নিজস্ব প্রতিবেদক
সিরাজগঞ্জের মৎস্য ভান্ডারখ্যাত চলনবিলের তাড়াশ ও উল্লাপাড়া প্লাবন ভূমিতে চলতি শুঁটকি মৌসুমে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। এবার বর্ষায় চলনবিলে ছিলনা উথাল-পাতাল ঢেউ। পানির অভাবে প্লাবনভূমি, নদ-নদী ও বিলে মাছের বংশ বিস্তার ব্যহত হয়েছে। এতে অধিকাংশ নদী-বিল-খাড়িতে মাছের উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। চলনবিলে দেশি প্রজাতির মাছ ধরা ও শুকানোর এই মৌসুমে অধিকাংশ শুটকি চাতাল মাছের অভাবে খালি পড়ে আছে। ফলে এবছর শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
জানা যায়, চলনবিলের মিঠা পানির মাছ দিয়ে উৎপাদিত শুঁটকি ভাল মানের হওয়ায় এর সুনাম দেশের পাশাপাশি বিদেশেও রয়েছে। তাই বর্ষা মৌসুম শুঁটকি উৎপাদনকে ঘিরে চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাঁড়াশ ও উল্লাপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠে শুঁটকির চাতাল। বিভিন্ন মৎস্য আড়ত ও জেলেদের কাছ থেকে নানা প্রজাতির মাছ কমমূল্যে কিনে চাতালে তৈরি করা হয় শুঁটকি। কিন্তু বিগত বছরের চেয়ে এবছর চলনবিলে মাছের উৎপাদন কম হওয়ায় শুঁটকি উৎপাদনও কমে গেছে।
এদিকে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুুয়ারি, সুতি ও কারেন্টেজালে মা মাছ নিধনসহ অপরিকল্পিত পুকুর খনন করায় চলনবিলে মাছ কমে গেছে। এ কারণে চরা দামে মাছ কিনে শুঁটকি উৎপাদন করতে গিয়ে লোকসানে পড়ে অনেক চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে একদিকে শুঁটকির পরিমাণ কমে গেছে। অন্যদিকে, শুঁটকির সাথে জড়িতরাও বেকার হয়ে পড়ছে।তবে মৎস্য বিভাগ মাছের উৎপাদন কম হচ্ছে স্বীকার করে বলেছে, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে চলনবিলে অবৈধ জাল দিয়ে শিকার বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
শুঁটকির চাতাল ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর জানান, সিরাজগঞ্জের চলনবিলের মিঠা পানির পুঁটি, খলিসা, চান্দা, মলা, ট্যাংরা, শোল ও বোয়াল মাছসহ বিভিন্ন প্রকারের শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। ২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় কেজি দরে শুঁটকি বিক্রয় করা হয়। শুঁটকিগুলো প্রথমে সৈয়দপুরে আড়তে দেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ দেশের বাইরেও বিক্রি হয়ে থাকে।
শুঁটকির ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম ও দেলবার হোসেন জানান, চলনবিলের মহিষলুটি মৎস্য আড়ত ঘিরে আশপাশে ২৫টি শুঁটকির চাতাল ছিল। কিন্তু এবছর মাত্র ৫টি চাতালে শুঁটকি প্রস্তুত করা হচ্ছে। মাছের অভাবে ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেছেন প্রায় ২০ জন ব্যবসায়ী। তারা জানান, প্রতিদিন একটি শুঁটকির চাতালে ৩০০ মণ মাছের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাজার ও মৎস্য আড়ত ঘুরে ৩০-৫০ মণের বেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে শুঁটকি উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।শুঁটকি উৎপাদনের সাথে জড়িত শ্রমিক আমেনা খাতুন, কমেলা খাতুন, জোসনা পারভিন, চম্পা পারভীন ও সাজেদা বেগম জানান, বর্ষা মৌসুমে শুঁটকির চাতালের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। এ বছর মাছের অভাবে অনেকের কর্মহীন দিন কাটছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান জানান, চলনবিলের মিঠা পানির মাছ দিয়ে উৎপাদিত শুঁটকি ভালো মানের হওয়ায় দেশ ও বিদেশে শুঁটকির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। চলতি বছর ২৫০ শত মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে নানা কারণে মাছের উৎপাদন কমেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে চলনবিলে অবৈধ জাল দিয়ে মা মাছ শিকার বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আগামী বছর থেকে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা এর সুফল পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।
আরো পড়ুন, দৈনিক তালাশ টাইমস্ এ