সক্ষমতা বাড়াতে নিজস্ব বিগ ডেটা সেন্টার ও ওয়্যারহাউজ তৈরি করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এতে অনুদান দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ান উন্নয়ন সংস্থা কোইকা। এটি তৈরি হলে দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে এটি জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা (এনএসও) হিসেবে বিবিএসের জন্য একটি আধুনিক এবং কার্যকর কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।
মঙ্গলবার এ সম্পর্কিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস সম্মেলন কক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার উদ্দিন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হামিদুল হক এবং কোইকার বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর তায়োকিং কিম। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিবিএএসপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কবির উদ্দিন আহমেদ।
কবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের (বিবিএস) আওতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব স্ট্যাটিসটিকস সার্ভিস বেজড অন প্ল্যাটফর্ম প্রকল্পের মাধ্যমে একটি আধুনিক ডেটা ওয়্যারহাউস প্রতিষ্ঠা করছে। যা দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা (এনএসও) হিসেবে বিবিএসের জন্য একটি আধুনিক এবং কার্যকর কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিসংখ্যান আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, দেশের পরিসংখ্যানিক কার্যক্রমকে আরও সুশৃঙ্খল, সময়োপযোগী এবং ডেটা-চালিত করার ক্ষেত্রে এই ডেটা ওয়্যারহাউস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় তথ্য ভান্ডার তৈরি করা হবে, যা বিভিন্ন উৎস থেকে আসা বৃহৎ পরিমাণ পরিসংখ্যানিক ডেটা সংরক্ষণ, পরিচালনা এবং বিশ্লেষণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এতে দেশের পরিসংখ্যান প্রণয়ন ব্যবস্থা আরও কার্যকর ও দক্ষ হবে এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া শক্তিশালী হবে। তথ্য ভান্ডারটি ডেটা সংরক্ষণ, স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন, এক্সেসিবিলিটি, আর্কাইভ, সিকিউরিটি, প্রক্রিয়াকরণ, টাইম সিরিজ ডেটা প্রস্তুতি, বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন তৈরি এবং পরিসংখ্যান ব্যবস্থার কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়া বিগ ডেটা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ডেটা একীকরণ, এনক্রিপশন, ভিজ্যুয়ালাইজেশন, রিয়েল-টাইম প্রক্রিয়াকরণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক বিশ্লেষণ এবং ডেটা ব্যবস্থাপনা ও বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও অবকাঠামো প্রস্তুত করা হবে। ফলে বিগ ডেটা এবং বিজনেস ইন্টেলিজেন্স (বিআই) ব্যবহার করে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে বিচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত সার্ভারভিত্তিক সিস্টেমগুলোকে সমন্বিত করা হবে, সার্ভার রুমের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে, সার্ভার এবং স্টোরেজ ব্যবস্থাপনায় সুশৃঙ্খলা আনয়ন করা হবে। ফলে সার্ভার ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম উন্নয়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, ডেটা ওয়্যারহাউস প্রতিষ্ঠার ফলে একটি কেন্দ্রীয় স্থানে একই ফরম্যাটে সব ডেটা সংরক্ষণ করা যাবে। এতে ডেটা অ্যাক্সেস সহজ হবে এবং সময় ও সম্পদের সাশ্রয় হবে। এছাড়াও এই প্রকল্পের মাধ্যমে পরিসংখ্যান সেবা আধুনিকীকরণের জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নকরণ, আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়নকরণ, নতুন সিস্টেম এবং প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে বিবিএস জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কোরিয়া আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (কইকা) কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যগুলো সম্পর্কে সেমিনারে বলা হয়েছে, একটি সমন্বিত ডেটা ওয়্যারহাউস স্থাপন, বিদ্যমান সার্ভার রুমের সংস্কার এবং ছোট পরিসরে বিগ ডেটা প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করা এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এ ছাড়া স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ১৪৪ কোটি ৭ লাখ টাকা।এরমধ্যে সরকারি ফান্ড থেকে ৩৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং কইকার অনুদান ১০৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এই প্রকল্প কইকার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা বাংলাদেশ সরকারের টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। প্রকল্পে কার্যক্রম সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, তথ্যসমৃদ্ধ ও নির্ভুল হবে।