেকে টানা দুই ঘন্টা ভূমি অফিস চত্বরে অবস্থান নেয় এলাকার ভূক্তভোগী জনগণ সহ ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অফিস চত্ত্বরে এসে ওই ভূমি কর্মকর্তা আর তার নিয়োগকৃত দালালদের বিরুদ্ধে  ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

সরেজমিনে, চিলাখাল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে জানা যায় ,সাদেকুল ইসলাম গোপালপুর ইউনিয়নের চিলাখাল ভূমি অফিস সহ চেংমারী ইউনিয়ন ও বড়বালা ইউনিয়নের ছড়ান ভূমি অফিস সহ মোট ৩টি ইউনিয়নের  দ্বায়িত্ব বিগত ২ বছর ধরে পালন করছেন। এরই মধ্য তিনি অফিস কর্মচারী, স্থানীয় দালাল, ভূমিদস্যু ও উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের মুহুরীদের নিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে মাসে কয়েক লক্ষ্যধিক টাকার ঘুষের কারবার করেন বলে জানা গেছে । কোনো দালাল ছাড়া সাধারণ সেবা প্রত্যাশীদের কেউ তার কাছে গেলে খারাপ আচরণ করে অফিস থেকে বের করে দেওয়া সহ নানাবিধ হয়রানি করতে থাকেন।

এসব অনিয়ম আর ঘুষ নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গোপালপুর ইউনিয়নের তিন শতাধিক ছাত্র জনতা আজ রবিবার অফিস চত্বরে এসে উক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপর ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা বলেন, অফিসের পিয়ন পরিচয়ধারী ইব্রাহীমের হাতেই মাসে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্য শুধু চিলাখাল  অফিসেই হয়। অথচ এই ইব্রাহীম এই অফিসের কোনো স্টাফই নন। তার কোনো হাজিরা খাতাও নেই। শুধু তাই নয়,কোনো সেবা প্রত্যাশীরা এলে অফিসে ঢুকার আগেই স্থানীয় দালালেরা তাদের বিভিন্ন ভাবে ভয় ভীতিজনক কথাবার্তা বলে কাগজ পত্র টাকা পয়সা হাতিয়ে নেন। সেখানে আরও আছে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের মুহুরি ও ফড়িয়া নেতারাও, এদের জ্বালায় কেউ সহজেই কোনো সেবা পায়না। এদের ডিঙ্গিয়ে কেউ অফিসে গেলে তাদের দিনের পর দিন হয়রানীর শিকার হতে হয়।

চিলাখাল গ্রামের আব্দুল মতিন মন্ডল বলেন, চেংমারী ইউনিয়নের তিলকপাড়া মৌজায় আমার শালার একটি জমি খারিজ করতে দিছিলাম। প্রথম আবেদনটি এই তহশীলদার প্রতিবেদন দিয়ে বাতিল করেছে। বলেছে উক্ত খতিয়ানে তার অংশের কোনো জমি নেই। খারিজ দেওয়া সম্ভব নয়। অথচ সবই ঠিক ছিলো। পরের বার আবার আবেদন করেছি।  টাকা নিয়ে খারিজ পার করে দিছে। স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার আদালতে ভূমির মামলায় তহশীল প্রতিবেদনের জন্য ১০ হাজার টাকা নিয়েছে তহশীলদার সাদেকুল ইসলাম।  আমার জায়গা জমি রেকর্ড সহ দলিল পত্রাদি সবেই ঠিক আছে। তদন্তে গিয়ে বিবাদীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। এখন আমারই বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন প্রস্তাব পাঠিয়েছে। ঘুরিয়াখাল গ্রামের সাবেক মেম্বার আমিনুর রহমান রনজু ব্যাবসায়ী গোলাম মোস্তফা, দূর্গামতি গ্রামের শেরেকুল ইসলাম, মাঠের হাটের আঃ রশিদ ফকির, কৃষ্ণ পুরের টিসিবি ডিলার মোস্তাফিজার রহমান বাবুল ও এজরা পাড়ার বুলু মিয়া, বাবুরহাটের মনোয়ার হোসেন, শাহিন আলম সহ স্থানীয়  শতাধিক জন ব্যাক্তি বলেন, খাজনা- খারিজে ভীতি দেখিয়ে তারা সবারই কাছে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে নিয়েছেন। ২টি খাজনার চেকে ৮ শত টাকা উঠিয়ে দিয়ে ৯ হাজার টাকা আত্নসাত করেছে।অতিরিক্ত টাকা না দিলে বিভিন্ন ভাবে সব কাজেই হয়রানীর শিকার হতে হয়।

