নিজস্ব প্রতিবেদক
২০১০ সালে যাত্রা শুরু করা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের উদ্যোগের মাধ্যমে বীরগঞ্জ উপজেলায় শিশু ও যুব ফোরামগুলো সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে, এই অঞ্চলে চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ৪৫টি শিশু ফোরাম সক্রিয় রয়েছে, যেখানে প্রায় ২০০০ শিশু তাদের অধিকার রক্ষায় এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
বিশ্বজুড়ে শিশু অধিকারের সুরক্ষায় কাজ করছে ওয়ার্ল্ড ভিশন, এবং বাংলাদেশেও এটি ব্যতিক্রম নয়। দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শিশুদের উন্নয়নে শিশু ফোরাম গঠনের মাধ্যমে সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, যা মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে দেশে শিশুদের সামগ্রিক বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। সংস্থাটি বর্তমানে ৪০টি জেলার ৫৭টি আঞ্চলিক কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৪৪ লক্ষ দরিদ্র ও হতদরিদ্র শিশুকে উন্নয়ন ও সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, শিশু নিরাপত্তা, জীবিকা উন্নয়ন, কিশোর-কিশোরীদের বিকাশ ও নেতৃত্ব গঠন এবং দুর্যোগকালীন ত্রাণ কার্যক্রম।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ শিশু ফোরাম গঠন করেছে শিশুদের অধিকার রক্ষা এবং তাদের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। বর্তমানে ১,৭৮,০০০ কিশোর-কিশোরী ও যুব সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী, প্রত্যেক শিশুর অধিকার রয়েছে সুরক্ষা, শিক্ষা, এবং সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার। কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা প্রায়ই এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। তাই ওয়ার্ল্ড ভিশন তাদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে।
শিশু ফোরামের সদস্যরা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিনাজপুর সরকারি কলেজে পড়াশোনা করছেন। তারা মানবতার দেওাল প্রকল্পের আওতায় সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যেমন স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে লেবু গাছ বিতরণ, যা পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
বীরগঞ্জ থানার সাথে গড়ে তোলা সুসম্পর্কের মাধ্যমে, ফোরামটি সরকারি বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করছে। সম্প্রতি, তারা চারটি গ্রামকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণা করেছে এবং এ বিষয়ে প্রায় ৫০০০ মানুষকে সচেতন করতে সক্ষম হয়েছে। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে, ৪টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সফলতা অর্জন করা হয়েছে।
বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৫০০ তাল বীজ রোপণ করা হয়েছে। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ৩৮০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে স্পোকিং ইংলিশ বই বিতরণ করা হয়েছে, যা তাদের ভাষাগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হচ্ছে। শিশুদের মধ্যে সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তুলতে মাটির ব্যাংক বিতরণ করা হয়েছে, যা ২০০০ শিশুর মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। হতদরিদ্র পরিবারের জন্য শিক্ষা উপকরণ ও পোশাক বিতরণের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ফোরামটি সম্প্রতি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে এসডিজির লক্ষ্য পূরণের দিকে এক নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া, তারা পাঁচটি গ্রামকে ইকো ভিলেজ হিসেবে ঘোষণা করেছে, যেখানে পরিবেশবান্ধব চুলা ও ঝুলন্ত বাগান স্থাপনের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে।
বীরগঞ্জ যুব সংগঠনটি সরকারিভাবে নিবন্ধন করতে সক্ষম হয়েছে, যা তাদের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে। ভবিষ্যতে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় স্থাপন এবং বেকার যুবকদের স্থানীয় প্রশাসনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বীরগঞ্জ এপি টিম, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এবং সকল শিশু ও যুব ফোরামের সদস্যদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানানো হচ্ছে। তাদের অঙ্গীকার ও প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে শিশু ও যুবকদের জন্য একটি নিরাপদ ও উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে. বীরগঞ্জ যুব ফোরামের সভাপতি মো: নুরনবী ইসলাম বলেন ” আমাদের বীরগঞ্জ যুব ফোরাম সদস্যরা অত্যন্ত সংকল্পবদ্ধ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে চলেছে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের তরুণ প্রজন্মই সমাজের পরিবর্তন আনতে পারে।
শিশুদের অধিকার রক্ষা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমাদের এই উদ্যোগগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা তাদের প্রচেষ্টা দিয়ে আমাদের কাজকে সমর্থন করছেন।
আসুন, আমরা একসাথে কাজ করি যাতে প্রতিটি শিশু নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে। আমাদের অঙ্গীকার, বীরগঞ্জকে একটি বাল্যবিবাহ মুক্ত এবং শিশুদের জন্য নিরাপদ উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা।”