ঢাকাশনিবার , ২০ এপ্রিল ২০২৪
  1. অন্যান্য
  2. অভিযোগ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন বিচার
  5. আওয়ামী লীগ
  6. আগুন
  7. আটক
  8. আন্তর্জাতিক
  9. আবহাওয়া
  10. আমাদের পরিবার
  11. আরো
  12. ইতিহাস ও ঐতিহাসিক
  13. ইসলাম
  14. ইসলামী জীবন
  15. এশিয়া
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অর্থের অভাবে চিকিৎসা হলো না সুমনের

50
admin
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৩:৫৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আল মামুন বালিয়াডাঙ্গী প্রতিনিধি

অর্থের অভাবে চিকিৎসা হলো না সুমনের ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে টাকার অভাবে ছেলেকে চিকিৎসা করাতে না পেরে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এনে মৃত্যুর অপেক্ষা করছিলেন স্বজনরা। অপেক্ষার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর মারা গেছে কিশোর সুমন।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের জুগিহার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গতকাল শুক্রবার সকালে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তার বাবা।

মৃত সুমন (১৬) ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের জুগিহার গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, তিন মাস আগে কাজের সন্ধানে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় গিয়েছিল সুমনসহ ওই এলাকার ২৫-৩০ জন কিশোর। সেখানে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে চিওড়া সরকারি কলেজের ভবন নির্মাণের কাজ লেবার হিসেবে কাজ করছিল তারা।

রমজানের শেষ দিকে ঈদের জন্য বাড়িতে চলে আসে সবাই।

যাতায়াতের খরচ বাঁচাতে বাড়িতে আসেনি কিশোর সুমন ও তার প্রতিবেশী জিলানী। সেখানে ঈদের পরদিন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারধরের শিকার হয় সুমন। পর তাকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে কৌশলে অ্যাম্বুল্যান্সে করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী খোকন মিয়া।

সুমনকে রংপুরে নিয়ে আসে প্রতিবেশী জিলানী। রংপুরে পাঁচ দিন চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য সুমনকে স্থানীয় বিশেষায়িত একটি ক্লিনিকে রেফার করে হাপসাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে স্বজনরা টাকার অভাবে সেখানে চিকিৎসা না করিয়ে গতকাল শুক্রবার তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় বাড়িতে গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত সুমনের মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন তারা। শনিবার সকাল ১১টায় মারা যায় সুমন।

সুমনের বাবা নজরুল ইসলাম জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য আইসিউতে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকা খরচ হবে। এত টাকা কোথায় পাব। এ জন্য গতকাল ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে এসে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলাম।’ অ্যাম্বুল্যান্সে করে ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসার টাকা গ্রামবাসী চাঁদা তুলে দিয়েছে বলে জানান তিনি।

সুমনের বাবা আরো জানান, ঠিকাদার খোকন তাকে চিকিৎসা বাবদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এরপর আর খোঁজ নেননি। আজ সকালে মৃত্যুর খবর জানালে দাফনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সুমনের সাথে কাজ করতে যাওয়া কয়েকজন জানায়, একসাথে কাজ করছিলাম আমরা। ঈদে সবাই বাড়িতে ফিরলেও জিলানী ও সুমন ছিলই। পরে শুনলাম মারামারি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সুমনকে। কেন, কী কারণে মারামারি হলো, কেউ পরিষ্কার বলতে পারেনি। তবে সুমনের মৃত্যুর পর থেকে জিলানী গাঢাকা দিয়েছে বলে জানায় তারা।

সুমনের প্রতিবেশী শরিফ ও তার স্বজনরা জানায়, ২৫ হাজার টাকা প্রতিদিন খরচ করতে হবে, এটা শোনার পর তাকে নিয়ে তার বাবা বাড়িতে চলে এসেছেন। এ ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। আজ রাতে খাওয়ার জন্য যে চাল-ডাল লাগবে সেটার জন্য আমরা গ্রামবাসীর কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়েছি। অভাবে পড়ে সুমনের মৃত্যুর প্রহর গুনতে বাধ্য হয়েছে পরিবারটি।

পরিবারের কাছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নম্বর নিয়ে খোকনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক আকতারুজ্জামান মুঠোফোনে জানিয়েছেন, ওই ভবনের কাজ পেয়েছেন ফারুক আহমেদ মিয়াজী নামের এক ঠিকাদার। খোকন নামের কোনো ব্যক্তির অধীনে লেবারের কাজ করতে পারেন, তবে তিনি ঠিকাদার নন।

তার কাছ থেকে ঠিকাদার ফারুক আহমেদ মিয়াজীর মোবাইল নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘কাজ বন্ধ থাকা অবস্থায় ওই লেবার মারামারিতে আহত হলে আমরা এখানে চিকিৎসা করাই। পরে তার পরিবার রংপুরে উন্নত চিকিৎসা করাবে বলে আমাদেরকে সুমনকে সেখানে পাঠাতে বলে। আমরা অ্যাম্বুল্যান্সে জিলানীসহ সুমনকে রংপুরে পাঠিয়ে দিই। তবে সুমন মারা গেছে এ কথা এখনো তার পরিবার আমাদের জানায়নি।’ সুমনের পরিবারকে ৪০ হাজার টাকা চিকিৎসা বাবদ দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মিঠু জানান, খুবই অসহায় পরিবার সুমনদের। কোনোমতে খেয়ে-পরে বেঁচে আছে। চিকিৎসা করনোর মতো টাকা নেই বলেই ছেলেকে নিয়ে এসে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিল।

আমজানখোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আকালু (ডংগা) বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। ছেলেটির চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই তার বাবার। তাই বাধ্য হয়েছে এমন কাজ করতে। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় সন্ধ্যায় তাকে দাফন করা হবে।

বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি ফিরোজ কবির বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা আমাদের কেউ জানায়নি। তবে পরিবারে কেউ অভিযোগ করলে পুলিশ আইনি সহায়তা প্রদান করবে।’

এই সাইটে নিজম্ব খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।