ওসমান গনি, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রারের কার্যালয় পরিদর্শন করেছে মহিলা পরিষদ মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখা। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় শহরের পৌর মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় রেজিস্ট্রারের প্রধান কার্যালয়টিতে পরিদর্শনে আসেন মহিলা পরিষদের সদস্যরা। এ সময় হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন কার্যক্রম প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ জেলার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিষদের নেতৃবৃন্দকে অবগত করেন হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার জিতু রায়।
পরিদর্শন কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন মহিলা পরিষদের মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এড. নাছিমা আক্তার, সহ-সভাপতি হামিদা খাতুন, সহ-সভাপতি শাহানারা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক সালমা আক্তার, প্রশিক্ষণ সম্পাদক রাজকুমারী মুখার্জী, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাসুদা বেগম, আন্দোলন সম্পাদক ফরিদা পারভীন, কার্যকরী সদস্য লুবনা তালুকদার।
পরিদর্শন কার্যক্রম শেষে মহিলা পরিষদের মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এড. নাছিমা আক্তার জানান, ‘বিবাহ’ জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সনাতন বিশ্বাস মতে, বিবাহ হচ্ছে স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে একটি শক্তিশালী ও পবিত্র বন্ধন।
হিন্দু বিবাহ কোনো চুক্তি নয়; হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আদিকাল থেকেই শাস্ত্র মোতাবেক প্রচলিত প্রথা ও রীতি অনুযায়ী বিবাহ সুসম্পন্ন হয়ে আসছে। ফলে অতীতে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনেরও কোন বিধান ছিল না। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে ও সমাজের চাহিদার তাগিদে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের, বিশেষ করে নারীদের শাস্ত্রীয় বিবাহের দালিলিক প্রমাণ সুরক্ষার লক্ষ্যে ২০১২ সালে বাংলাদেশে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন, ২০১২ প্রণীত হয়।
হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন, ২০১২ এর ৪ ধারা অনুসারে, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনের উদ্দেশ্যে, সরকার হিন্দু বিবাহের দালিলিক প্রমাণ সুরক্ষার উদ্দেশ্যে সিটি কর্পোরেশন এবং সিটি কর্পোরেশন বহির্ভূত এলাকার ক্ষেত্রে প্রতিটি উপজেলায় সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত হিন্দু বিবাহ নিবন্ধকের নিকট বিবাহ নিবন্ধন করা যাবে। আইনে বলা আছে, উক্ত হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিবাহ সনদ (Marriage Certificate) প্রদান করতে পারবেন।
ভিসা, পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন ইত্যাদি করতে গেলে বিবাহের আইনি প্রমাণের জন্য ম্যারেজ সার্টিফিকেটের প্রয়োজন দেখা দেয়। তাই ম্যারেজ নিবন্ধিত হোক কিংবা না হোক, হিন্দু ম্যারেজ সার্টিফিকেট পেতে কোনো আইনি বাধা নেই। বাংলাদেশে বসবাসরত একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হিন্দু বিবাহ নিবন্ধকের নিকট থেকে ম্যারেজ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারেন। ম্যারেজ সার্টিফিকেট হিন্দু বিবাহের আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত করে।
সহ-সভাপতি হামিদা খাতুন জানান, নারীদের অধিকার সংরক্ষণে জন্য হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার জন্য দীর্ঘদিন যাবত মহিলা পরিষদ আন্দোলন করে যাচ্ছে। হিন্দু বিবাহের আইনগত বৈধতা না থাকার কারণে বিভিন্ন সময়ে নারীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি তাদেরকে সামাজিক বিভিন্ন নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে। তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আমরা মুন্সীগঞ্জ জেলায় হিন্দু বিবাহের আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত করতে রেজিস্ট্রার জিতু রায়ের কার্যালয় পরিদর্শন করলাম। নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে আমরা একত্রিতভাবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করব।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার জিতু রায় জানান, পূর্বের তুলনায় বর্তমানে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এই সচেতনতা লক্ষ্য করছি। হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন সম্পর্কে সচেতনতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিবাহ নিবন্ধনের জন্য অভিভাবকদের পাশাপাশি তরুণদের সচেতন হতে হবে। বিবাহ নিবন্ধনের সেবা প্রদানের জন্য আমার কার্যালয় সপ্তাহের সাত দিন খোলা থাকে। নিবন্ধন করাতে ইচ্ছুক যে কেউ যোগাযোগ করতে পারে নিম্নের ঠিকানায়
জিতু রায়
হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার
২১৩, পৌর মার্কেটের ২য় তলা
(দর্পনা কমিউনিটি সেন্টার এর বিপরীত পাশে)