আশরাফুর রহমান ,কালকিনি প্রতিনিধি :
১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশের ধারাবাহিক একটা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তারুণ্যকে স্মার্ট জনশক্তি গড়তে ১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে সরকার।
মাদারীপুরের কালকিনিতে নির্বাচনী জনসভায় এ কথ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । শনিবার দুপুরে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে নির্বচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে এ দলের সৃষ্টি। আর যুদ্ধাপরাধী দল জামাত।
তাদের রাজনীতি করার কি অধিকার রয়েছে। এ সময় তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন এবং মাদারীপুরের তিনটি আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে নৌকার ৩ প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন ও নৌকায় ভোট চান। সরকার প্রধান আরও বলেন, যুব সমাজের জন্য কাজের ব্যবস্থা করেছি। কম্পিউটার ও ডিজিটাল ডিভাইস এগুলোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলদেশ গড়বো, দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম, বাংলাদেশ ১৫ বছরে বদলে গেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সবদিকেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়ন করেছে। এই হলো বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমাদের লক্ষ্য হলো ২০৪১ সাল।
এই ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলবো। পদ্মা সেতুতে কোন দুর্নীতি হয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আবুল হোসেন যখন যোগাযোগ মন্ত্রী। তখন হঠাৎ বিশ্বব্যাংক একটা অভিযোগ নিয়ে আসলো, পদ্মা সেতুর টাকায় দুর্নীতি হয়েছে। তখন পদ্মা সেতু নির্মাণ এই অঞ্চলের মানুষের প্রানের দাবি, দক্ষিনাঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কেউ দুর্নীতি করবে, এটা কখনই বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছিল, আমাদের একটি ব্যাংকের এমডি, সে পদ হারাতে চাচ্ছিল না। বয়স হয়েছে, তারপরও পদ হারাতে চাচ্ছিল না। বসে বসে সেই ব্যক্তিই এই ষড়যন্ত্র করেছিল।
তখন, বিশ্বব্যাংক বললো দুর্নীতি হয়েছে, ঠিক তখনই আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম, এখানে কোন দুর্নীতি হয়নি, তোমরা প্রমান করো। বিশ্বব্যাংক পরে কিন্তু প্রমান করতে পারে নাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দুর্নীতির অভিযোগে কানাডার আদালতে মামলা হয়েছিল। সেই আদালতে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছিল, পদ্মা সেতু নির্মানে কোন দুর্নীতি হয় নাই। আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, এই সেতু করবো নিজের টাকায়। এই ঘোষণা দিয়ে বেশি লোকের সমর্থনই পাইনি। তখন জিদ ধরে বসেছিলাম, নিজের টাকা ছাড়া পদ্মা সেতু করবো না। আল্লাহর রহমতে নিজের টাকায় আজ পদ্মা সেতু করেছি। পদ্মা সেতুর সুফলে দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ খুব অল্পসময়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারে। নৌকা মার্কা জয়যুক্ত হয়েছে বলেই সম্ভব। আওয়ামী লীগ নৌকা মার্কায় আছে বলেই এই উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে ও জেলা পর্যায়ে এমনকি তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, মানুষের যা যা প্রয়োজন।
এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চান বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ।
উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদেও চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, মাদারীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ওবাইদুর রহমান কালু খান, শিবচর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মোল্লা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
মাদারীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি সৈয়দ আবুল বাশার, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ইমরান লতিফ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। কালকিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি সিরাজুল হক মৃধা,ভজতোষ দত্ত, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক লোকমান সরদার, সদস্য শারমিন জাহান হেলেনা, মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি চায়না খানম, যুবলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান হাওলাদার, উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি রেজাউল ফরাজী,পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আবুল বাশার, পৌর যুবলীগের সভাপতি জাপান মোল্লা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শাহিন ফকির, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত হোসেন লিটন। মাদারীপুর সদরের একাংশ, কালকিনি ও ডাসার উপজেলা নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-০৩ সংসদীয় আসন। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮শ’ ৫৬ জন। প্রতিদ্বন্দীতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ বিভিন্ন দলের ৬ প্রার্থী।
এদিকে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে এক নজর দেখতে নেতাকর্মীরা শনিবার সকাল থেকে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে-গেয়ে জনসভায় আসেন মানুষ। বিকেলে সড়ক পথে ছোটবোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে মাদারীপুরে কালকিনিতে আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে জনসভায় যোগ দেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। আওয়ামী লীগ সভাপতির আগমনে সড়ক থেকে জনসভার মাঠ, সবখানেই বর্ণিল সাজ। লোকে লোকারণ্য সমাবেশ। শেখ হাসিনার আগমনে ব্যানার, প্লে কার্ড হাতে বেশি উচ্ছাসিত নারী কর্মী ও নেত্রীরা। সরকারি চাকুরী থেকে শুরু করে সংসদেও নারীদের কথা বলার সুযোগ করে দেয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান আগতরা।
পাশাপাশি জেলায় মেডিকেল কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি এলাকাবাসীর। আর ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত ফোর লেনের দাবিও জানান দলীয় নেতাকর্মীরা। এই জনসভার মাধ্যমে আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বাড়বে ভোটার উপস্থিতি। আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনার প্রত্যয় নেতাকর্মীদের।