মোঃ খান সোহেল স্টাফ রিপোর্টার
নেত্রকোনার দুর্গম হাওর জনপদের খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে এখন ডাক্তার-কর্মচারীর চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ৩১ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি এ হাসপাতালে জুনিয়র কনসালট্যান্টসহ ডাক্তারের ১৩টি পদের মধ্যে ৭টিই শূন্য, বাকি ৮টি পদের বিপরীতে পোস্টিং থাকলেও এদের মধ্যে ৭ জন ডাক্তারই অন্যান্য হাসপাতালে রয়েছেন প্রেষণে।
এ হিসাবে খালিয়াজুরী হাসপাতালে ডাক্তার আছেন মাত্র একজন। ফলে একমাত্র ডাক্তারের ওপর এখন নির্ভরশীল এখানকার বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা। বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন উন্নয়নকর্মী বুধবার জানান, গত ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১২ টার দিকে মাথা ব্যাথা ও শরীরের দুর্বলতা কাটানোর চিকিৎসা নিতে গিয়ে তারা হাসপাতালটিতে কোনো ডাক্তার পাননি। প্রায় একই কথা জানান খালিয়াজুরী সদরের পুরানহাটি গ্রামের আশ্রব আলীর স্ত্রী সরুফা বেগম (৬০)। তিনিও সেই সময় চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃর্বিভাগে।
তিনি সেখানেসহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খুঁজেও কোনো ডাক্তার পাননি। ডাক্তার না পেয়ে সরুফা বেগম আক্ষেপ করে সকালের সময়কে বলেন, ‘খাইল্ল্যাজুরী হাসপাতালে কোনো ডাক্তর খুঁইজ্যা পাইলাম না। ট্যাহার অভাবে অইন্য কোনোখানেও চিকিস্যা নিতে যাইতাম পারতাম না। তাই অহন চিকিস্যা ছাড়াই মরণ লাগব আমরার মতো গরিব মানুষরার।’ স্থানীয় অনেকেই জানান, এ হাসপাতালে প্রায়ই কোনো ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যায় না।
সেক্ষেত্রে জটিল ও জরুরি চিকিৎসা প্রত্যাশী রোগিদের মৃত্যু ঝুঁঁকি শুধু বেড়েই চলে। হাওর জনপদ খালিয়াজুরী উপজেলায় সরকারি এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ছাড়া অন্য কোন হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক নেই। ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ভবন সাদৃশ্য এ হাসপাতালে কোন রোগীর ৫০ টাকা খরচের রোগ শনাক্তকরণের প্রয়োজন হলে মিলে না তেমন কোন পরীক্ষা-নিরিক্ষার ব্যাবস্থাও। ফলে রোগীকে দুরের পথ পেরিয়ে যেতে হয় জেলা কিংবা অন্য কোন উন্নত উপজেলা শহরে।
এতে রোগীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ ও অপচয় হয় অধিক বেশি অর্থের। দুর্গম এ খালিয়াজুরীতে গর্ভবতী জটিল রোগীদের চিকিৎসা সেবা পাওয়া দুষ্প্রাপ্য। তাই এখানে মা ও শিশু মৃত্যের হার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে অনেকটা বেশি। এখানকার হাসপাতালটিতে কোনো গর্ভবতী মায়ের সিজারিয়ান অপারেশন কখনো হয়নি।
অপারেশন থিয়েটারটি অচল বয়েছে ডাক্তার, যন্ত্রপাতি এবং ব্লাড ব্যাংকের অভাবে। ডাক্তার সংকটের কারণে তেমন কোনো চিকিৎসাই মেলে না এখানে। জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালটি অপরিচ্ছন্ন থাকে বেশিরভাগ সময়। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিসংখ্যানবিদ রফিকুল ইসলাম জানান, এ হাসপাতালে মোট পদের সংখ্যা ১০৯টি। এর মাঝে ৫০টি পদই শূন্য। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ রয়েছে ৪টি। এর মাঝে জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি পদটি শূন্য। অন্য তিনটি পদ জুনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিসিন, গাইনি ও অবস পদের বিপরিতে তিন জনের পোস্টিং থাকলেও এসব ডাক্তার এখানে নেই। তারা প্রেষণে রয়েছেন অন্যান্য হাসপাতালে।
তাছাড়া সহকারী ডেন্টাল সার্জন ও আয়ূর্বেদিক দুটি পদের বিপরীতে থাকা দুজন ডাক্তারও প্রেষণে আছেন দীর্ঘদিন ধরে। মেডিকেল অফিসারের দুটি পদ রয়েছে শূন্য। হাসপাতালটিতে চিকিৎসা দেয়ার জন্য ডাক্তার হিসেবে আছেন শুধু একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও)। এদিকে, হাসপাতালে প্রায়ই ডাক্তার অনুপস্থিত থাকেন কথাটি সত্য নয়- এমনটি জানিয়ে খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৌনম বড়ুয়া বলেন, হাসপাতালের প্রতিটি সংকটের কথাই মাসিক ও বিশেষ প্রতিবেদনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ডাক্তার সংকট কাটাতে সিভিল সার্জন আপাতত পার্শ্ববর্তী অন্যন্য হাসপাতাল থেকে এনে এখানে দুজন করে ডাক্তার সংযুক্তি দিচ্ছেন প্রতি দুই সপ্তাহের জন্য। তিনি আরো জানান, হাসপাতালটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণে ভবন নির্মাণ হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। কিন্তু প্রশাসনিক অনুমোদন ও জনবল না থাকায় সেটি এখনো চালু হয়নি।