আধুনিক যুগে শহর কিংবা গ্রামের বাসা বাড়ির মেঝেতে চাকচিক্যময় টাইলসের ব্যবহার বৃদ্ধির পাওয়ার সাথে সাথে কমে গেছে শীতল পাটি সহ সব ধরনের পাটির ব্যবহার । আগে গরমের সময় দিন কিংবা রাতে শহর কিংবা গ্রামে সকল বাসা বাড়িতে শীতল পাটি কিংবা অন্যান্য পাটি বিছিয়ে মানুষ একটু স্বস্তি খুঁজে পেত।
বিদ্যুৎ চলে গেলে পাটিতে শুয়ে বসে হাত পাখার বাতাসে নিজদের যেমন দেহ প্রাণ জুড়িয়ে নিতো ঠিক তেমনি বাসা বাড়িতে অতিথি এলে তাদেরকেও পাটিতে শুতে বসতে দিতো । কিন্তু এখন দিন পাল্টে গেছে,বাসা বাড়ির মেঝেতে চাকচিক্যময় টাইলস লাগানোর ফলে সব ধরনের পাটির চাহিদা কমে গেছে ।
মানুষ এখন মেঝে একটু পরিষ্কার করেই গরমে শুয়ে বসে থাকছে । গত সোমবার ১১ নভেম্বর টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী ধনবাড়ী হাটে কথা হয় পাটি বিক্রেতাদের সাথে । শীতলপাটি সহ সব ধরনের পাটির চাহিদা কমে গেছে। পাকুটিয়া থেকে ধনবাড়ীর হাটে পাটি বিক্রি করতে আসা অক্ষয় চন্দ্র পাল জানান,’ আগে ধনবাড়ীর হাটে ৩০/৪০ টা পাটি বিক্রি করতে পারতাম, কিন্তু পাটির চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন ৪/৫ টা পাটি বিক্রি হচ্ছে। এতে আমাদের এখন টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে ।
তবে এখন শীতের সিজন শুরু হচ্ছে, হয়তো বিয়ে শাদি বেড়ে যাবে, তখন কিছু বিয়ের পাটি বিক্রি করতে পারবো । কিন্তু গরম কালে অতীতে যে পরিমাণ শীতল পাটি সহ অন্যান্য পাটি বিক্রি হতো তা এখন সেভাবে হচ্ছে না । একটা শীতল পাটি বুনতে একজন কারিগরের দুই দিন সময় লাগে । অথচ বিক্রি হয় এক হাজার থেকে বারো শত টাকায় । যা কোন ভাবেই এই দুর্মূল্যের বাজারের সাথে তাল মেলানো যায় না ।
সরকার কোন সহযোগীতাও করে না পাটির কারিগরদের জন্য । এভাবে চললে এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবো ‘। প্রায় একই কথা বললেন ধনবাড়ীতে পাটি বিক্রি করতে আসা পাকুটিয়ার নিখিল চন্দ্র । তিনি জানান,’ মোহনগঞ্জ এর চিকন ডাল পাটি ৫ফুট বাই ৭ ফুট এক হাজার টাকার বেশি বিক্রি করা যায় না ,একই দাম শীতল পাটিরও । ভালো মানের শীতলপাটি বারো শত থেকে পনের শত টাকায় বিক্রি হয়। তবে পিঠা পাটি পাঁচ ছয় শত টাকায় বিক্রি হয় । কিন্তু সারাদিন পাঁচ ছয় টা পাটি বিক্রি করে পুষোয় না । না পারছি এই পেশা ছেড়ে দিতে না পারছি ধরে রাখতে। কেউ আমাদের দিকে নজর দেয় না।