নিজস্ব প্রতিবেদক
শীত মানেই বাংলাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন। কিন্তু এই ধর্মকেই অস্ত্র বানিয়ে একদল মাদ্রাসা মালিকেরা চালাচ্ছে তাদের নোংরা রাজনীতি এবং ধর্ম ব্যবসায়। সারা দেশে মাদ্রাসার নামে গড়ে ওঠা একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেগুলোতে নেই শিক্ষার ছিটেফোটাও, তারা মানে না সরকারী বিধি নিষেধ এমন সব প্রতিষ্ঠান গুলো শুধুমাত্র ধর্মের নামে ভয় ভীতি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিচ্ছে। বিনিময়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। বিপরীত দিকে বছর শেষে শিক্ষার্থীরা শিখছে না এক বাক্যেরও পড়া। এসকল ব্যক্তি মালিকানাধীন মাদ্রাসা মালিকদের নতুন এক প্রতারণতার নাম ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল।
সাধারণত প্রতিটি শহরের স্থানীয় অর্থ-বিত্তশালি এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সিদ্ধান্তে এবং অর্থায়নে প্রতিবছর নিজ নিজ এলাকার ধর্মপ্রান মুসলিমদের জন্য ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হলেও বর্তমানে এটিকে একটি প্রতিযোগীতামূলক আয়োজনে রূপান্তর করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষরা।মূলত মাদ্রাসার মালিকেরা ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে থাকে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার জন্যে। কিন্তু সেটা করে থাকে তারা ধর্মের আড়ালে। যার ফলে সাধারণ মানুষকে খুব সহজেই বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের প্রচারণামূলক ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের সম্পূর্ণ খরচের কয়েক গুন টাকা তারা হাতিয়ে নেয় সমাজের বিশিষ্ট্য ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি স্থানীয় দোকান-পাট ও ছোট-খাটো অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে।ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাস ব্যাপি চলে তাদের প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি পদের বানিজ্য। যে যত বেশি টাকা দিবে তাকেই দেয়া হবে উক্ত আয়োজনের বড় পদ।
এই বিষয়ে ক্ষিপ্ত এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, “মাদ্রাসার লোকেরা কোনো প্রকার প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়াই দৈনন্দিন চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে সেখানে স্টেজ তৈরী করে বসে পড়ে দুই তিন দিনের জন্য যেটা অমানবিক এবং হয়রানিমূলক। ধর্মীয় বিষয় হওয়াতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হলেও চুপ করে মেনে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।”
অন্য আরেকজন ব্যক্তি পরিচয় গোপন রাখার দাবিতে বলেন, “তারা প্রতিষ্ঠানের প্রচার চালায় একদিকে। অন্যদিকে সম্পূর্ণ খরচের টাকা তোলে মহল্লার মানুষের কাছ থেকে। তার উপরে ওয়াজের শেষের দিকে আল্লাহর নামে ব্লেকমেইল করে চাদা তোলে লাখ লাখ টাকা। তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার টাকা আমরা কেনো দিবো। তারা তো কোনো এতিমখানা চালায় না। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তির নামে হাজার হাজার টাকা নেয়, হাজার হাজার টাকা মাসিক বেতন নেয়। তারা যদি বিনা পয়সায় ধর্মীয় শিক্ষা দিতো তাহলে আমরা তাদেরকে নির্দ্বিধায় সামর্থ অনুযায়ী টাকা দিয়ে সহযোগীতা করতাম।”
বর্তমান যুগের অধিকাংশ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানেরই নিবন্ধন নেই বা নিবন্ধনের মেয়াদ নেই। তারা সরকারী নির্ধারণকৃত নিয়ম নীতি মেনে চলে না। প্রতিষ্ঠানে নেই জাতীয় পতাকা, এসেমব্লি হয় না, সরকারি ছুটির দিনে মাদ্রাসা খোলা থাকে। পরিচালকদের সরকারী পর্যায়ে নেই কোনো সার্টিফিকেট। নেই দক্ষ শিক্ষক শিক্ষিকা। একপ্রকার ধর্মের নামে হুমকী দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসায় বছরের পর বছর। অন্যদিকে মাদ্রাসায় পড়ুয়া কোমল শিক্ষার্থীরা শিখছে না লেখাপড়া। তিলে তিলে তাদেরকে মেধাশূন্য করে ফেলা হচ্ছে। যার ফলে এদের ভবিষ্যত হুমকীর মুখে। অধিকাংশ মাদ্রাসা গুলোতেই শিক্ষার্থীদেরকে কাজের ছেলে বা কাজের মেয়েদের মত রাখা হয়। ঝাড়ু দেয়া থেকে শুরু করে থালাবাটি ধোয়ানো, মাদ্রাসা এবং আল্লাহর নামে এলাকার দোকানপাট ও বাড়ি গুলোতে টাকা আনতে পাঠানোর কাজে ব্যাবহার করা হচ্ছে।
সাধারণ মানুষ সরকারের উদ্দেশ্যে বলছে, “আমরা মাদ্রাসা গুলোর উপরে নজরদারি এবং অসাধু পরিচালক ও প্রতিষ্ঠান গুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।”