মোঃ বজলুর রহমান স্টাফ রিপোর্টার
শিক্ষা যেমন জাতিকে উন্নত করে ঠিক তেমনি একটি সুন্দর রাস্তা গ্রামকে উন্নত করে । রাস্তা নিয়ে গ্রামীণ অঞ্চলে অভিযোগের শেষ নেই । অত্র অঞ্চলে নতুন আত্মীয় করার ক্ষেত্রে গ্রামীণ এই রাস্তা কেই মূল দোষ হিসেবে গণ্য করা হয় । এমন অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য গ্রামীণ এ রাস্তা মেরামতে হাত দিয়েছে স্থানীয় ছাত্র জনতা ।
তথ্য নিয়ে জানা যায়, মানিকগঞ্জ সদর কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড উত্তর কৃষ্ণপুরের দীর্ঘ ২ কিলোমিটারের অধিক রাস্তা স্থানীয় সরকারের অবহেলার শিকার হয়ে তা যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চার চাকার কোন গাড়ি এখানে চলতে দেখেনি । মাঝে মাঝে বিশ্রী ভাবে ভাঙার কারণে বাইক ও অটো রিক্সা দুর্ঘটনার শিকার হয় । পাশের খালটি বেদখল হওয়ায় হালকা বৃষ্টিতেই রাস্তার উপর হাঁটু পানি হয়ে যায় । এতে সকল প্রকার যাতায়াত অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এ কারণে ভালো ঘরের কোন পাত্র পাত্রীর সম্বন্ধরা আত্মীয় বানাতে চায় না । কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা সবকিছু দেখার পরও চোখ-কান বন্ধ করে রাখে । উপায়ান্তর না পেয়ে স্থানীয় ছাত্র সমাজ একত্রিত হয়ে ভাঙা রাস্তাটি মেরামত করছে।
রাস্তা মেরামত সম্পর্কে ছাত্রসমাজকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মোঃ রাসেল হোসেন বলেন, উত্তর কৃষ্ণপুরের আমাদের এ রাস্তাটি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ । রাস্তার দুপাশে হাজারখানেক পরিবারের বসবাস । কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের পার্শ্ববর্তী হওয়ার পরেও এ রাস্তার প্রতি তেমন নজর নেই কারো । দৈনিক এ রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে । হাজার হাজার শিক্ষার্থী নষ্ট রাস্তা পার হয়েই তাদের শিক্ষাঙ্গনে পৌঁছায় । ভালো কোন জুতা ও কাপড় পড়ে বাইরে বের হওয়া যায় না ।
এখান থেকে ইউনিয়ন পরিষদে বা রাজিবপুর বাজার ও স্কুল এবং কলেজে যাতায়াতের বিকল্প কোন রাস্তা নেই । ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি রাস্তা পাকা হবে । নির্বাচনে বিভিন্ন নেতাকর্মী বিভিন্ন আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয় না । সবকিছু দেখে স্থানীয় যুবসমাজ ও আমরা ছাত্রজনতা একত্রিত হয়ে পূর্ণ রাস্তা মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে । প্রাথমিকভাবে আমরা নিজ অর্থায়নে ২০০ বস্তা বালু ভরাট করে রাস্তার ভাঙ্গা স্থানে ফেলবো এবং যেখানে পানি জমা ট বেধেছে তা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করব এবং রাস্তার পাশে মাটির ক্ষয় রোধে আমরা ১০০০ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছি । আমরা অনেকটা বাস্তবায়ন করেছি । তবে কোন এনজিও বা সরকারি সহায়তা পেলে আমরা গ্রামের রাস্তাকে আরো সুন্দর করতে পারব । স্থানীয় সরকার মোঃ বিপ্লব হোসেন সেলিম চেয়ারম্যানকে আমাদের পরিকল্পনা বিষয়ে অবহিত করেছি । তিনি আমাদের কে রাবিশ দিবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ।
এ বিষয়ে উত্তর কৃষ্ণপুরের পন্ডিত ও মাতব্বর হিসেবে খ্যাত শিক্ষক মোঃ রুস্তম আলী স্যার বলেন, আমাদের আশেপাশে উন্নয়ন হলেও এ রাস্তার উন্নয়ন হয়নি । রাস্তার কারণে গ্রামে ভালো কোন বিবাহের সম্বন্ধ আসে না । এছাড়া আমাদের আপন আত্মীয়-স্বজন ও আমাদের বাড়িতে আসতে দ্বিধাবোধ করে । এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি যে, না যায় নৌকা চালিয়ে আসা, না যায় কোন গাড়িতে আসা । রাস্তা দিয়ে লুঙ্গি ছাড়া প্যান্ট পড়ে আসার অবস্থা নেই । পুরুষরা কোনভাবে আসলেও মহিলারা কিভাবে আসবে ? যাদের অতি প্রয়োজন তারা কাপড় নষ্ট করেই আসে । যাদের টাকা আছে তারা দূরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে । এভাবে আর কতদিন ? আমরা দ্রুত রাস্তার সংস্কার চাই ।
তবে, স্থানীয় যুব ও ছাত্র সমাজ রাস্তার কাজে হাত দেওয়ায় আমরা নিজেদেরকে গর্বিত অভিভাবক হিসেবে মনে করছি ।
মিডিয়ার সংবাদ শুনে শতশত অভিযোগকারী সরকারের নিকট বার্তা পৌঁছানোর নিমিত্তে একযোগে বলতে থাকে, ‘ অতি দ্রুত আমাদের রাস্তার সংস্কার চাই’ ।