ঢাকাশনিবার , ৬ এপ্রিল ২০২৪
  1. অন্যান্য
  2. অভিযোগ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন বিচার
  5. আওয়ামী লীগ
  6. আগুন
  7. আটক
  8. আন্তর্জাতিক
  9. আবহাওয়া
  10. আমাদের পরিবার
  11. আরো
  12. ইতিহাস ও ঐতিহাসিক
  13. ইসলাম
  14. ইসলামী জীবন
  15. এশিয়া
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিলুপ্তির পথে ভেষজ গুণের শ্বেতদ্রোণ

50
admin
এপ্রিল ৬, ২০২৪ ২:১৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষের যুগে দিন দিন ভাটা পড়ছে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা ইউনানি চিকিৎসা ব্যবস্থায়। যার ফলে আমাদের চারপাশের প্রকৃতিতে জন্মানো বহু ভেষজ উদ্ভিদ অবহেলায় জর্জরিত হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি থেকে।

এরই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় হারিয়ে যাচ্ছে অন্যান্য ভেষজ উদ্ভিদের মতো ভেষজ গুণে ভরা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ শ্বেতদ্রোণ।

স্থানীয় প্রবীণরা বলছেন, একসময় এই উপজেলার বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার পাশে, ঝোপঝাড়ে ও জলাশয়ের পাড়ে এবং বিভিন্ন আগাছার সাথে বিনাচাষে জন্মাতে দেখা যেত ঔষধি এই উদ্ভিদটি। তবে সময়ের বিবর্তনে এই অঞ্চলের পরিবেশে এই উদ্ভিদটি এখন খুব একটা দেখা যায় না।

জানা গেছে, শ্বেতদ্রোণ বা ধুলকি লিউকাস গণের লামিয়াসি পরিবারের একটি প্রজাতি। এটি একটি বহুবর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ। অঞ্চল ভেদে এর নামের ভিন্নতা রয়েছে, এটাকে দণ্ডকলসও বলা হয়। তবে এই উপজেলার মানুষের কাছে এটি দলগোরস নামেই পরিচিত। এটি খুব বেশি বড় হয় না। গড় উচ্চতা ১ থেকে দেড় বা ২ ফুট হয়।

তাই এরা ঘন ঝোপঝাড় তৈরি করতে পারে না। এটি শক্তও নয় আবার একেবারে নরমও নয়। এর পাতা ও শাখাপ্রশাখা মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এই উদ্ভিদটিতে থাকা গ্লুকোসাইড, ট্যানিল, স্যাপোনিল স্টেরোলসসহ বিভিন্ন ধরনের ফ্যাটি এসিড থাকায় ভেষজ ঔষধ হিসেবে এটি প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই উদ্ভিদটির শাখায় এলোফাটিক কেলোস বেটারোল রয়েছে। এটি মানবদেহের জন্য একটি উপকারী উদ্ভিদ।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্বেতদ্রোণ ঔষধি উদ্ভিদটি বহুকাল আগে থেকেই এই জনপদের মানুষের নানা রোগে ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উদ্ভিদটির কঁচি পাতা একসময় শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া হতো। এটির পাতা ও কাণ্ড মানবদেহের নানা রোগে ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এলোপ্যাথি চিকিৎসা সহজলভ্য হওয়ায় এই ভেষজ উদ্ভিদটির কদর অনেকটাই কমে গেছে। এ যুগের আধুনিক প্রজন্ম বিজ্ঞানের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে পিছিয়ে পড়ছে প্রকৃতির দান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত ভেষজ উদ্ভিদ থেকে। যার ফলে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শ্বেতদ্রোণের মতো ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ বহু ভেষজ উদ্ভিদ, লতা ও গাছ।

ইউনানি চিকিৎসক, স্থানীয় কবিরাজ ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, শ্বেতদ্রোণ একটি অতিমূল্যবান ভেষজ উদ্ভিদ। এটি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি মানবদেহের নানা রোগ নিয়াময়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এটির সবুজ পাতা ও শেকড়ের রস আদাসহ গরম পানি দিয়ে নিয়মানুযায়ী সেবন করলে জ্বর, সর্দি ও তীব্র কাশির মতো সমস্যা দ্রুত সেরে যায়। মানবদেহের কৃমির বিড়ম্বনা এড়াতে এ উদ্ভিদের পাতার রস খুবই কার্যকরী। দীর্ঘ মেয়াদী সর্দির রোগী এই উদ্ভিদের ফুলকে রস করে খেলে উপশম পাওয়া যায়। বুকের দুধ খায় এমন শিশুদের ক্ষেত্রে উদ্ভিদটির সাদাফুল কচলিয়ে মায়ের দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে শিশুর সর্দি-কাশি সেরে যায়। সরিষার তেল, রসুন ও এই উদ্ভিদটির পাতা গরম করে বুকে মালিশ করলে সর্দি-কাশি কমে ও শ্বাস কষ্টে উপশম মেলে। এছাড়াও চুলকানি সারাতেও শ্বেতদ্রোণ উদ্ভিদটির ভূমিকা রয়েছে। এর পাতার রস ও কাঁচাহলুদের রস নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে সারা শরীরে মেখে রোদে শুকিয়ে গোসল করলে এর থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়। পেটফাঁপা ও বদহজমে এই পাতার রস সেবন করলে উপশম মেলে। বাতের ব্যথায় শ্বেতদ্রোণের ব্যবহার অপরিহার্য।

এটি বিষাক্ত পোকামাকড় ও বিছার কামড়ের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত। মেয়েদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত কমাতে এই উদ্ভিদটির জুড়ি নেই। এছাড়া এই উদ্ভিদটি অ্যাজমার তীব্রতা ও সাইনাসের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। শিশুদের পাতলা পায়খানা হলে এটির পাতার রস খাঁটি মধুর সাথে মিশিয়ে কয়েকদিন সেবন করালে রোগ সেরে যায়। হাত বা পায়ের কোনো অংশ মচকে গেলে এই উদ্ভিদটির কয়েকটি পাতা নিয়ে এর সাথে কয়েক ফোঁটা কেরোসিন তেল ও আধা চিমটি লবণ নিয়ে কচলিয়ে মচকানো অংশে মালিশ করলে উপশম পাওয়া যায়। আঙুলের ফাঁকের খোসপাঁচড়া সারাতে এর পাতা বেটে পেস্ট করে লাগালে প্রতিকার মেলে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মালেক (৭৭) কালবেলাকে বলেন, দলগোরস (শ্বেতদ্রোণ) একসময় এই এলাকায় প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত। খালের পাড়ে, রাস্তার পাশে, আগাছা গজানোর স্থানে ও বাড়ির আশপাশে এমনি এমনিই জন্মাতো। সেসময় এই গাছ দিয়ে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যেত।এখন মানুষ অসুখ-বিসুখে আধুনিক চিকিৎসার প্রতি ঝুঁকে গেছে। যে কারণে দিন দিন এই অঞ্চলের পরিবেশ থেকে এই উদ্ভিদটি কমতে শুরু করেছে। এখন তো দলগোরস (শ্বেতদ্রোণ) উদ্ভিদটি তেমন একটা চোখে পড়ে না।

স্থানীয় কবিরাজ হরিপদ আচার্য কালবেলাকে বলেন, শ্বেতদ্রোণ একটি অতিমূল্যবান ভেষজ উদ্ভিদ। এটি ব্যবহার করে অনেক রোগীর রোগ নিরাময় করেছে আমার বাপ দাদারা। আমিও এটির পাতা, মূল ও ফুল দিয়ে ঔষধ তৈরি করে মানুষের অসুস্থতায় চিকিৎসা দিয়ে আসছি গত ৪৫ বছর ধরে। তবে দিন দিনই এই ঔষধি উদ্ভিদটি পরিবেশ থেকে কমে যাচ্ছে। আগের মতো এখন আর তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (ইউনানি) সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, একটা সময় ছিল মানুষ অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হলে গাছগাছালির মাধ্যমে তৈরি করা ভেষজ ঔষধ ব্যবহার করতো। এলোপ্যাথি চিকিৎসার অভূতপূর্ব প্রসারের কারণে ইউনানি চিকিৎসা থেকে মানুষ এলোপ্যাথি চিকিৎসার প্রতি বেশি ঝুঁকছে। যার ফলে প্রকৃতি থেকে দিন দিন ভেষজ গাছের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, শ্বেতদ্রোণ ভেষজ উদ্ভিদগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ উদ্ভিদ। মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে আদিকাল থেকে বহুল ব্যবহৃত উদ্ভিদ এটি। কয়েক যুগ আগেও এই উদ্ভিদটি যে হারে দেখা যেত এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না। যার যার অবস্থানে থেকে আমাদের সকলের দায়িত্ব হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ও ঔষধি উদ্ভিদ বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে তৎপর হওয়া। কেননা সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি প্রতিটি উদ্ভিদ, গাছ ও লতা কোনো না কোনো গুরুত্ব বহন করছে, যা মানুষের কল্যাণের জন্যই।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন কালবেলাকে বলেন, সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত গাছগাছালিতে রয়েছে বিস্ময়কর নানা ঔষধিগুণ। এলোপ্যাথি চিকিৎসা প্রসারের আগে সেই আদিকাল থেকেই মানবদেহের নানা রোগে গাছগাছালি দিয়েই চিকিৎসা দেওয়া হতো।

আর মানুষ রোগ থেকে আরোগ্য লাভও করতো। সময়ের প্রয়োজনে চিকিৎসা ব্যবস্থায় এসেছে পরিবর্তন। তাই বলে গাছগাছালির মাধ্যমে দেওয়া চিকিৎসা ব্যবস্থাকে অবহেলা করলে চলবে না। প্রধানমন্ত্রীও ভেষজ চিকিৎসার প্রসারে কাজ করে যাচ্ছেন।

 

এই সাইটে নিজম্ব খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।