সেলিম চৌধুরী, জেলা প্রতিনিধি রংপুর
উত্তরের বিভাগীয় নগরী রংপুর থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্নস্থানে প্রায় ৩০০ বাস চলাচল বন্ধ পরিবহন মালিকদের দিনে ক্ষতি ১০ লাখ টাকা।বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির কারণে এখন মহাসড়কে বাস চলাচল একেবারই কম।দূরপাল্লার বাস না চললেও মাঝেমধ্যে সড়কে দেখা মিলছে আন্তঃজেলা রুটের কয়েকটি বাস।সেসব বাসে নেই আগের মতো যাত্রীর চাপ। সরকার বিরোধী জোটের টানা তিন দফায় চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে গতকাল বুধবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকে আজ (৯নভেম্বর) বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত রংপুর নগরীর বাস টার্মিনালসহ পার্কিং পয়েন্ট ও মহাসড়ক ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।সবমিলিয়ে সরকার বিরোধীদের ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে বাসে আগুন লাগার ঘটনায় তৈরি হয়েছে আতঙ্ক-ভীতি।যাত্রীরা দুর্ভোগ সহ্য করে ছোট ছোট বাহনে গন্তব্যে পৌঁছলেও সড়কে নামতে না পারায় ক্ষতির অংক বড় হচ্ছে পরিবহন মালিক-শ্রমকিদের।
পরিবহন মালিকদের দাবি, হরতার-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে রংপুরে দিনে ১০ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।যদি একের পর এক এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকে তাহলে ক্ষতির পরিমাণে পথে বসতে হবে মালিকদের।এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে সভা করে পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন যাতে নিরাপদে সড়কে চলাচল করতে পারে,সেজন্য সবধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) কিন্তু এরপরও বুধবার আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়কে দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে জরুরি সেবার আওতায় থাকা পরিবহনগুলোর পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ চলাচল করছে।সড়কে বেড়েছে রিকশা, অটোরিকশা, থ্রি-হুইলার মোটরসাইকেলের মতো হালকা যানবাহনের চাপ।বুধবার রংপুরের দমদমা সেতু পার হয়ে দেখা যায় অচেনা রূপে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক।বিরোধী দলের ডাকা তৃতীয় বারের সর্বাত্মক অবরোধের প্রথম দিনেও ফাঁকা এই ব্যস্তময় মহাসড়ক।আঞ্চলিক গণপরিবহন হাতেগোনা কয়েকটি চলাচল করলেও দূরপাল্লার বাস নেই বললেও চলে।
এদিকে নগরীর কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড, কেন্দ্রীয় সিটি বাস টার্মিনাল, কুড়িগ্রাম বাস টার্মিনালসহ নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে চোখে পড়ে যাত্রী সংকটে পরিবহন শ্রমিকদের অলস সময় কাটাতে।এদিকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পরিহার করে সরকার বিরোধী দলগুলোকে জনবান্ধন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।তারা বলছেন, হরতাল-অবরোধে শুধু পরিবহন সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না,পুরো দেশের অর্থনীতিও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সাধারণ মানুষের আয়-রোজগার কমে যাচ্ছে।নিত্যপণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। দিনে দিনে লোকসানের বোঝার সঙ্গে মানুষের ক্ষোভও বাড়ছে।
নগরীর মডার্ণ মোড়ে পরিবহন শ্রমিক রুবেলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, যেদিন হরতাল (২৯ অক্টোবর) দিছে সেদিন থেকে গাড়ি বন্ধ আছে।মাঝে দুই দিন গাড়ি চলাচল করলেও আবার অবরোধ দিয়েছে। এতে গাড়ি বন্ধ আছে।গাড়ি বন্ধ থাকলে তো আমাদের ইনকাম বন্ধ থাকবে।এমন চলতে থাকলে আমরা চলবো কি করে? পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। রাজনীতি করে বড় দুই দল আর কষ্টে থাকি আমরা সাধারণ মানুষ।
পরিবহন শ্রমিক সজিব বলেন, কামারপাড়া বা স্ট্যান্ডে যে গাড়িগুলো আসে, সেই গাড়িগুলো ধুয়ে দিয়ে প্রতিদিন যে টাকা পাই তা দিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে খাই।এখন তো কয়েক দিন থেকে বাস চলাচল বন্ধ আছে। এজন্য দিনে দিনে আমার চিন্তা বাড়ছে, সঙ্গে ঋণের বোঝাও ভারি হচ্ছে।এভাবে চলতে থাকলে আমরা গরিব মানুষ বাঁচব না।
রংপুর জেলা মটর মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি এ কে চৌধুরী ক্যাপ্টেন বলেন, রংপুর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে প্রতিদিন ১০০ বাস চলাচল করে।আর রংপুর বিভাগে আন্তঃপরিবহন চলাচল করে ১৮১টি।গেল দুই দফার অবরোধ কর্মসূচিতে যাত্রী সংকটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল।একই চিত্র এখনকার চলমান অবরোধেও। এতে করে পরিবহন মালিকরা আমরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।বাস চলাচল বন্ধ থাকাতে পরিবহন মালিকদের এখন দিনে প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে।সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে বিএনপির তৃতীয় দফায় দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।গতকাল বুধবার (৮ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়।যা চলবে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত।দলটির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা অন্য বিরোধী দলগুলোও এ কর্মসূচি পালন করছে। এর আগে গত ২৯ অক্টোবর সারাদেশে হরতাল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি-জামায়াত।এরপর প্রথম দফায় ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে সরকার বিরোধী দলগুলো।একদিনের বিরতি দিয়ে আবার দ্বিতীয় দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধে এখন তৃতীয় দফায় তাদের অবরোধ কর্মসূচি চলছে। যদিও অবরোধ কর্মসূচি থাকলেও মাঠে বিএনপিসহ তাদের আন্দোলনের শরিকদের দেখা যাচ্ছে না।