মোঃ জহিরুল ইসলাম স্টাফ রিপোর্টার
বৈষম্য মুক্ত কারিগরি শিক্ষা গঠনের উদ্দেশ্য বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে সকল শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এর ডাক দেয় এবং বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেন। কারিগরি শিক্ষায় টেকনিক্যাল পদে নন-টেকনিক্যাল জনবল নিয়োগ ‘ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর’দের করা অবৈধ মামলায় তৈরি কৃক্রিম শিক্ষক সংকট ও ২০২১ সালে বেআইনী ভাবে নিয়োগ বিধি পরিবর্তন করে রাতের আঁধারে ‘ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর’ পদে অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে সোমবার সকাল ৯:৩০ মিনিট সময় ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।
শিক্ষার্থীরা বলেন স্বৈরাচারের সময় রাতের আঁধারে হঠাৎ করে নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে খুবই অল্প সময়ে নিয়োগ দিয়ে, এমসিকিউ পরীক্ষা নিয়ে,রাত পর্যন্ত ভাইভা নিয়ে রাত ২ টায় ফলাফল প্রকাশ করে কোর্স কমপ্লিট করছে। ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর অস্থায়ী রাজস্বখাতের শূন্যপদ ছিল: ২১৮১ইং জন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি: ৩ মে,২০২১ইং ।
আবেদন শেষ : ২৫ মে,২০২১ইং । এমসিকিউ পরীক্ষা গ্রহণ: ১২ জুন ২০২১ইং । ভাইভা গ্রহণ: ১৩ জুন থেকে ১৮ জুন ২০২১ইং পর্যন্ত(গভীর রাতে ভাইভা) চুড়ান্ত ফলাফল : ২১ জুন ২০২১ইং ( রাত ২টা ) সামরিকভাবে নিয়োগের সুপারিশ: ২১জুন ২০২১ইং। অথচ তখন করোনার জন্য পুরো দেশ সহ সকল সরকারি কার্যক্রম ও বন্ধ ছিল কিন্তু তারাই শুধু সচল ছিল। ৮২% শিক্ষক পদ শূন্য কারিগরির ভয়ঙ্কর অবস্থা । ক্রাফটের এতো প্রয়োজন হল কেন? ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরের দায়িত্ব হচ্ছে যন্ত্রপাতি ,ল্যাব পরিষ্কার করা, ল্যাবের যন্ত্রপাতির হিসাব রাখা, সঠিক সময়ে ল্যাব খোলা ও বন্ধ করা ইত্যাদি।
পরিষ্কার, খোলা, বন্ধ করার জন্য কি ফিজিক্স, কেমিস্ট্রিতে অনার্স ডিগ্রি ধারী লোক লাগবে ? এমন জায়গায় টেকনিক্যাল সেক্টরের এসএসসি, এইচএসসি (ভোকেশনাল ) তারাই এ দায়িত্ব পালন করতে পারবে,যেমনটা ২০২১ইং সালের পূর্বে ক্রাফট মামারা আসার আগে তারাই এ দায়িত্ব পালন করতো। এই অধিদপ্তর এমনভাবে নিয়োগবিধি পরিবর্তন করেছে যে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদে টেকনিক্যাল লোক ঢোকার সুযোগ নেই। উচ্চ মাধ্যমিক (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ২ বছরের ট্রেড কোর্সসহ এবং ৫ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। এখন উচ্চ মাধ্যমিক (ভোকেশনাল) থেকে বের হয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ২ বছরের ট্রেড কোর্সসহ ৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একটাও পাওয়া যাবে ? সম্ভবতই এত শর্ত যুক্ত ক্যান্ডিডেড একটা ও পাওয়া যাবে না।
এইভাবে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি থেকে অনার্স বা সমমানের ডিগ্রি করে এসে অধিদপ্তর নিজেরাই পরীক্ষা নিয়ে ৬জি বা খুবই অল্প সময়ে পরীক্ষা নিয়ে ১৩ তম গ্রেডে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। এখন তারা পদোন্নতি নিয়ে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের ( সিভিল,ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল ) ১০তম ভুক্ত টেকনিক্যাল পদের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হিসেবে দাবি জানাচ্ছে। তাদের দাবি এখানেই শেষ না তারা ১৩ তম গ্রেডে ঢুকে ৪র্থ গ্রেড অধ্যক্ষ হয়ে বের হবে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর বিভিন্ন বাচ্চা সুলভ যুক্তি দিচ্ছে। তাদের যুক্তি “তারা (ফিজিক্স, কেমিস্ট্রিতে) অনার্স বা সমমানের ডিগ্রি করে এসে ১০ম গ্রেডভূক্ত টেকনিক্যাল পদে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হতে পারি না, এরা ডিপ্লোমা করেই জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হয়ে যায়।
