মোঃ সোহেল মিয়া স্টাফরিপোর্টার
কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে চলতি মৌসুমে বোরো ধান কাটা চলছে পুরোদমে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় হাওরে শতকরা ৪৫ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়েছে।
কৃষকের সুবিধার্থে জেলায় মোট ৭০০টি কম্বাইন হার্ভেস্টার মেশিন রাখা হয়েছে। ৭০ ভাগ ভর্তুকি এই ধান কাটার মেশিনের পেছনে দেয়া হয়েছে। এই মেশিনের ফলে হাওরে ধান কাটা থেকে শুরু করে মাড়াই, ঝাড়াই এমনকি বস্তাবন্দীর সুবিধা কৃষকের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে। এর ফলে স্বল্প খরচে কৃষকরা সময় বাঁচিয়ে সহজেই ঘরে ধান তুলতে পারছেন। এতে কৃষকদের খরচ ও পরিশ্রম দুটোই অনেকাংশে বেঁচে গেছে বলেও কর্তৃপক্ষ দাবি করেন।
জেলার বৃহৎ জোয়ানশাহী হাওরের কৃষক মিয়া হোসেন, আ:খালেক শহিদুল ও কামরুল সহ অনেকের সাথে কথা বললে তারা জানান চলতি মৌসুমে ভালো ফলনের পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুবিধার কথা। ধানের বাজারদর ভালো পেয়ে, হাওরে ধান কাটার মেশিন পেয়ে, তুলনামূলকভাবে শ্রমিকের ভোগান্তি কমে আসার কারণে স্থানীয় কৃষকরা উৎফুল্ল। তবে সাধারণ শ্রমিকদের মনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, যেখানে একদিনে হাজার শ্রমিক কাজ করতে পারত সেখানে দুটো মেশিনেই তা সহজে সেরে নিচ্ছে। শ্রমিকদের হাহাকারের এমন চিত্র সরেজমিনে দেখা গেছে। বিশেষ করে চলতি মৌসুমে উত্তরবঙ্গের শ্রমিকদের তেমন একটা দেখা মেলেনি এই বৃহৎ হাওরে। যেখানে এক সময়ে হাওরের বাথানে জিরাতিদের সাথে এই মৌসুমে হাজার হাজার অস্থায়ী শ্রমিকদের থাকা খাওয়া হতো। এখন আর তেমনটি নেই বললেই চলে। বহিরাগত শ্রমিকের সংখ্যা এখানে এখন কমে গেছে। তাদের চাহিদা তুলনামূলক কমে গেছে বলেও তারা জানান।
স্থানীয় সুশীল সমাজের বক্তব্য ও যন্ত্র নিঃসন্দেহে কৃষকদের উপকার বয়ে এনেছে। তবে কপাল পুড়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমিকদের। এদের বিকল্প কাজের সুযোগ তৈরি করে দেয়া হলে হাহাকার কমে আসবে। দেশে বর্তমানে মাটি কাটা থেকে শুরু করে ধানকাটা এমনকি কৃষির বহু প্রকারের কাজ মেশিনেই হচ্ছে, তাই দিনমজুরের হাহাকার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই মৌসুমে অধিক রোজগারের আশায় বুক যেখানে বসে থাকত আজ আশায় অনেকটাই গুড়েবালি।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস ছাত্তার বলেন, চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে এক লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। পুরো জেলাতে ৭০০ কম্বাইন হার্ভেস্টার মেশিন নিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ৩০ ভাগ জমির ধান কর্তন হয়েছে। পুরো জেলাতে ১২ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা প্রকাশ করেন তিনি। বর্তমান এভারেজ সাড়ে ১১ শ’ টাকা দরে ১৩৮ কোটি টাকার ধান উৎপাদনের আশা করেন তিনি।