রুহুলআমিন রানা ,নন্দীগ্রাম প্রতিনিধি:
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আসতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। আর ৮ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে শুরু হবে মূল পূজা।
এই হিসেবে বলা চলে দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্গাপূজা। আর এই উৎসব ঘিরে একেক দিন একেক পোশাকে দেবী দুর্গাকে বরণের আয়োজন যেনো আগে থেকেই শেষ করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। তাই শারদীয়ার আগমনীর আমেজে পুরোদমে চলছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। সেই উৎসবের কেনাকাটা করতে বাজারমুখী হচ্ছেন ক্রেতারা। প্রতি বছর পূজা ঘিরে বাড়তি বেচাকেনায় চাঙ্গা হয়ে উঠে নন্দীগ্রামের বিপণি বিতানগুলো।
তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। পূজার মাত্র কয়েকদিন আগেও মার্কেটে ক্রেতা সংকট। ক্রেতা সমাগম না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন দোকানিরা। তারা বলছেন, এবারের পূজায় তাদের ব্যবসা ভালো না। অনেকে নতুন পুঁজি খাটিয়ে দোকানে মালামাল তুলেছেন। কিন্তু কাঙ্কিত ক্রেতার দেখা নেই। ব্যবসায়ীদের অনেকে লোকসানের আশঙ্কাও করছেন। পূজার প্রস্তুতি ঘিরে প্রতি বছর এ সময় নন্দীগ্রাম বাজারের দোকানগুলো ক্রেতাদের পদচারণায় সরব হয়ে ওঠে। দোকানগুলোয় চলে কেনাকাটার ধুম।
এবার নেই সেই রমরমা ব্যবসা। আঁচল বস্ত্র বিতানের স্বত্বাধিকারী মো: রতন বলেন, দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে জমকালো আয়োজন কম এবার। তাই বিক্রিও কম। সামনের দিনগুলোতে বিক্রি খুব একটা বাড়বে বলা যায় না। এ মৌসুমে দেড় থেকে ২লাখ টাকা বিক্রি হয়। সেভাবেই বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু বাজারের যা অবস্থা তাতে এবার এক লাখ টাকা বিক্রি হবে কি না সন্দেহ! নিউ কালেকশান, নাওমি ফ্যাশান, আঁচল বস্ত্র বিতান, আল রউফ বস্ত্র বিতান এন্ড গার্মেন্টস, রংধনু ফ্যাশানসহ এর আশপাশের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানে ক্রেতা নেই। দোকানিরা অলস সময় পার করছেন। কিছু দোকানে টুকটাক ক্রেতা দেখা মিললেও বিক্রেতারা বলছেন, বেচাবিক্রি একেবারেই কম।
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, এবার কাপড়সহ অন্যসব পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় তারা সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করতে পারছেন না। তাই অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় কম কেনাকাটা করে ফিরে যাচ্ছেন। আঁচল নাওমি ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মামুন মন্ডল জানান, পূজার বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি। টুকটাক কাস্টমার আসছে। কেউ কেনাকাটা করছে আবার কেউ ফিরে যাচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবারের ব্যবসা খারাপ। দেখা যাক সামনের দিনগুলোতে বিক্রি বাড়ে কি না? বসুন্ধরা মার্কেটের পোশাক ও জুতা বিক্রেতারা বলছেন, সামনে দূর্গা পূজা উপলক্ষ্যে পোশাক ও জুতা-স্যান্ডেলের দোকানে ক্রেতার আনাগোনা সামান্য হলেও বেড়েছে।
বিশেষ করে বাচ্চাদের জামাকাপড় এবং জুতা-স্যান্ডেলের বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। তবে পুজার বাজার অনুযায়ী বিক্রি অনেক কম। তবে যে পরিমাণ বেচাকেনা হচ্ছে সেটাকে ভালো বলা যাবে না, মন্দের ভালো। এর মধ্যে বৃষ্টির কারণেও বিঘ্ন ঘটেছে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না। অমিত সরকার নামের এক ক্রেতা বলেন, কাপড়ের দাম অনেক বেশি। ইচ্ছা ছিল শার্ট, প্যান্টসহ আরো কিছু কেনাকাটা করবো। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় শুধু শার্ট-প্যান্ট কিনেই ফিরে যাচ্ছি।
এদিকে নন্দীগ্রাম বাজারের জুয়েলারী ব্যবসায়ীরা বলছেন সোনার দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় জুয়েলারি ব্যবসায় ধস নেমেছে। একটি ছোট্ট নাকফুলের দামই এখন ২ হাজার টাকা। আমরা নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের হারিয়েছি অনেক আগেই। এখন মধ্যবিত্ত ক্রেতাদেরও পাচ্ছি না।
উচ্চবিত্ত ক্রেতারা এলেও তা হাতেগোনা কয়েকজন। স্বর্ণালঙ্কারের বাজারে পূজার মৌসুমের প্রভাব পড়েনি বলে জানান জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। একটা সময় ছিল যখন পূজার মৌসুমে স্বর্ণালঙ্কারের বাজারেও ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে যেত। বর্তমানে সোনার আকাশচুম্বি দামের কারণে খুব কম মানুষই স্বর্ণালঙ্কারের দোকানে পা বাড়াচ্ছেন।