এ বৈষম্য আমরা মানি না”। চিন্তা করেন এদের বুদ্ধি কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, হাঁটুর নিচে না হয় পায়ের পাতার নিচে। এত অনিয়মের পরে ও এরা নিজেদের চাকরি টিকানো নিয়ে চিন্তা করে না বরং তারা টেকনিক্যাল পদের ১৩ম গ্রেড থেকে লাফ দিয়ে ১০ম গ্রেডভুক্ত জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর দিয়ে প্রবেশ করে ৪র্থ গ্রেড অধ্যক্ষ হয়ে বের হওয়ার জন্য কাজ করছে। এই ক্রাফটদের কারণে কারিগরিতে অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক), ইন্সট্রাক্টর (টেক) এই পদগুলো বহুদিন ধরে শূন্য থাকা সত্ত্বেও কোন বড় ধরনের নিয়োগ হয়নি।
অন্যদিকে বিসিএস নন ক্যাডার থেকে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (নন-টেক) ইন্সট্রাক্টর (নন-টেক) এ একটা বিশাল পরিমাণ লোকবল কারিগরিতে প্রবেশ করেছে। নিয়োগ জটিলতার কারণে যে কয়জন টেক এর শিক্ষকগণ ছিল তারা প্রমোশন/অবসর এ যাওয়ার ফলে কারিগরি হয়েছে নন-টেকনিকদের আস্তনা। আমাদের কারিগরি অধিদপ্তর এখন ক্রাফটের আধিপত্যে রয়েছে । অধিদপ্তরের কর্মচারীদের লিস্ট দেখলেই বুঝতে পারবেন। অধিদপ্তরে টেকনিক্যাল স্যারদের না নিয়ে সংযুক্তিতে ক্রাফটদের অধিদপ্তরে বসিয়ে দিয়েছে। অধিদপ্তরে কোন ল্যাব এর কাজ না থাকলেও এখানে ক্রাফট রাখা হয়েছে কারণ সারা দেশে তাদের সিন্ডিকেট জোরালো করতে গেলে নেটওয়ার্কিং দরকার। তাই পুরো সিস্টেম কন্ট্রোল এর দায়িত্ব পেয়ে গেছে এই সকল কালপ্রিট।
এখান থেকেই কৌশলে কারিগরি সেক্টরে নন-টেকনিকেল লোক প্রবেশ করানো হচ্ছে।অতি দ্রুত অধিদপ্তর থেকে ক্রাফটদের সরাতে হবে। এভাবেই কারিগরি পদে অকারিগরি লোকজন ঢুকে যাচ্ছে, কারিগরি লোকজন বঞ্চিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কারিগরি সেক্টর ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। কারিগরি আর কারিগরি থাকছে না এটিও অকারিগরি বা জেনারেল হয়ে যাবে। এখনও যদি আমাদের ঘুম না ভাঙ্গে তাহলে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সিস্টেম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এ থেকে মুক্তি পেতে হলে আপোষ নয় সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
ছাত্র ছাত্রীদের দাবী সমূহ
১. প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। ২. ডুয়েট এর আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
৩. শিক্ষকদের শূন্য আসন পূর্ণ এবং ল্যাব আধুনিক করণ।
৪. টেকনিক্যাল পর্যায়ে নন টেকনিক্যাল জনবল নিয়োগ বন্ধ।
৫. ২০২১ সালের নিয়োগকৃত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের পদে নিয়োগকৃত ২১৮১ জনের জনবলকে তাদের কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।
৬. প্রতিটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সমূহে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বিএসসি করার সুযোগ থাকতে হবে, আসন সংখ্যা সংরক্ষিত হতে হবে এবং ভর্তি পরিক্ষা আলাদা হতে হবে।
৭. বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারি স্কেল অনুযায়ী বেতন নির্ধারন করতে হবে।
৮. ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির ক্ষেত্র বৃদ্ধি করতে হবে।
৯. সরকারি ব্যবস্থাপনায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বিদেশে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।