‘ভাতের বদলে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান’- কথাটি নিশ্চয়ই মনে আছে আপনাদের?থাকারই কথা! বেশি দিন আগের কথা নয়, এই তো ২০০৮ সালে চালের বাজারে দামের ধাক্কা সামাল দিতে তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রীরা তাদের বক্তব্যে এই বাক্য উচ্চারণ করতেন।
তখন জনসাধারণ আলুতে বেশ ঝুঁকে ছিলেন। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টেছে, দামের চোটে এখন আলু থেকে মুখ ফেরাতে হচ্ছে অনেকের। সারাদেশের ন্যায় দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার বিভিন্ন সবজি খুচরা বাজারে আলুর দাম মাঝারি, মোটা ও ভাল মানের চালের দরকেও ছাড়িয়ে গেছে। ‘বেশি করে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান’–এক সময় দেওয়া এমন স্লোগানের বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে ‘আলুর ওপর চাপ কমান, বেশি করে ভাত খান’।
রোববার (১৭ নভেম্বর) উপজেলার বিভিন্ন সবজি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ৭০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় এই দর ঠেকেছে ৫ টাকা বেশিতে। যা গত কয়েক সপ্তাহে আগেও প্রকারভেদে ৪৫-৫৫ টাকার মধ্যেই ছিল। এছাড়াও সবজি বাজারে নেই স্বস্তি, ক্রেতাদের উঠেছে নাভিশ্বাস। সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা, মূলা ৩০, পিয়াজ ১৪০, মিষ্টি কুমড়া ৫০, পটল ৪০, শিম ৬৫ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, বেগুন, ফুলকপি কেজি থেকে ৫০ টাকা, পেঁপের কেজি ২৫, শসা ৫০, প্রতিটি লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় ও পুঁইশাক আটি প্রতি ৩০-৪০ টাকা। ক্রেতারা বলছেন, দেশের শক্তিশালী সিন্ডিকেট থেকে এখনো বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। একটি মহল এখনো তাদের আধিপত্য বিস্তার করছে।
সাধারণ মানুষরা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ে বেশ হতভাগ। বাজার মূল্যে কেজি প্রতি চালের চেয়ে এখন আলুর দাম বেশি। তাই গরিবের পাতে সচরাচর উঠছে না আলু। প্রশ্ন উঠতে পারে মানুষ এখন কোনটা খাবে? কিংবা আলুর বদলে খাবে কী? পাকেরহাট বাজারে সবজি ক্রেতা জয়নুল ইসলাম জানান, তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালান। বাজারের যে অবস্থা, তাতে শীত যে চলে আসছে, বোঝারই উপায় নেই।
এখনো বাজারে শীতের সবজি নেই। উপরন্তু আলুর দাম আরও বেড়েছে। খানসামা বাজারে সবজি কিনতে আসেন হাচানুর রহমান। তিনি কামলা দিয়ে সংসার চালান। তিনি বলেন, আগে ঘরে তরিতরকারি না থাকলে অন্তত আলুভর্তা করে ভাত খাওয়া যেত। এখন সে উপায়ও নেই। আলুর দামই অনেক বেশি।
এছাড়া অন্য সবজির দাম তো আছেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর আলুর যে সংকট সেটা সবাই জানে, তাই দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা বলাও সম্ভব না। অপরদিকে বর্তমানে দেশের বাজারে ৫৫ টাকা থেকে ৬৫ টাকা দরে বিভিন্ন মানের চাল পাওয়া যাচ্ছে। খানসামা বাজারের বিক্রেতা শাহীন বলেন, ‘আলুর দাম নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই।
আমরা প্রতিটি সবজিতে প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা লাভ করি। এখন যেমন লাভ করছি কিছু দিন আগে যখন দাম কম ছিল তখনো একই হারে লাভ করে বিক্রি করেছি। কিন্তু পাইকারি বাজারে প্রতিটি সবজির দাম বেশি হয়েছে। এ জন্য আমাদের কেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’ ছবির ক্যাপশন: কাঁচা বাজার ঘুরে বিভিন্ন সবজি কিনছেন ক্রেতারা। ছবিটি দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাটের সবজি বাজার থেকে তোলা।