মুকুল হোসেন সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের ধলডোব বাগবাটি দাখিল মাদ্রাসার সুপার আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সস্প্রতি সরকার পতনের পর থেকে অদ্যবদী পর্যন্ত ক্লাশ পরিচালনা ও শিক্ষকদের অনুপস্থতিতে বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্তি করার জন্য নানান চেষ্টা চালাচ্ছে। এনিয়ে বিগত কমিটির দাতা সদস্যসহ সচেতন মহলের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
অভিযোগের ভিত্তিত্বে গতকাল (৩ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার ১১টার দিকে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণীকক্ষ তালা। যত্রতত্র অবস্থায় পড়ে থাকা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। ৮/১০জন যুবক মাদ্রাসার বারান্দায় বসে তাস খেলছে। ইতিমধ্যে মাঠের ভিতরে প্রাপ্ত ওয়ারিশসূত্রে পাওয়া ৪.৩৭ শতাংশ জমির মধ্যে মাহবুবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি মেহেগুনি গাছ রোপন করেছে। বারান্দায় যত্রতত্র অবস্থায় বিড়ি সিগারেটের খন্ডাংশ, গরু ছাগলের বিষ্ঠাসহ গাছগাছালির খড়পাতা দেখা গেছে। চিত্র দেখলে মনে হবে না এটি একটি আদর্শ মাদরাসা। এমন চিত্র মোবাইলে ভিডিও ধারন করার সময় জুয়ারীরা দেখতে পেয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়।
কথা হয় ওই গ্রামের ফিরোজ, ইদ্রিস, সবুজ, রুহুল এর সাথে। তারা এসময় স্থানীয় আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক প্রভাব ও সুপার আশরাফ আলীর নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রতিষ্ঠান শুরু থেকে যেসকল শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে তাদের বিনা নোটিশে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে নতুন করে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছে। তারা আরও বলেন, সুপার আশরাফ আলী স্থানীয় এমপি তানভীর শাকিল জয়ের আস্থাভাজন ছিলেন। তারই ক্ষমতা খাটিয়ে পূর্বের সকল ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিয়ে নতুন করে লোক নিয়েছে। এছাড়া দিনের পর দিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে যার যার নিজস্ব কর্মস্থলে ঘরবাড়িতে থেকে কাজ চালাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে এখানে ভর্তি সকল ছাত্রছাত্রী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, সুপার আশরাফ আলী বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী পানিয়াবাড়ীর কোন ছাত্রকে ভর্তি করান না। শুধু মেয়েদের ভর্তি করানো হয়। কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভাবে তিনি একক নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠান চালান। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানে দুইজন শিক্ষক, দুইজন শিক্ষীকা রয়েছে। সম্প্রতি টাকার বিনিময়ে নতুন একজন দপ্তরীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সুপারসহ মোট ছয়জনের এই প্রতিষ্ঠান। কিন্তুু বছরের শুরুতে ভর্তি করিয়ে মাসের মধ্যে নামে শুধু প্রতিষ্ঠান খুলে থাকে। এদিকে চাকরি দেবার নাম করে দাতা সদস্য আশরাফুলের কাছ কাছ থেকে টাকা নিয়ে পরে চলতি বছরে নিরাপত্তা কর্মী লুৎফর রহমানকে প্রায় সাড়ে ৭লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। দপ্তরী পদে মাহবুবুর রহমানের পরিবর্তে ফজলুল হক করিমকে এবং নৈশ প্রহরী শাহ আলমের পরিবর্তে রাশিদুল ইসলাম হককে অর্থের বিনিময়ে চাকুরি দেয়া হয়েছে।
বিনা নোটিশে চাকরীচ্যুত ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক প্রভাব ও সুপারের স্বেচ্ছাচারিতার নিয়োগ বাণিজ্য, বিদ্যালয়ের অনুপস্থিতি, জায়গা দখল, বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করাসহ নানা বিস্তর অভিযোগ রয়েছে সুপারের বিরুদ্ধে। এনিয়ে এলাকাবাসী দফায় দফায় প্রতিবাদ করলেও আওয়ামী রাজনৈতিক প্রভাবের কারনে ক্ষমতা খাটিয়ে নিয়ম বহির্ভূত বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তার এ অনিয়ম দুর্নীতি এলাকাবাসীর মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করেও কোন সুফল বা রেহায় পাচ্ছে না ভূক্তভোগী ও অভিভাবকবৃন্দ।
বিগত মাদ্রাসা কমিটির সদস্যরা সভায় সুপারের বিরুদ্ধে সদস্যরা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। এমনকি বিগত সভায় প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব সুপারের কাছে চেয়েও পাননি। প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের টাকাও মাদ্রাসা সুপার আত্মসাৎ করেছেন। এ কারণে সভায় সুপারকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি মাদ্রাসা কমিটির সদস্যসচিব হয়েও সভায় উপস্থিত ছিলেন না। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিতে শিক্ষকদের হামলা মামলা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সুপার আশরাফ হোসেন বলেন, ‘আমি কোনো অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে যুক্ত নই। কিছুদিন আগে গ্রামের একজন এসে বলছিল ১১লাখ টাকার বিনিময়ে চাকুরি দেয়া হচ্ছে। এমন গুঞ্জন আমার নামে প্রতিনিয়তই শোনা যাচ্ছ তবে বিষয়টি সত্য নয়। এমপিও ভুক্ত হয়নি বলে ওইভাবে প্রতিষ্ঠানে আসা হয়না তবে কাগজপত্র সব জমা দেওয়া আছে হয়ত খুব দ্রুত এমপিও ভুক্ত হয়ে যাবে। ক্ষমতা দেখিয়ে বিদ্যালয়ের গাছ বিক্রী, কমিটি সদস্যদের স্বাক্ষর জ্বালসহ নানা অনিয়মের কথা অস্বীকার করে প্রতিবেদককে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন।