নিজস্ব প্রতিবেদক
গোপালগঞ্জে বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে জেলা ও মহানগরীতে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো এক বার্তায় বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার বলেন, শুক্রবার বিকালে গোপালগঞ্জে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী সহ নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে শনিবার দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।
এর আগে গোপালগঞ্জে বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শওকত হোসেন দিদার (৩৮) নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী এবং বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমসহ অন্তত ৩০ জন। গুরুতর আহতদেরকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের বেদগ্রাম এলাকায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকউজ্জামানের সভাপতিত্বে পথসভা শেষ করে কেন্দ্রীয় নেতারা গাড়িবহর নিয়ে টুঙ্গীপাড়ায় এক জনসভার উদ্দেশে রওনা হন।
পথে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঘোনাপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে একদল জনতা তাদেরকে বাধা দেয়। পরে গাড়ি থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নেমে বাধাদানকারীদেরকে ধাওয়া দেয়। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টাধাওয়া। এ সময় প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতাদের গাড়িবহরে হামলা করে এবং অন্তত ১৫টি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে।
এ সময় এস এম জিলানী, তার স্ত্রী রওশন আর রন্তা ও সেলিমুজ্জামান সেলিমসহ কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় নেতাসহ অন্তত ৩০ জন গুরুতর আহত হন। আহত হন সময় টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান এইচ এম মানিক। একপর্যায়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি। টানা ঝড়বৃষ্টিতে একপর্যায়ে সংঘর্ষ থেমে যায়। পরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দোলা পেট্রোল-পাম্প এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শওকত হোসেন দিদারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও দেশে এখনও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে পরাজিত শক্তির দোসররা। তারা গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। অবৈধ আওয়ামী শাসনামলে এই সন্ত্রাসীরা অনেক কালো টাকা উপার্জন করেছে, সেই কালো টাকা তারা এখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কাজে লাগাচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীরা ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিজয়কে মেনে নিতে পারছে না বলেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর জন্যই বিএনপি এবং অন্যান্য সমমনা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ জনগণের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে খুন ও তাদেরকে গুরুতর জখম করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা এস এম জিলানীর গাড়িবহরে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. শওকত আলী দিদারকে খুন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীসহ অনেক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করার ঘটনা একটি গভীর দেশি-বিদেশি চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ। এসব সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমন করার কোনো বিকল্প নেই। হামলা ও রক্তাক্ত পথ অনুসরণ করে ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে ফায়দা হাসিল করতে না পারে সেজন্য ছাত্র-জনতাসহ সকল গণতন্ত্রমনা মানুষকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে এখনও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে হবে। আর তাহলেই দেশ থেকে ষড়যন্ত্রকারী ও দুষ্কৃতকারীদের মূলোৎপাটনসহ দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা, প্রকৃত গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে এস এম জিলানীর গাড়িবহরে পৈশাচিক হামলা চালিয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. শওকত আলী দিদারকে খুন এবং এস এম জিলানী ও তার সহধর্মিণীসহ নেতৃবৃন্দের ওপর হামলাকারী দুষ্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহ্বান জানান। তিনি নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জ্ঞাপন এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।