নিজস্ব প্রতিবেদক
‘ঘুষ’ শব্দটি বাংলা ভাষায় ব্যবহার করা হয় এবং এটি দুর্নীতির একটি সাধারণ উদাহরণ। ঘুষ বলতে বোঝায়, কোনো কাজ বা সুবিধা পাওয়ার জন্য অবৈধভাবে অর্থ, সম্পদ বা অন্য কিছু দিয়ে কাউকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা। অনেকের মতে, প্রলোভন, লোভন, বিলোভন, প্রণোদনা, উৎকাচ, বকশিশ, সন্তুষ্টকরণ প্রভৃতি ঘুষের সমার্থক।
সাধারণ অর্থে ঘুষ বলতে আমরা বুঝি, কারো কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেওয়ার জন্য তার প্রাপ্যের বাইরে অর্থ বা দ্রব্যসামগ্রীর বিনিময় করে তাকে প্রভাবিত করাকে ঘুষ বলা হয়।
ঘুষ নেওয়া বা দেওয়া উভয়ই বেআইনি এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকারক। এটি ইসলামের দৃষ্টিতে যেমন অবৈধ, তেমনি দুনিয়ার আইনেও অবৈধ। এটি নৈতিকতা, ন্যায়বিচার ও সুশাসনের পথকে সংকুচিত করে এবং দুর্নীতি বৃদ্ধি করে।
কারো হক বিনষ্ট করা কিংবা কোনো অন্যায়কে কার্যকর করার জন্য বিচারক কিংবা শাসককে ঘুষ দেওয়া মারাত্মক অপরাধ।
কেননা ঘুষের ফলে বিচারক প্রভাবিত হয়, হকদারের প্রতি অবিচার করা হয়, বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থায় ধস নেমে আসে। ঘুষের মাধ্যমে মানুষ অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করে। অথচ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ কোরো না এবং জেনে-বুঝে মানুষের সম্পদ থেকে ভক্ষণের জন্য বিচারকদের দরবারে উহার আরজি পেশ কোরো না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৮)
সাধারণত অন্যের হক অন্যায়ভাবে নিজের করার জন্যই মানুষ ঘুষের আশ্রয় নিয়ে থাকে।
ঘুষের মাধ্যমে মানুষ আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে চায়, যা কোরআনের আয়াতের আলোকে সম্পূর্ণ হারাম। এভাবে অবৈধ সুবিধা আদান-প্রদানকারীদের আল্লাহর রাসুল (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘বিচার-ফায়সালায় ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ের ওপরে আল্লাহ তাআলা অভিসম্পাত করেছেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৩৬)
তবে অনেক ক্ষেত্রে মানুষ সিস্টেমের কাছে জিম্মি হয়ে যায়। মানুষ নিরুপায় হয়ে যায়।
বিজ্ঞ আলেমদের মতে, সে রকম কঠিন পরিস্থিতিতে যদি ঘুষ দেওয়া ছাড়া নিজের পাওনা বা অধিকার আদায় সম্ভব না হয় কিংবা ঘুষ না দিলে জুলুম-অত্যাচারের শিকার হতে হয়, তাহলে ওই অধিকার আদায় ও জুলুম নিরোধকল্পে একান্ত বাধ্য হয়ে প্রবল ঘৃণা ও অনিচ্ছা নিয়ে ঘুষ দিলে ঘুষদাতা উক্ত শাস্তির আওতায় পড়বে না। কারণ সে সেখানে জুলুমের শিকার।
তবে কারো পরিস্থিতি যদি এমন না হয়, বরং সে অবৈধভাবে সুবিধা গ্রহণের জন্য উপঢৌকন দেয়, তাহলে সে অবশ্যই নবীজি (সা.)-এর বদদোয়ার আওতায় পড়ে যাবে। কেননা নবীজি (সা.) ঘুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবার বিরুদ্ধে বদদোয়া করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবন আস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ঘুষ দাতা ও গ্রহীতাকে অভিসম্পাত করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৮০) মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই ব্যাধি থেকে হেফাজতে রাখুন। আমিন।