স্টাফ রিপোর্টার
যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য প্রেমের ফাঁদে ফেলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও চিত্র ধারণের পর ব্লাকমেইল করে বিয়ে। তবে যুক্তরাজ্যে গিয়েও শেষ হয়নি তার এ প্রতারণা! ফাঁদে ফেলে একাধিক বিয়ে করে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে সর্বস্ব লুটে নিয়ে লন্ডনী যুবকদের নিঃস্ব করাই এ তরুণীর নেশা।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের গিরিশনগর গ্রামের শাহজাহান মিয়া মেয়ে ভয়ংকর প্রতারক শারমিন আক্তার সীমা নামের এ তরুণীর ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন দেশী ও প্রবাসী একাধিক যুবকের পরিবার।
সম্প্রতি ওই তরুনীর বিরুদ্ধে তালাক না দিয়ে একাধিক বিয়ে ও বিয়ের নামে যুবকদের ফাঁদে ফেলে অর্থ-সম্পদ লুট, প্রতারণা-জালিয়াতি ও নিরীহ লোকদের মামলায় ফেলে হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগে যুক্তরাজ্যের হোম অফিসে পৃথক দুটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন ভুক্তভোগী ওই দুই যুবক।
তাঁরা হলেন, শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাইফুর রহমান ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাবিবুর রহমান। তাঁদের দাবি সীমার এ সকল অপকর্মের মুলহোতা তার কথিত নানা যুক্তরাজ্য প্রবাসী শফিকুল ইসলাম এবং জড়িত রয়েছেন সীমার মা বাবাও।
ভুক্তভোগী সাইফুর রহমান জানান, ৪ বছর আগে ফেসবুকে সীমার সঙ্গে পরিচয় হলে সীমা নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা একজন সিলেট শহরের বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। নিয়মিত ভিডিও কলে সীমা তার সঙ্গে কথা বলে নগ্ন ছবি দেখিয়ে তাকে উত্তেজিত করে অশ্লীল অঙ্গ ভঙ্গির ভিডিও চিত্র ফুটেজ ধারণ করে রাখত। এক পর্যায়ে সীমা বিয়ের জন্য চাপ দিলে সাইফুর তাঁর পরিবারের লোকদের সীমা বাড়িতে পাঠালে জানতে পারেন সীমার বাবা স্থানীয় একটি কারখানার দারোয়ান। তারা একটি কলোনীতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে। সীমার দেওয়া তথ্যে সাথে কোন মিল না পাওয়ায় সাইফুর ও তাঁর পরিবার বিয়েতে অসম্মতি প্রকাশ করেন। তখন সীমা আত্মহত্যার হুমকিসহ ভিডিও কলে ধারন করা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখান। এতে ভয় পেয়ে সাইফুর সীমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন এবং ২০২১ সালের জুন মাসে সীমাকে বিয়ে করেন। ইমিগ্রেশন জটিলতায় স্পাউস ভিসায় সীমাকে যুক্তরাজ্যে আনতে না পেরে ৬ মাস পর স্টুডেন্ট ভিসায় সীমাকে যুক্তরাজ্যে আনেন। যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর সীমার ভয়ংকর রূপ সামনে আসে।
ভুক্তভোগী যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাইফুর রহমান বলেন, বিয়েসহ সীমাকে যুক্তরাজ্যে আনতে আমার প্রায় ৬০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাজ্যে আসার পর সীমা পুরোদমে বদলে যায়। সে আমাদের বাসার মালিক ব্রিটিশ-বাংলাদেশী ডিভোর্সড এক নাগরিকের সঙ্গে পরকিয়ায় লিপ্ত হয়ে তাঁর কাছ থেকে দামি দামি উপহার লুটে নিতে থাকে। যুক্তরাজ্যের আইনে কোনো ব্রিটিশ নাগরিককে বিয়ে করলে সহজে স্থায়ী হওয়া যায়, তাই সে ঐ ব্যক্তিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং আমাকে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা জানায়। বিষয়টি আমার কাছে ধরা পরায় আমাদের মধ্যে কলহর দেখা দেয়। এক পর্যায়ে সে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে আমার বাসার সকল দামি জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। সীমার খোঁজ না পেয়ে বাংলাদেশে তার মা-বাবার কাছে মানুষ পাঠিয়ে জানতে পারি-তারাও বাসা ছেড়ে পালিয়েছে। এদিকে, চোরাইকৃত টাকা ও মালামাল বিক্রি করে কথিত নানা শফিকের মাধ্যমে সে তার ভাইকেও যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসে।
