২০১৮ সালে অনার্স পাস করার পর চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে ছুটে, সফলতার দেখা পাননি তিনি। বেকারত্বের কষাঘাতে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে স্বল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করেন মৎস্য চাষ। কিন্তু দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রত্যাশিত লাভ আসছিল না।
পরবর্তীতে এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারেন যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে এক মাস মেয়াদী মৎস্য চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং একটি পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। পরিশ্রম মেধা আর সততার সমন্বয়ে তার প্রকল্পে সফলতা আসতে থাকে। মাছ চাষের পাশাপাশি ফল বাগান কলা, আম, মাল্টা, শাক-সবজি ও বস্তায় আদা চাষ করেন।
বর্তমানে তিনি একজন সফল আত্মকর্মী। তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার সর ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে মোঃ সাইবুর রহমানের কথা। তিনি নিজের আত্মকর্মের পাশাপাশি তিনি শতাধিক বেকার যুবক ও যুব নারীকে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছেন। এছাড়াও সামাজিক কার্যক্রম হিসেবে বাল্যবিবাহ, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদরোধে কাজ করে যাচ্ছেন। কর্মসংস্থান সৃজন ও আত্মকর্মসংস্থান গৌরব উজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সফল আতকর্মী হিসেবে মোঃ সাইবুর রহমানকে জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগের শ্রেষ্ঠ আত্মকর্মী ও যুব সংগঠক হিসেবে পুস্কার গ্রহণ করেন।
পেছনের গল্প হিসেবে যাদের অবদানের কথা বলেছেন সাইবুর রহমান তারা হলেন ত্রিশাল উপজেলার নির্বাহী অফিসার জুয়েল আহমেদ, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আবু আক্তার হোসেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান ও জামালপুর জেলার কৃতি সন্তান “সূর্য তোরণ সমাজ সেবা সংস্থা” এর নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী মো: খোরশেদ আলম, ধাপে ধাপে উপজেলা যুব উন্নয়ন থেকে ঋণ নিয়ে কাজ শুরু করে সর্বশেষ ২০২৩ সালে যুব উন্নয়ন থেকে এক লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন।
পরবর্তিতে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়ে ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালানা করেন সাইবুর রহমান। সফল আতকর্মী হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার প্রাপ্ত মোঃ সাইবুর রহমান জানান, লেখাপড়া শেষ করে বেকারত্বের কষাঘাতে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে স্বল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করি মৎস্য চাষ। অভিজ্ঞতা না থাকায়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মৎস্য চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মাছ চাষ শুরু করি।
সাইবুর রহমান বলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুয়েল আহমেদ স্যার আমার খামারের সবসময় খোঁজ খবর রেখেছেন। তিনি আমাকে বিভিন্ন সময় ভালো দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন ফলে আজকের সফলতা জাতীয় পুরস্কার। অপরদিকে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আবু আক্তার হোসেন স্যার আমাকে ঋণ দিয়ে ও যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণ আমার হাতেখড়ি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ খামারটি পরিদর্শন করেন ও মাছের রোগবালায় মুক্ত ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সুপরামর্শ দিয়ে থাকেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান বস্তায় আদা চাষ, ফল বাগান পরিদর্শন করে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করে থাকেন।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আবু আক্তার হোসেন জানান, বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আতকর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের জন্য ঋণ সহয়তা থাকে, যার মাধ্যমে ছোট থেকে বড় পরিসরে আতকর্মী হিসেবে কাজ করার সুবিধা রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুয়েল আহমেদ বলেন, সাইবুর রহমানের কর্মস্থল পরিদর্শন করেছি।
যে বিষয়গুলো সমস্যা মনে হয়েছে সেগুলো সমাধানের জন্য পরামর্শ দিয়েছি। সে অনুযায়ী সে কাজ করার ফল হিসেবে জাতীয় যুব দিবসে ‘সফল আতকর্মী’ হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। সকল যুব ও যুবতীদের উৎসাহ যোগাতে ‘সফল আতকর্মী’ হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া মোঃ সাইবুর রহমানকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় বলেও জানান ইউএনও জুয়েল আহমেদ।