দিদারুল আলম জিসান কক্সবাজার
মিয়ানমারে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাতের বলি হচ্ছে রোহিঙ্গারা। প্রতিদিন গ্রাম ছাড়া হচ্ছে রোহিঙ্গারা। এপারে আসতে ওপারে নাফ নদীর তীরে ভিড় করেছে হাজারও রোহিঙ্গা মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের বর্ণনা দিয়েছেন সেখানকার এক যুবক। নতুন করে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে জোরালো ভূমিকার কথা বলছেন কক্সবাজারের নাগরিক সমাজ। শক্ত অবস্থানের কথা বলছে প্রশাসন।
সংঘাতের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য নাফ নদীর ওপারে জড়ো হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। কেউ কেউ অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চোরাই পথে। নাফ নদীর তীরে জড়ো হওয়ার গত তিন দিনে বিভিন্ন মাধ্যমে। দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গারা দলে দলে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। সবশেষ ১৭ এপ্রিল মংডুর উত্তরের গ্রাম মাঙ্গালায় জান্তা বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা করে আরাকান আর্মি। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে যোগ দেয় আরও একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। ত্রিমুখী সংঘর্ষের ফল ভোগ করতে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। একের পর এক গোলাবারুদ পড়ায় মাঙ্গালা ছেড়ে পেরাংপুর, বাজারপাড়া, শলাকা গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছে তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাখাইনের মাঙ্গালার রোহিঙ্গা যুবক বলেন, দুই গ্রুপ যখন হামলা করে তখন তাদের গোলাবারুদ আমাদের বাড়িতে এসে পড়ে। তাই আমরা ভয়ে পালিয়ে এসেছি।
এদিকে রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, জান্তা বাহিনী এবং আরাকান আর্মি দু’পক্ষই চায় রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে।
রোহিঙ্গাদের সংগঠন এফডিএমএন আরসির বোর্ড সদস্য ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, আমরা বার বার তাদেরকে বলেছি এদেশে না আসতে। প্রয়োজনে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে পালিয়ে থাকুক, তবু যেনো এপারে না আসে। কারণ আমরা ৭ বছরেও মিয়ানমার ফেরত যেতে পারিনি। যদি বাকিরাও চলে আসে তাহলে আরাকানে রোহিঙ্গাদের শেকড় হারিয়ে যাবে।
কক্সবাজারের স্থানীয়রা বলছেন, যে কোনভাবে ঠেকাতে হবে অনুপ্রবেশ। তবে প্রশাসনের দাবি, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি-কোস্টগার্ডের পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি মাহমুদুল হক চৌধুরী।যদি রোহিঙ্গারা আবারো ঢুকে পড়ে তবে তাদেরকে ফেরত পাঠানো কঠিন হয়ে যাবে। সুতরাং আমাদের প্রত্যাশা থাকবে তারা যেনো বর্ডার অতিক্রম করতে না পারে। পুরাতন রোহিঙ্গা দালালরা এবং মিয়ানমার থেকে মানুষ আনার জন্য স্থানীয় কিছু দালাল সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। প্রশাসন রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণ বা অনুপ্রবেশ করা আগে দালালদের চিহ্নিত করা উচিত এবং তদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত।
কক্সবাজার টেকনাফের ইউএনও আদনান চৌধুরী বলেন, আমরা বিষয়টি প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি যেনো কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে।
সংঘাতের শুরুতে নিজদেশে ফেরার ব্যাপারে রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মিকে ঘিরে আশান্বিত হলেও এখন পর্যন্ত সংগঠনটি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। উল্টো রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
তবে এ বিষয়ে টেকনাফের ২ বিজিবির অধিনায়ক: লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ জানান: মিয়ানমার সীমান্তের নফ নদীর পাড়ে বাংলাদেশ পাড়ি দেওয়ার জন্য রোহিঙ্গারা জড়ো হয়ে আছে বিষয়টি এখনো অবগত নয়: জান্তা ও বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের শুরু থেকেই বাংলাদেশ বিজিবি সীমান্তের প্রতিটি জায়গায় সক্রিয় রয়েছে যাতে করে কোন নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে।