মোঃ জহিরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার
বরিশালের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এস এম ইকবাল (৭৯) মারা গেছেন ( ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অসুস্থতা বেড়ে গেলে স্বজনেরা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। বুধবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।আজ বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর ২০২৩ ইং) তারিখ বেলা ১১ টার সময় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে তার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে দুপুর ১২ টায় বরিশাল শহীদ মিনারে গার্ড অফ অনার দেয়া হয়। মরহুমের জানাজা নামাজ যোহরের নামাজের পর শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়, পরে তাকে মুসলিম গোরস্থানে দাফন করা হয়। এস এম ইকবাল ১৯৪৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার লবনসাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম সৈয়দ শামসুল হুদা এবং মায়ের নাম ফরিদা বেগম।
তিনি বরিশালের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ সাংবাদিক, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কমিশনার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি, বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরির সাবেক সভাপতি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী অন্যতম নেতা ছিলেন। তিনি দৈনিক বিপ্লবী বাংলাদেশের উপদেষ্টা ছিলেন, দৈনিক আজকের বার্তার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বরিশালের আজকাল পত্রিকায় সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকার সম্পাদক পদে ছিলেন। তিনি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের আঁটবার সভাপতি ও পাঁচবার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
বর্ণাঢ্য জীবনে জনপ্রতিনিধির দায়িত্বও পালন করেন এস এম ইকবাল। ১৯৮৫ সালে বানারীপাড়া উপজেলার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বানারীপাড়া উপজেলায় বাইশারীতে একটি স্কুল ও একটি কলেজ নির্মাণ করেন। এস এম ইকবাল অমর একুশের গান হিসেবে খ্যাত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’-এর সুরকার সংস্কৃতিকর্মী ও স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের নামে ১৯৭২ সালে বরিশালে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া ২৮টি সংগঠনের জোট বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের দুইবার সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।
বরিশালে এস এম ইকবাল গড়ে তোলেন সামাজিক সংগঠন বরিশাল যুব সংঘ। নাটক রচনা-মঞ্চায়ন, আবৃত্তি, খেলাধুলাসহ সব সামাজিক ক্ষেত্রে কাজ করত এ যুব সংঘ। সাংবাদিকতা ও সমাজসেবার পাশাপাশি লেখালেখিও করতেন তিনি। জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন, সুরঞ্জনা, সাতটি তারার তিমির, সুকান্তের ‘ঘুম নেই’ ইত্যাদি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন তিনি। এ ছাড়া ছোটদের নজরুল, ছোটদের রবীন্দ্রনাথ, ছোটদের শরৎ চন্দ্র’সহ প্রায় অর্ধশত বই লিখেছেন ইকবাল।
গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন, ব্রজমোহন কলেজে পড়ার সময় এস এম ইকবাল শক্তিমান চলচ্চিত্রনির্মাতা সাদেক খানের চলচ্চিত্র নির্মাণ সংস্থা লুব্ধক ফিল্মে যোগ দেন। কারওয়া, নদী ও নারী’, ‘আকাশের রং নীল, ক্যায়সে কাহু, নামক চলচ্চিত্রে কাজ করেন সহকারী প্রোডাকশন কন্ট্রোলার হিসেবে। এফডিসির সেই সময়ের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র সম্পাদক আবদুর রহমানের সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।প্রারম্ভিক শিক্ষাজীবনে তৃতীয় শ্রেণিতে বরিশাল জিলা স্কুলে ভর্তি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৬৪ সালে বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন এস এম ইকবাল। অন্যদিকে তার মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে বরিশালের সাংবাদিক মহল ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।