মোঃ মজিবর রহমান শেখ
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৭০ জন চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে ২ মাস ধরে। পূর্বের কর্মকর্তা বদলীর পর যোগদান করা নতুন কর্মকর্তা শেষ বেতনের প্রত্যয়নপত্র না নিয়ে আসায় এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। এতে ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবাদান কার্যক্রম, ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের।
গেল মাসে যোগদান করা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অবহেলার কারণে বেতন ভাতা বন্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক-নার্স কর্মচারীদের। তবে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অনলাইনে শেষ বেতনের প্রত্যয়নপত্রের হার্ডকপি হাতে না পাওয়ার কারণে বেতন-ভাতা প্রদানে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
এতে তাঁর কোন হাত নেই। এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজায় বেতন-বোনাস না পেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরর্ত ১৩ জন সনাতন ধর্মের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের আনন্দ ম্লান হয়েছে।
নাম প্রকাশ না শর্তে সনাতন ধর্মের কয়েকজন কর্মচারী জানান, উচ্চ পদে যারা চাকরি করেন, তাদের পয়সার অভাব নেই। এদিকে ওদিক করে তারা চলতে পারে। আমরা কর্মচারী, দিনশেষে বেতন-বোনাসের টাকা দিয়ে চলতে হবে।
এবার পূজোয় বাচ্চাদের সামনে দাঁড়াতে পারিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্বে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমাসের বদলীর পর গত ০১ সেপ্টেম্বর ডা. শাকিলা আক্তারকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়। ঐ আদেশে ০৭ কার্যদিবসের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদানের কথা থাকলেও কর্মস্থলে যোগ দেন ১৩ সেপ্টেম্বর। হাসপাতালের কর্মচারী ও সেবা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, যোগদানের পর থেকে নিয়মিত অফিস করেন না বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাকিলা আক্তার। তার অনুপস্থিতির সুযোগে জরুরী বিভাগ, ইনডোর ও আউটডোরে শুরু হয়েছে অব্যবস্থাপনা।
নিয়মিত বসছে না চিকিৎসক, ঘুরে যেতে হচ্ছে সেবা নিতে আসা রোগীদের। ২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের লেদু রাম তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। দুপুর ২টায় তার স্ত্রীকে নিয়ে ফিরে হাসপাতাল গেটে জানান, ‘অফিসারের দরজাখান বন্ধ, এইতানে বাকি ডাক্তারদের কুনো খবর নাই। দেড় ঘন্টা বসে থাকে বাড়িত যাচু, কাইল ঠাকুরগাঁও যাবা হবে, এ ছাড়া আর কুনো রাস্তা নাই। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে, ১১ জন চিকিৎসক, ৩৪ জন নার্স ও ১২৫ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা বন্ধের কারণে অনেক কর্মচারীর পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এদিকে মাসের ২৫ তারিখে হিসাব রক্ষন অফিসে চলতি মাসের বিল সাবমিট করার কথা থাকলেও এলপিসির কারণে সেটি জমা হয়নি। তাই অক্টোবর মাসের বেতন-ভাতা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান হিসাব রক্ষক ওয়ালিউল্লাহ লিটু জানান, শেষ বেতনের প্রত্যয়নের (এলপিসি) অনলাইন কপি আসলেও হার্ড কপি হাতে না পাওয়ায় পুঁজার পূর্বে বিলটি প্রদান করা সম্ভব হয়নি। এতে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া উপায় নেই। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.শাকিলা আক্তার ২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে জানান, অফিসে নিয়মিত না আসার অভিযোগ ম্যিথা।
তাছাড়া বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রধান কর্মকর্তার বদলী হলে বেতন-ভাতা নিয়ে এ ধরণের জটিলতা তৈরি হয়, আমাদের বেলাও তাই হয়েছে। ১৭০ জনের বিল-বেতন বন্ধ, বিষয়টি খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। তাছাড়া অনলাইন এলপিসি দিয়ে হিসাব রক্ষন বিল ছাড় দিচ্ছে না। তবে এ সমস্যা কবে সমাধান হবে? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি দিতে পারেনি।
জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা: নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, ফাজলামি শুরু করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। আমি অনেকবার বলেছি, এখন আবারও বলতেছি। কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রাখার অধিকার কারো নেই।