মোঃ জাকির হোসেন স্টাফ রিপোর্টার
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রক্তাক্ত করেছে বিএসএফ।
সীমান্তে হিন্দু-মুসলমান নয়, বাংলাদেশি হিসেবেই গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়। ফেলানীর মতো সম্প্রতি কিশোরী স্বর্ণা রানী দাস ও ঠাকুরগাঁওয়ে এক কিশোরকে বিএসএফ নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। ভারত যেন বাংলাদেশিদের তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। রিজভী বলেন, এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনে হিন্দু-মুসলমান রয়েছেন। বিভিন্ন সময় দু’পক্ষে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়।
অনেকে আহত হন। অথচ, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আক্রান্ত হলে ভারতের সরকার বলে, এ দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ হচ্ছে, তাঁরা নিরাপত্তাহীন। রিজভী বলেন, ১৬-১৭ বছরে সীমান্তহত্যা নিয়ে শেখ হাসিনা নিশ্চুপ ছিলেন, কোনো প্রতিবাদ জানাননি। তিনি ছিলেন ভারতের প্রতি নতজানু। ভারতের দিকে মাথা সিজদা করে রাখতেন। দেশ স্বাধীনের পর থেকে শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া সবাই সীমান্তের শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছে। শেখ হাসিনা দেশের অখন্ডতা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব উঁচু করে রাখতে পারেননি। জোর করে ক্ষমতা দখল করে রাখতে চেয়েছিলেন। এ দেশের মানুষ তা ভুলবে না।
তিনি আজ রোববার (০৬ অক্টোবর) দুপুরে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার কালনীগড় গ্রামে সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত কিশোরী স্বর্ণা রানী দাসের স্বজনদের খোঁজখবর নিতে যান। এ সময় কালনীগড় বাজারে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, পতনের পরও আওয়ামী লীগ আরও আগ্রাসী, সহিংস হয়ে উঠেছে। গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা দিদারকে তারা পিটিয়ে মেরেছে।
রিজভী বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর গঠিত ইউনূস সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি হয়, এখনো সেটা আছে। তবে, সরকার যেন গা-ছাড়া ভাব নিয়ে দেশ চালাচ্ছে। সীমান্তহত্যায় জোরালো আওয়াজ কেনো হলো না, কেন সরকার নির্লিপ্ত থাকল-এ প্রশ্ন জনগণের মুখে মুখে। এ বিষয়ে অন্তবর্তী সরকার নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, নির্বাচন দিতে বিলম্ব হচ্ছে কেন? জনগণের সন্দেহ হচ্ছে। গণতান্ত্রিক চর্চা প্রসারিত করে দ্রুত নির্বাচন দেন।
রিজভী বলেন, কাতারে যে অ্যাম্বাসেডর (রাষ্ট্রদূত) বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট নবায়ন করতেন না তাঁকে পররাষ্ট্র সচিব করা হয়েছে। সরকারের ভেতরে স্বৈরাচারের এজেন্ট রয়েছে। তারা থাকলে এ সরকারকে সফল হতে দেবে না। এ সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের আত্মদান কলংকিত হবে। সরকারের ব্যর্থতার জন্য যদি গণহত্যাকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে-এটা সবার জন্য দুর্ভাগ্যের হবে। বক্তব্যের পর উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, নির্বাচন কখন হবে, সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের প্রশ্ন করুন।
নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের জন্য তিনি সরকারের কাছে আহ্বান জানান। দুপুর ১২টার দিকে সভা শুরু হয়। মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির উপদেষ্টা শরিফুল হক সাজুর সভাপতিত্বে ও বড়লেখা উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদিরের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু, আমরা বিএনপির উপদেষ্টা আলমগীর কবীর, আহ্বায়ক আতিকুর রহমান প্রমুখ। সভায় জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার বিএনপিসহ এর অঙ্গ এবং সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে রুহুল কবির রিজভী কিশোরী স্বর্ণা রানী দাসের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় তাঁদের আর্থিক সহযোগিতা করেন। স্বর্ণা রানী দাস (১৪) কালনীগড় গ্রামের বাসিন্দা পরেন্দ্র দাস ও সঞ্জিতা রানী দাস দম্পতির মেয়ে। ১ সেপ্টেম্বর সে মায়ের সঙ্গে চোরাইপথে পার্শ্ববর্তী কুলাউড়া উপজেলার লালারচক সীমান্ত দিয়ে ভারতে আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিল।
এ সময় বিএসএফ তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে স্বর্ণা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তার বুকে গুলি লাগে। সে জুড়ীর নিরোদ বিহারী উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। পরে বিএসএফ তার লাশ নিয়ে যায়। ৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ স্বজনদের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করে।
এই সাইটে নিজম্ব খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।