মোঃ রিপন শেখ ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
শুধু লেবু বিক্রি করে দৈনিক ১০০০ টাকা আয় করেন ভাঙ্গার চুমুরদি ইউনিয়নের পূর্ব সদরদী গ্রামের আইয়ুব আলী মাতুব্বর। তিনি তার বাড়ির কাছাকাছি চান্দের কান্দি গ্রামের বিলের মধ্যে ১৪ বিঘা খামারে শুধু লেবু নয়, চাষ করেন লাউ ,পেঁপে, বেগুন সিম সহ অন্যান্য সবজি। তার এই বিশাল খামারে রয়েছে চারটি বড় বড় পুকুর। এসব পুকুরে তিনি রুই, কাতল, মৃগেল, তেলাপিয়া, গ্রাস কাপ সহ বিভিন্ন মাছের চাষ করে থাকেন। বিগত পাঁচ বছর যাবত তিনি তার খামার অনেক যত্ন করে গড়ে তুলেছেন। তিনি আগে থাকতেন সৌদি আরবে। তিনি জানান, আমি বাংলাভিশনের “শ্যামল বাংলা” এবং চ্যানেল আইয়ের “মাটি ও মানুষ” অনুষ্ঠান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আমার স্বপ্ন ছিল দেশে ফিরে আমি একটি আদর্শ খামার তৈরি করব। আজ আমার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে । তিনি বলেন ,পূর্বে এক বিঘা জমিতে আমি ধানের চাষ করে পাঁচ থেকে ছয় মণ ধান পেতাম। অনেক সময় সে ধান নষ্ট হয়ে যেত দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতার কারণে। তখন আমি হতাশ হয়ে পড়ি। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ধানক্ষেতের পাশাপাশি পুকুরের মাছ চাষ পদ্ধতির কথা শুনে উৎসাহ বোধ করি। এতে একদিকে যেমন ধানের উৎপাদন ঠিক থাকে, অন্যদিকে মাছ চাষেরও কোন সমস্যা হয় না।এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেবলা চক্রবর্তীকে কৃতজ্ঞতা ও
ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন , ভাঙ্গা উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে আমাকে মাছের পোনা ও মাছের খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছে। সব সময় তারা আমার খামারের খবর নেয়। মাছ চাষের পাশাপাশি একসময়ের সৌদি প্রবাসী আইয়ুব মাতুব্বর লেবু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি বলেন,লেবু গাছের যত্ন নিতে হয়। আমি টিএসপি সার ব্যবহার করি। ভালো মাটি ব্যবহার করি। এ বাগানে অন্য কোন গাছ লাগানোর সুযোগ নেই। জায়গাটায় যাহাতে সূর্যের আলো সরাসরি পৌঁছায় তার ব্যবস্থা করা অতি জরুরী। তিনি বলেন,আমি চারটি পুকুরের চারপাশে লেবু গাছ লাগিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেছি। এই নিরাপত্তা বেষ্টনী আমার পুকুরগুলোকে সুরক্ষিত রাখে ।অন্যদিকে লেবু গাছে বারো মাস এলাচি লেবু ধরে । প্রতিদিন রসালো এলাচি লেবু বিক্রি করে ১ হাজার টাকার বেশি আয় করি। এছাড়া লাউ ,সীম, কুমড়া ও বেগুন বিক্রি করে আমি সঞ্চয় করি। অন্যদিকে, প্রতিবছর মাছ বিক্রি করে আমি কয়েক লক্ষ টাকা আয় করি। সাথে অগভীর জমিতে ধানের চাষ করি।
আদর্শ কৃষক আইয়ুব মাতুব্বর বলেন, চাকুরীর আশায় না থেকে বেকারদের উচিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হওয়া। এতে দেশ ও জাতির উপকার হবে। নিজের সচ্ছলতা তো আসবেই।
আইয়ুব মাতব্বর জানান, সরকারি সহযোগিতা পেলে তিনি মাছের ডিম থেকে রেনু তৈরি করে বিক্রি করতে চান। একটি ভালো মানের হ্যাচারীর স্বপ্ন দেখেন তিনি।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জীবাংশু দাস বলেন, আইয়ুব মাতুব্বর একজন আদর্শ কৃষক। তার মত সবাই যদি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করে ,তাহলে আমাদের দেশ অনেক উন্নত হবে। পাশাপাশি বেকারত্ব ঘুচবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেবলা চক্রবর্তী বলেন, চুমুরদি ইউনিয়নের চান্দের কান্দি গ্রামে আইউব মাতুব্বর নিজ উদ্যোগে ধান ক্ষেতে মাছের চাষ শুরু করেছিলেন। এতে যেমন ধান চাষ হয়, আবার মাছের চাষের কোন সমস্যা হয় না। শুষ্ক মৌসুমে পানি যখন কমে যায়, তখন মাছগুলো ধানক্ষেত থেকে কাছাকাছি পুকুরের গভীর পানিতে গিয়ে থাকতে পারে। কোন সমস্যা হয় না। আমরা তাকে মাছ সংরক্ষণের জন্য নেটের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মাছের জন্য ভাসমান খাবার দিয়েছি। মাছের কোন অসুখ-বিসুখ হলে ঔষধের ব্যবস্থা ও পরামর্শ দিচ্ছি। অর্থাৎ আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি এবং এখনো করছি। আশা করি তার স্বপ্ন পূরণ হবে।