মোঃ সুজন আহমেদ বেনাপোল প্রতিনিধি
রাহুলের জাতীয় ফুটবল দলে ডাক পাওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। ছবি: এম এ রহিম রাহুলের জাতীয় ফুটবল দলে ডাক পাওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। ছবি: এম এ রহিম কঠিনকে সহজ করে এগিয়ে যেতে পারলেই আসে জয়।
অনেক বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে অদম্য মনোবল ও সাহস নিয়ে গড়েছেন ফুটবলের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন এবার ধরা পড়েছে। পেয়েছেন জাতীয় ফুটবল দলে ডাক। বলা হচ্ছে সীমান্তবর্তী বেনাপোলের ভবারবেড়ের রাব্বি হোসেন রাহুলের কথা। রাহুলের জাতীয় ফুটবল দলে ডাক পাওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। রাহুলের এই অর্জনে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন বেনাপোলের আরও ৭ জন খেলোয়াড়।
তাঁরাও খেলেছেন ঢাকায় বিভিন্ন লিগে। জাতীয় টিমে খেলার স্বপ্ন দেখছেন। ‘সুখবরটা শুনে যেতে পারলে বেশি খুশি হতেন বাবা’-দীঘর্শ্বাস ফেলে জানালেন রাব্বী হোসেন রাহুল। আনন্দ অশ্রু আর চাপা কণ্ঠে জানালেন বাবা লাল চানের কথা। ফুটবল খেলে জাতীয় দলে সুযোগ পাবো, সেই স্বপ্নই দেখতেন বাবা। গত বছর মারা গেছেন তাঁর বাবা। তাই হয়তো রাব্বির সাফল্যের আক্ষেপটা সারা জীবন থাকবে।
বেনাপোল নুর ইসলাম ফুটবল একাডেমি থেকে গড়ে ওঠা, বেড়ে ওঠা। বেনাপোলের রাব্বি ছাড়াও মেহেদী, রাকিব. কিশোর, নয়ন, রনি, হৃদয়ও বাবুসহ ৭ কৃতি ফুটবলার খেলছেন ঢাকার বিভিন্ন লিগে। তাদের মধ্যেই অন্যতম রাব্বি। তার সাফল্যে খুশি প্রতিবেশী স্বজনরাও। ঘরোয়া ফুটবলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে রাহুল এবার জাতীয় দলের স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার নজর কেড়েছেন।
২ মার্চ যাবেন দেশের বাইরে। আগামী ২১ ও ২৬ মার্চ ফিলিস্তিনের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের এই দুটি ম্যাচের জন্য উদীয়মান ফুটবলার রাব্বীকে প্রাথমিক দলে চেয়েছেন কোচ। শুধু তাই নয়, রাহুলকে নিয়ে যাবেন সৌদি আরবে হতে যাওয়া জাতীয় দলের কন্ডিশনিং ক্যাম্পে।
তার এই প্রাপ্তিতে বেনাপোল নুর ইসলাম ফুটবল একাডেমির ক্যাপ্টেন তারেক আজিজ রনি ও নরুল ইসলাম নয়ন-ঢাকা ব্রাদার্স ইউনিয়নের খেলোয়ার-রাব্বি সহপাঠীরা আজ উজ্জীবিত। রাহুলের ফুটবলার হওয়ার গল্প যেন সিনেমার কাহিনিকেও হার মানাবে। বেনাপোল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামের ভবারবেড়ে জন্ম রাহুলের। গ্রামটি মাদক, চোরাচালান আর সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত।
সেই গ্রাম থেকে উঠে এসে রাহুল এবারের প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে। প্রিমিয়ার লিগে অসাধারণ ফুটবল উপহার দিয়েছেন রাহুল। রাহুলের উত্থান ২০২২ সালের জাতীয় স্কুল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে। বেনাপোলের সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের বাবার নামে গড়া এই একাডেমির ফুটবলাররাই সেবার খেলেন জাতীয় স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপে।
টুর্নামেন্টে রাহুল খেলেন বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জার্সিতে। ওই টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দেওয়ায় তৃতীয় বিভাগ ফুটবলের দল বিক্রমপুর কিংসে সুযোগ পান। লিগে ফ্রি কিকে দর্শনীয় একটা গোল করেন দিপালী যুব সংঘের বিপক্ষে। ওই গোলটি নজরে আসে বসুন্ধরা কিংসের একাডেমির কোচদের। এরপরই তারা নিয়ে নেন বসুন্ধরা কিংস একাডেমিতে। এরপর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে ওয়ারী ক্লাবের হয়ে খেলে জায়গা করে নেন জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। খেলেছেন সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে।
বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে চুক্তি থাকায় প্রিমিয়ার লিগে রাহুলের ধারে অভিষেক হয়েছে ব্রাদার্সের জার্সিতে। স্বপ্নে বিভোর রাব্বি-ভাল মানের ফুটবল খেলা উপহার দিতে চান। তবে পরিবারসহ যাদের সহযোগিতা পেয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রাহুল।
ছেলের এই অর্জনে খুশি রাহুলের মা রোকেয়া বেগম। তবে তাঁর পিতা বেঁচে থাকলে আরো খুশি হতেন-এমনি আক্ষেপ রাহুলের মায়ের। সন্তানের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান তিনি। রাহুলের খ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বে। ফুটবলে আসুক গৌরবময় অর্জন এমনটাই আশা এলাকাবাসীর।