মোঃ মজিবর রহমান শেখ
সপ্তাহের ব্যবধানে ফুলকপির বাজার দরে ধস নামায় বিপাকে চাষিরা। প্রতিকেজিতে কমেছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিনই দাম কমতে থাকায় কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাচ্ছেন না।
এতে ক্রেতা খুশি হলেও লোকসান শঙ্কায় আছেন চাষিরা। মৌসুমের শুরুর দিকে ফুলকপির বাজারে চড়া দাম থাকলেও এখন তা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকদের খরচের টাকা তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের সবজি খ্যাত এলাকা ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় ঘুরে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই কমছে সবজির দাম। এক্ষেত্রে খেত থেকে পাইকাড়রা সস্তায় কিনে বেশী দামে বিক্রি করলেও উৎপাদন খরচও উঠছে না কৃষকের ঘরে। অতি কষ্টে উৎপাদন করা এ সব সবজির দাম কৃষকরা ভোগ করতে না পারলেও কয়েক হাত বদলের মাধ্যমে এই সবজি সাধারণ মানুষকে কিনতে হচ্ছে তিন গুণ দামে।
কৃষকরা জানান বৈরী আবহাওয়ায় আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করে বিপাকে পড়েছেন তারা। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় খরচ এবার দিগুণ হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। এদিকে গত দুই চার দিন আগেও প্রতি কেজি ফুলকপি ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এভাবে দাম কমায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন চাষিরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রানীসংকৈল উপজেলার সবকটি ইউনিয়নেই আগাম জাতের ফুলকপি চাষ হয়েছে। বিশেষ করে ধর্মগড় ও কাশিপুর এলাকায় বেশি চাষ হয়েছে। গেল বছর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর অধিক পরিমাণে ফুলকপি চাষ হয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
ফুলকপি ব্যবসায়ী রানা বলেন, ঢাকা শহরে বর্তমানে ফুলকপির চাহিদা না থাকায় দাম কমে গেছে। গত কয়েকদিনে যে গাড়িগুলো পাঠিয়েছিলাম তাতে আমরা পুঁজি হারিয়েছি। যার ফলে এখন আগের দামে ফুলকপি কিনতে ভয় পাচ্ছি। ধর্মগড় মন্ডলপাড়া এলাকার কৃষক হোসেন জানান, তারা কষ্টে উৎপাদিত কাঁচা শাক-সবজির মূল্য পাচ্ছেন না। বরং তাদের কাছে থেকে কিনে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা ভালো লাভ করছেন। আর এই ফুলকপি শহরে বা আশপাশের হাট-বাজারে প্রায় দ্বিগুণমূল্যে খুচরা বিক্রি চলছে। দুই তিন দিন আগেও আমরা ৮০ টাকা কেজিতে ফুলকপি বিক্রি করেছি।
কিন্তু ব্যবসায়ীরা এখন বলছেন প্রতি কেজি ৪০ টাকার কমে। কাশিপুর এলাকার কৃষক ইসলাম জানান, এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। প্রথম দিকে ভালো দাম পেলেও এখন মজুরি খরচও উঠছে না। কপি এখন ৪০ কেজিতেও বিক্রি হচ্ছেনা। ‘খরচের তুলনায় পানির দরে ফুলকপি বিক্রি করতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচ তো দূরে থাক, মাঠ থেকে তুলে হাটে নিয়ে আসল খরচও উঠছে না।’ আরেক ফুলকপি চাষি আলী বলেন, আগাম ফুলকপির জন্য আবহাওয়া খুব খারাপ ছিল। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও রোদ থাকায় আগেই অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এ বছর একর প্রতি দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ৫০ হাজার টাকাও উঠবেনা।
রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, রাণীশংকৈল উপজেলায় এবার আগাম ফুলকপি প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। ‘হঠাৎ ফুলকপির দাম কমায় চাষিরা লোকসানে এমন প্রশ্নে’ তিনি বলেন, বাজারের বিষয়টা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেখেনা, এটি দেখেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। আমাদের কাজ হল উৎপাদন বাড়ানো ও রোগবালাই পোকামাকড় বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া।
কৃষকরা কঠিন পরিশ্রম করে এসব সবজি উৎপাদন করে থাকেন। বাজার কমে গেলে তারা সবজি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। তাই এ বিষয়টি নিয়ে বাজার মনিটরিংকারীদের সাথে কথা বলবো। যাতে করে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পায়। জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও জেলা সহকারী পরিচালক শেখ সাদী বলেন, কাঁচামালের চাহিদা কমে গেলে বাজার কমে যায়। এ অবস্থায় আমাদের করার কিছু নাই।