এছাড়াও ছড়ান ভূমি অফিসের আওতাধীন তরফবাদী মৌজার ২৯৮ হোল্ডিং-এর কেশবপুরের মনোয়ার হোসেন বলেন,আমার বাবার ১৮৩ শতক জমির পূর্বের কোনো খাজনা পরিশোধ করা ছিলনা। ভয়ভীতি দেখিয়ে তহশীলদার সাদেকুল ১০ হাজার টাকা নিয়ে ৪২৪ টাকার খাজনার রশিদ প্রদান করেছে।  ছড়ান আরাজি শিবপুর গ্রামের হুমায়ুন কবির বলেন, হেবা দলিল মূলে আমরা ৪ ভাই পিতার সম্পতির মালিক। সম্প্রতি বড়বালা মৌজার ৪০৫৪ ও ৪০৫৫ নং দাগ সহ অন্যান্য দাগের সব দামী জমি গুলো তহশীলদার সাদেকুল ইসলাম আমার প্রতিপক্ষ দুইভাই হারুন ও মর্তুজার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে খারিজ করে দিয়েছেন। অথচ আমরা ৪ ভাইয়েই ওই সব সম্পতির সমান মালিক। এখন আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। ভূমি অফিসে যাচ্ছি এসিল্যান্ড অফিসে যাচ্ছি।  কোনো সুরাহাই পাচ্ছিনা। উল্টো তার অফিসের পিয়ন আশরাফুল এটা ঠিক করে দেওয়ার জন্য আমাদের কাছ থেকে উল্টো টাকা দাবী করছে।এ রকম শত শত অভিযোগ নিয়ে আজ রবিবার ভূক্তভোগী সেবাপ্রত্যাশীরা চিলাখাল ভূমি অফিস চত্বরে অবস্থান নেয়।

ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলামের এ সমস্ত অনিয়ম ঘুষ বাণিজ্যের  প্রতিকার চান এবং যাদের অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো সবেই ফেরত চান।এ সময় উপায়ন্তর না পেয়ে ভূমি কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম প্রকাশ্যে জনসম্মুখে সবারই উদ্দেশ্য ক্ষমা চেয়ে নেন এবং এমন ভূল দূর্ণীতি দালাল বাণিজ্য আর হবেনা বলে অঙ্গীকার করেন।

ছাত্র জনতার সমন্বয়ক ডাঃ মো রাশেদুল ইসলাম, শাওন মিয়া, হৃদয় ও নাজির হোসেন বাবু সহ একাধিকজন বলেন, এখানে এতোদিন ধরে যা ঘটেছে সবটাই দূর্ণীতি শোষণ আর জুলুম। কোনো সেবাপ্রত্যাশী ব্যাক্তিরা দালালের হাত না ধরে এখানে এসে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাননি। অফিস স্টাফরাও যা যা করেছে সেটাও অনেক খারাপ। অনেক বড় জালিয়াতি আর জুলুম করেছে। এমনটা আর কোথাও হয় বলে আমাদের জানা নেই। এই অনিয়ম আর জুলুম থেকেই এই তহশীলদারের প্রতি আজ এতো জনরোষ।

এ সময় ছাত্র জনতার সমন্বয়ক ডাঃ মো রাশেদুল ইসলাম

একটি লিখিত অভিযোগ পত্র পাঠ করেন

১। দুর্নীতিমুক্ত চিলাখাল (বাবুর হাট) কাচারী অফিস চাই।

২। দালালমুক্ত কাচারী অফিস চাই।

৩। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকাশ্য তালিকা চাই।

৪। অতিরিক্ত খাজনা আদায় প্রমান সাপেক্ষে ফেরত দিতে হবে।

৫। তফসিলদার কর্তৃক খাজনা বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় প্রসঙ্গে সেই সঙ্গে সমস্ত ভুক্তভোগীকে খাজনার চেক ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে হবে।

৬। খাজনা বাবদ প্রতি শতক জমির প্রতিবছর অনুযায়ী সরকারী নির্ধারিত মূল্য অফিসের নোটিশ বোর্ডে নিদিষ্ট ভাবে উল্লেখ করতে হবে।

৭। অফিসের কর্মকর্তার কর্মচারীর উপস্থিতি যথা সময়ে এসে হারানী মুক্ত পরিবেশ তৈরি করা এবং দালালমুক্ত বহিরাগত অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে৷

৮। যদি সম্ভব হয়, খাদনা বাবদ চেক প্রদান ও অনলাইনে কোন লেন-দেন এর প্রিন্ট কপি অফিসেই ব্যবস্থা করতে হবে।

উক্ত অভিযোগ পত্রটিতে ভূমি সহকারী কর্মকতা সীল স্বাক্ষর করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: মুলতামিস বিল্লাহ বলেন, ওই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (সাদেকুল ইসলাম) এর ওখানে যেটা অনিয়ম ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে, তার সবটারই অভিযোগ তদন্ত করা হবে। কেউ দূর্ণীতি করে পার পেয়ে যাবেন, এমন ভাবনা ভাবার সময় আর নেই। আমি নিজেই এগুলোর তদন্ত করবো। বিভাগীয় পর্যায়েও তাকে নিয়ে কথা বলবো। সেখান থেকেও তদন্ত করা হবে।  তাকে ডেকে নিয়ে এ ঘটনার জন্য কারণ দর্শানো হবে।  ভিডিও ফুটেজ দেখে ও অভিযোগকারী গণের কথা শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তার বিরুদ্ধে গ্রহণ করা হবে।

এই সাইটে নিজম্ব খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।