প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম
আমার একটা বিষয় জানার ছিলো।।কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হয়? আর নিসাব পরিমান টাকা থাকার পর ও কেউ যদি যাকাত না দেয়।তাহলে তার শাস্তি কি?
باسم الله الرحمن الرحيم
উত্তর: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারা কাতুহু৷ আপনি প্রশ্ন করেছেন দুটি যার উত্তর দ্বারাবাহিকভাবে দেওয়া হচ্ছে।
১. যদি কারো কাছে স্বর্ণের ক্ষেত্রে বিশ মিসকাল তথা আধুনিক হিসাবে সাড়ে সাত ভরি এবং রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হল দু’শ দিরহাম।
আধুনিক হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা। এ পরিমাণ সোনা-রুপা থাকলে যাকাত দিতে হবে।প্রয়োজনের উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা বাণিজ্য-দ্রব্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে ৷ মোট কথা: প্রাপ্ত বয়স্ক ও বোধশক্তিসম্পন্ন কোন মুসলমান ব্যক্তির মালিকানাস্বত্বে যদি মৌলিক প্রয়োজনাদি ও ঋণ ব্যতিরেকে ৭.৫০ তোলা (৮৭.৪৮গ্রাম ) স্বর্ণ কিংবা নগদ ক্যাশ,ব্যবসাপন্য ও স্বর্ণ – রুপা প্রভৃতির সমষ্টি মূল্য ৫২.৫০ বা ৬১২.১৫ গ্রাম রুপার মূল্য ৷ তো আমরা এভাবে হিসেব বের করতে পারি: আমরা জানি ১ তোলা =১ ভরি ৷তো যদি ১ভড়ি স্বর্ণের দাম হয় ৭০০০০ টাকা তাহলে ৭.৫০ ভরির দাম হবে ৭০০০০✘ ৭.৫০ =525,000 টাকা৷ আর যদি রুপা বা স্বর্ণ অথা সব কিছু মিলে হয় ৫২.৫০ তোলা বা ভড়ি তা হলে সে হিসেবে হবে যদি ১ভরি রুপার দাম হয় ১০০০ টাকা হালে ৫২.৫০✘ ১০০০ = ৫২,৫০০টাকা ৷ মোট কথা এভাবে বর্তমান বাজার দর হিসেবে বের করতে হবে।
দলিলসমূহ:
সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৯, সুনানে আবু দাউদ ১/২২১,মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৭৯৭,৬৮৫১,রদ্দুল মুহতার ২/৩০৩, -আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৩
২. নিসাব পরিমান টাকা থাকার পর ও কেউ যদি যাকাত না দেয়।তাহলে তার শাস্তি হলো: ইসলাম যাকাত একটি ফরজ ইবাদত যদি কেউ ইচ্ছাকৃত ফরজ ত্যাগকরে তাহলে তার শাস্তি খুবই ভয়াবহ হবে। পবিত্র কুরআন মাজিদ ও হাদীসে পাকে বিভিন্ন শাস্তির কথা উল্লেখ হয়েছে, কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
وَ لَا یَحْسَبَنَّ الَّذِیْنَ یَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتٰىهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَیْرًا لَّهُمْ ؕ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ ؕ سَیُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ ؕ وَ لِلّٰهِ مِیْرَاثُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِیْرٌ۠۱۸۰
আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদেরকে দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তারা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, এটা তাদের জন্য মঙ্গল। না, এটা তাদের জন্য অমঙ্গল। যে সম্পদে তারা কৃপণতা করেছে কিয়ামতের দিন তা-ই তাদের গলায় বেড়ি হবে। আসমান ও যমীনের স্বত্ত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। তোমরা যা কর আল্লাহ তা বিশেষভাবে অবগত। -সূরা আলইমরান : ১৮০
এভাবে হাদীসে উল্লেখ হয়েছে—
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا هَاشِمُ بْنُ الْقَاسِمِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ السَّمَّانِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالاً، فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ، لَهُ زَبِيبَتَانِ، يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ ـ يَعْنِي شِدْقَيْهِ ـ ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ، أَنَا كَنْزُكَ ” ثُمَّ تَلاَ (لاَ يَحْسِبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ) الآيَةَ.
আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) … আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে (বিষের তীব্রতার কারণে) টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’পার্শ্ব কমড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তিলাওয়াত করেনঃ “আল্লাহ যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন অথছ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং উহা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরে কিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃংখলাবদ্ধ করা হবে।” সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ১৩২১)
আসাকরি কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন।
و الله أعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে:
আবুল কালাম বিন আব্দুল মালেক
মুহাদ্দিস: দারুল উলূম মহিলা মাদরাসা রায়পুরা নরসিংদী ৷