আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানে মাঙ্কিপক্স (এমপক্স বা মাঙ্কিপক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের পদক্ষেপ হিসাবে হটলাইন চালু করেছে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আফ্রিকা থেকে ইউরোপে ছড়ানোর পর দুদিন আগে পাকিস্তানে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়।
এই সংবাদের পর জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে হটলাইন চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া রোগের সংক্রমণ নিয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরের আগমনি চ্যানেলে সার্বক্ষণিক একটি চিকিৎসক দল নিয়োজিত রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, কারও মধ্যে মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুততম সময়ে সন্দেহভাজনদের ১৬২৬৩ এবং ১০৬৫৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। এতে আরও বলা হয়, এমপক্স (মাঙ্কিপক্স) ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ। রোগের লক্ষণ হলো জ্বর, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, লিম্ফনোড ফুলে যাওয়া, দুর্বলতা, গলাব্যথা, কাশি এবং ত্বকে পানিভর্তি ফোসকা। তবে এমপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গবিহীন থাকতে পারেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফুসকুড়ি হয়, যা হাত, পা, বুক, মুখ, লিঙ্গ, অ-কোষ, ল্যাবিয়া, যোনি, মলদ্বারসহ যৌনাঙ্গের কাছাকাছি হতে পারে। ফুসকুড়ি প্রাথমিকভাবে পানিভর্তি ফোসকার মতো দেখতে হয়। ফোসকায় ব্যথা ও চুলকানি হয়। এই রোগের লক্ষণগুলো জীবাণু সংক্রমণের সাধারণত ৩ থেকে ১৭ দিনের মধ্যে শুরু হয় এবং সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। তবে রোগীর দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা থাকলে তা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি যেকোনো ধরনের সংস্পর্শ বা যৌনমিলনের মাধ্যমে, ব্যবহার করা কাপড়, সুই বা অন্যান্য জিনিসপত্রের মাধ্যমে, আক্রান্ত প্রাণী শিকার করা, কাটা বা রান্না করার সময়, কম তাপমাত্রায় আক্রান্ত প্রাণীর রান্না করা মাংস খেলে এমনকি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের থেকে তাদের অনাগত শিশুর কাছেও ভাইরাসটি যেতে পারে। এমপক্স প্রাথমিকভাবে পশুদের মধ্যেই দেখা যায়। তবে ২০২২ সাল থেকে ব্যাপকভাবে মানুষের মধ্যেও এই রোগটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। এই রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। সাধারণত উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা, পরিচর্যা, পুষ্টিকর খাবার এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ পেলেই রোগী দ্রুত ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বর, মাথাব্যথা এবং পেশি ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করে আইসোলেশনে রেখে ক্ষত না শুকানো পর্যন্ত চিকিৎসা করা গেলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা কমে যাবে। কোনো কোনো দেশে এবং যাদের ঝুঁকি বেশি তাদের গুটিবসন্তের টিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এই টিকা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান করে। সঠিক চিকিৎসা না হলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত, বিকৃত দাগ, সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, কর্নিয়াল ইনফেকশন, অন্ধত্ব, সেপটিসেমিয়া, এনকেফালাইটিস ইত্যাদি হতে পারে। আফ্রিকার দেশ কঙ্গোয় প্রথম শনাক্ত হয়েছিল মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স। এই মহাদেশের বুরুন্ডি, উগান্ডা, রুয়ান্ডা, কেনিয়া ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে ইউরোপের সুইডেন ও এশিয়ার পাকিস্তানেও। ‘মাঙ্কিপক্স’ রোগের সংক্রমণ নিয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, মাঙ্কিপক্স বিষয়ে এয়ারলাইনসগুলোকে সতর্ক থাকতে। মাঙ্কিপক্স লক্ষণযুক্ত কোনো যাত্রী থাকলে দ্রুত তা স্বাস্থ্য বিভাগকে জানাতে হবে। এ ছাড়া, বাংলাদেশে আসার ২১ দিনের মধ্যে যাত্রীদের মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলো দেখা দিলে ১০৬৫৫ নম্বরে কল করার আহ্বান করা হয়েছে।