সীমার প্রতারণার শিকার আরেক ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান জানান, বাংলাদেশ থেকে তার মায়ের মাধ্যমে হাবিবুরের বোনের ফোন নম্বর যোগাড় করে সীমা। এরপর প্রতিদিন তার বোনকে ফোন করে কান্নাকাটি করে বলত, সে অসহায়। এইদেশে তার আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই। তার ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার জন্য একজন পাত্র ঠিক করে দিতে। বাংলাদেশে সীমার মাও ফোন করে কান্নাকাটি করত।
বিদেশের মাটিতে অসহায় একটি মেয়ে এবং তার পরিবারের উদ্বেগ দেখে হাবিবুরের বোন তার সদ্য ডিভোর্সড ভাইয়ের কথা তাদেরকে জানান। প্রতারক সীমা হাবিবুরের ফোন নম্বর নিয়ে তার পূর্বের স্বামীর ন্যায় তাকেও তার প্রতারণার জালে ফাঁসিয়ে ফেলে। হাবিবুর ও তার পরিবারের কাছে পূর্বের বিয়ের তথ্য গোপন করে এবং তালাক না নিয়ে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে হাবিবুরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সীমা। বিয়েসহ প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা খচর করে হাবিবুর সীমাকে স্পাউস ভিসায় যুক্তরাজ্যে বৈধ করেন। যুক্তরাজ্যের আইনে স্পাউস ভিসার মেয়াদ আড়াউ বছর। আড়াই বছর পর ফি পরিশোধ করে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হয়। এভাবে ১০ বছর পর স্থায়ী বা ব্রিটিশ সিটিজেন হতে হয়। কেউ যদি নির্যাতন বা ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হয় তাহলে সাথে সাথে হোম অফিস তাকে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ দেয়। ইতিমধ্যে পূর্বের স্বামী কে ডিভোর্স না দিয়ে আমাকে বিয়ে করা ও আগের স্বামীর ঘর থেকে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। এসময় সীমা কতিথ নানা শফিকের পরামর্শে আমার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে তিনি বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাসের সুযোগ পান।
ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান আরো জানান, সীমা দেশে থাকাকালীন তার রূপ যৌবন দেখিয়ে যুবকদের নিঃস্ব করে এসেছে। অনেকের সাথে তার দৈহিক সম্পর্ক রয়েছে। আমি এবং সাইফুর সীমার প্রতারণায় সর্বস্ব হারিয়ে এখন পুরোই নিঃস্ব। তাই আমরা হোম অফিসে সীমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছি। আমরা এর বিচার চাই। সীমার সকল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে শফিক জড়িত। আমরা চাই আমাদের মতো আর যেনও কেউ নিঃস্ব না হয়।
এ ব্যাপারে একাধিক বার সীমার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সীমার বাবা শাহজাহান মিয়া মুঠোফোনে বলেন, সাইফুরের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসায় তার সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সাইফুর সীমাকে লন্ডনে নিয়ে যায়। লন্ডনে কি হয়েছে তা আমরা জানি না! সীমা এখন আমার মামা শ্বশুর শফিক মিয়া বাসায় রয়েছে। তিনি মেয়ে সীমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন।
এদিকে শফিক মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সীমাকে নিয়ে কোন নিউজ না করার কথা বলে ফোন কেটে দেন।