ডেস্ক রিপোর্ট
কিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের সামরিক প্রধান ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী। তার আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় বিশ্ব দরবারে ঘোষিত হয়।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। ৫২ বছর আগের আজকের এই দিনটি বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের কাছে আজও স্মরণীয়। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে নিয়াজী তার বাহিনীসহ আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
নিয়াজীর কাছ থেকে আত্মসমর্পণের পিস্তলটি গ্রহণ করেন যৌথ কমান্ডের পক্ষে মিত্র বাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল অরোরা।
এর মধ্য দিয়ে নিয়াজীর পিস্তলটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিজয় স্মারকে পরিণত হয়। আত্মসমর্পণের মুহূর্তে নিয়াজী মুক্তিবাহিনীর ভয়ে সন্ত্রস্ত ছিলেন।
মূলত ১৬ ডিসেম্বরের আগেই বাংলাদেশের বেশির ভাগ অঞ্চল মুক্ত হয়ে যায়। ঢাকা ছিল মুক্তিবাহিনী ও লাখ লাখ মুক্তিকামী জনতার দ্বারা অবরুদ্ধ। নিয়াজীর আত্মসমর্পণের বিষয়টি ছিল তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। জেনারেল অরোরা ভারত থেকে এসে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছিলেন।
যদিও মুক্তিবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওসমানী আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি। কারণ তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি সিলেটে আক্রান্ত হবার পর তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। এ কারণে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান উইং কমান্ডার একে খন্দকার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ্যাকব ছিলেন ঢাকার রেসকোর্সে আত্মসমর্পণের মূল পরিকল্পনাকারী। নিয়াজীর আত্মসমর্পণের পিস্তলটি তার হাত ধরেই ভারতে চলে যায়। তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের এক গণমাধ্যমকে, দেরাদুনে অবস্থিত ভারতীয় সামরিক একাডেমিতে পিস্তলটি রয়েছে।
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর উত্তাল সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী বিজয়ের স্মারক এই পিস্তলটি কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় ভারতের দেরাদুনে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি তা এখনও জানা যায়নি।
সেই অস্ত্রটি নিয়াজীর ছিল না
আত্মসমর্পণের কয়েক দিন পর নিয়াজীর সমর্পণ করা রিভলবারটি পরীক্ষা করেন জ্যাকব। তখন বুঝতে পারেন, অস্ত্রটি নিয়াজীর নয়। এটা একটা সাধারণ আর্মি ইস্যু পয়েন্ট থ্রি এইট রিভলবার। ময়লা দিয়ে এর ব্যারেল বন্ধ হয়ে আছে এবং মনে হয়, বেশ কিছুদিন এটা পরিষ্কারও করা হয়নি। ল্যানিয়ার্ডটিও নোংরা, ঘর্ষণের ফলে কয়েকটি জায়গা ছিঁড়ে গেছে।
জ্যাকব তার লেখা এক বইয়ে লিখেন, ‘কোনো কমান্ডিং জেনারেলের ব্যক্তিগত অস্ত্র হতে পারে না। বরং মনে হয়, নিয়াজী এটা তার কোনও মিলিটারি পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে তার ব্যক্তিগত অস্ত্র হিসেবে সমর্পণ করেছেন।’
তিনি লিখেন, ‘আমার মনে হলো, নিয়াজীর ভাগ্যে যা ঘটেছে, সেটা তার প্রাপ্য ছিল।