ডেস্ক রিপোর্ট
কৃষকদের সারা বছর সেচ সুবিধা দিতে এখন আর কোন নির্দিষ্ট মৌসুম রাখছে না সরকার। আগে ডিসেম্বর থেকে মে মাস সেচ মৌসুম বিবেচনা করা হলেও নতুন সেচ নীতিতে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। কৃষকদের সারা বছর সেচ দেওয়ার সুবিধার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আর এখন থেকে আবেদনকারী কৃষকরা সারা বছরই পাবেন সেচ সংযোগ। নীতিমালা অনুযায়ী, ওভারলোডের ওজুহাতে সেচ সংযোগ বন্ধ রাখা যাবে না।
সেচ নীতিমালা ২০২৪’–এ বলা হয়েছে, আউশ, আমন ও বোরো ধান উৎপাদনের পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, তেল জাতীয় ফসল, হলুদ, আদা, শাক-সবজি, মৌসুমি ফুল-ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে সকল ধরণের কৃষিকাজ সেচ কাজের আওতাভুক্ত হবে। এখন থেকে বৈদ্যুতিক সেচ কাজের জন্য আলাদাভাবে কোনো মৌসুম থাকবে না। স্থানীয় এলাকার প্রয়োজন সাপেক্ষে এখন থেকে সারা বছর বৈদ্যুতিক সেচকাজ পরিচালনা করতে পারবে। তাই বছরব্যাপী সেচ সংযোগ আবেদনকারীদের দ্রুত সংযোগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে নীতিমালায়।
আরও পড়ুন:দুই দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন
আগে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত সেচ মৌসুম বিবেচনা করা হতো। এ সময়ের বাইরে আবেদন করলে পাওয়া যেত না সেচ সংযোগ। এটিকে সাধারণত বোরো মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে দেখা যায় সারা বছরই কোনও কোনও এলাকায় সেচের প্রয়োজন হয়। তখন সংযোগের আবেদন করলে তা পাওয়া যেতো না।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ও বিধি-বিধানের আলোকে প্রদত্ত উপজেলা সেচ কমিটির ছাড়পত্র এবং জমির মালিকানা নিশ্চিত হয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রদত্ত নির্দেশনার আলোকে দ্রুত নতুন সেচ সংযোগ প্রদান করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেচে সরকার ভর্তুকিমূল্যে বিদ্যুৎ দিয়ে থাকে। এই বিদ্যুৎ যাতে অন্যকাজে ব্যবহার না হয় এ জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেচের জন্য যত্রতত্র পানির পাম্প বসানোর পর পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এজন্য পাম্প বসানোর আগে সেচ কমিটির অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সেচ কমিটির অনুমোদন ছাড়া বোরিং স্থান পরিবর্তন করা হলে নতুন সংযোগ প্রদান করা যাবে না এবং বিদ্যমান সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। কোনও কারণে সাময়িকভাবে গ্রাহকের সেচ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে কেবলমাত্র সংযোগ বিচ্ছিন্নের অব্যবহিত পরবর্তী বছরে পুনঃসংযোগের সময় নতুন করে উপজেলা সেচ কমিটির ছাড়পত্রের প্রয়োজন হবে না।
সেচ নীতিমালায় বলা হয়েছে, ওভারলোডের কারণে কোন সেচ সংযোগ বন্ধ রাখতে হলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে এবং দ্রুত ওভারলোড নিরসন করে সেচ সংযোগ প্রদান করতে হবে। এ ব্যাপারে শিথিলতা প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক/শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নতুন সেচ গ্রাহকের লাইন নির্মাণসহ বিদ্যুৎ সরবরাহ সঠিক সময়ে নিশ্চিত করার জন্য ওভারলোডেড লাইন, উপকেন্দ্রসমূহের আপগ্রেডেশন ও ট্রান্সফরমারসহ মেরামত কার্যক্রম সম্পন্নের লক্ষ্যে (লোড বিভাজন, ফিভার বিভাজন, ১১ কেডি লাইনে পাওয়ার ফ্যাক্টর উন্নয়নে ক্যাপাসিটর স্থাপন ও ভোল্টেজ উন্নয়নে লাইন রেগুলেটর স্থাপন ইত্যাদি) সংশ্লিষ্ট জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী (এসওডি) গণের সহায়তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা নিশ্চিত করতে হবে।
সেচ সংযোগপ্রত্যাশী যে গ্রাহক উপজেলা সেচ কমিটির ছাড়পত্র আবেদনের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে জমা দিবেন তিনি নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, কোনও কোনও এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে লোড বৃদ্ধি তথা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হর্স পাওয়ারের মোটরের প্রয়োজন দেখা দিলে সাব-মারসিবল পাম্প স্থাপন করতে হতে পারে; এ ক্ষেত্রে সেচ পাম্পটি অবশ্যই কমান্ডিং এরিয়ার মধ্যে এবং ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা অনুসরণের শর্ত মেনে চলতে হবে।
সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, এখন সারাবছরই নানা ফল আর ফসলের আবাদ হয়। এসব আবাদে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। কৃষক যাতে সমস্যায় না পড়ে সেজন্যে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।