মোঃ বুলবুল ইসলাম, খানসামা -দিনাজপুর:
প্রতিনিধি: দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার হোসেনপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোনায়েম খাঁনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দূর্নীতি এবং চাকরি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অত্র প্রতিষ্ঠানের সভাপতির কাছে দুটি লিখিত অভিযোগ করেন অত্র এলাকার লেলিন খাঁন, মঞ্জুরুল ইসলাম, গায়েত্রী রানী ও জয়শ্রী রায় এবং এলাকাবাসী। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ মোনায়েম খাঁন উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য।
তিনি অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ছত্রছায়ায় প্রত্যক্ষভাবে হোসেনপুর ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গনে এম.কে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটেষ্টিক বিদ্যালয় নামে একটি প্রতিষ্ঠান করে এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রচার করে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ করবে মর্মে প্রচার চালান।
অধ্যক্ষের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে সহকারী শিক্ষক পদে লেলিন খাঁনের কাছে দুই লক্ষ, মঞ্জুরুল ইসলামের কাছে দুই লক্ষ ষাট হাজার, জয়শ্রী রায়ের কাছে এক লাখ ষাট হাজার এবং আয়া পদে গায়ত্রী রানীর কাছে বায়ান্ন হাজার টাকা গ্রহণ করেন। এছাড়াও চাকুরী দেওয়ার কথা বলে অনেকের নিকট প্রায় ছয় লক্ষ বাহাত্তর হাজার টাকা নেন। পরবর্তীতে প্রতারণামূলক ভাবে লেলিন খাঁনকে হোসেনপুর ডিগ্রি কলেজের অফিস সহকারী পদে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় সাক্ষীদের সম্মুখে নগদ নয় লক্ষ টাকা গ্রহন করে আত্মসাৎ করে। উক্ত পদে লেলিনকে বাদ দিয়ে অন্য একজনকে নিয়োগ প্রদান করেন।
নিয়োগের টাকা ফেরৎ প্রদান না করে, আমাদেরকে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর মাধ্যমে জেল হাজতে নিয়ে যাবে মর্মে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। উল্লেখ থাকে যে, হোসেনপুর ডিগ্রী কলেজটিতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন তার মনোনীত ব্যাক্তিদের নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি তৈরী করে। উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক লিটন রহমান লিটুকে চাকুরী দিয়ে কলেজটিকে রাজনৈতিক অফিস হিসেবে ব্যবহার করে। বিভিন্ন লোকের উপর মিথ্যা মামলা, মোকদ্দমাসহ অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারনার অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসিতেছিল। টাকা চাইতে গেলে, অধ্যক্ষ দাম্ভিকতার সহিত বলে একটা টাকাও ফেরৎ দিব না।
এমতাবস্থায় অধ্যক্ষ প্রতারনাপূর্বক চাকুরী প্রদানের কথা বলে আরো বিভিন্ন জনের নিকট পচিশ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়াও হোসেনপুর ডিগ্রী কলেজে বিভিন্ন পদে চাকুরী দেওয়ার নাম করে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কলেজের বিভিন্ন পদে শিক্ষক নিয়োগসহ ২০১৪ সালে তথাকথিত জাতীয় নির্বাচনে এলাকার অনেককেই আসামী করার হুমকি দিয়ে জেলা হাজত খাটিয়ে বিভিন্নভাবে আর্থিক সুবিধা নিয়ে টাকার পাহাড় তৈরী করেন।
উক্ত কলেজের জমি নবাব আলীর নিকট বন্ধক রেখে নগদ তিন লক্ষ টাকা ও পুকুর একজনকে লীজ প্রদান করেন এবং অত্র কলেজের ০৮টি ল্যাপটপ অফিস হতে নিয়ে যায়। যার মূল্য পাঁচ লক্ষ ষাট হাজার টাকা। বর্তমানে দৃশ্যমান উদাহরণ হিসাবে অধ্যক্ষ মোনায়েম খাঁনের দিনাজপুর শহরে গোলাপবাগ ও মির্জাপুরে ২টি বিল্ডিং বাড়ী আছে। যার আনুমানিক মূল্য দুই কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা।
অভিযোগকারী লেলিন খাঁনের সঙ্গে কথা হলে। তিনি জানান, আমিসহ আমরা অনেক এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা, দূর্নীতি এবং চাকরি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ লিখিতভাবে দিয়েছি। এ বিষয়ে অত্র কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোনায়েম খাঁনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে। তিনি বলেন, আমি কোন টাকা আত্মসাৎ করি নাই।
একটা প্রতিবন্ধী স্কুল করেছি ওখানে ওরা নিয়োগপ্রাপ্ত আছে। ওরা অতি উৎসাহী হয়ে অভিযোগ দিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও অত্র কলেজের সভাপতি মো. তাজ উদ্দিন বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।