আমিনুল ইসলাম,ফুলবাড়ী প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সংবাদ সম্মেলনের নামে খ্রীষ্টিয়ান ধর্মাবলম্বীর সাঁওতালদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে বাংলাদেশ খ্রীষ্টিয়ান এসোসিয়েশনের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনসহ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৯ জুন) সকাল ১০ টায় উপজেলা পরিষদ রোডস্থ ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের সম্মুখে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন খ্রীষ্টিয়ান ধর্মাবলম্বীর বিভিন্ন বয়সী সাঁওতাল নারী-পুরুষ।
মানবন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন উপজেলা শাখা বাংলাদেশ খ্রীষ্টিয়ান এসোসিয়েশনের সভাপতি সভাপতি সলোমন মারন্ডী, সাধারণ সম্পাদক সোম কিস্কু, সহ-সাধারণ সম্পাদক যহন টুডুু, সদস্য জুসিপিনা মার্ডী, ফ্রান্সিলিয়া মুর্মু, উপদেষ্টা ফাদার জসিম মুর্মু, কমল কিস্কু, রিন্টু সরেন, কমল হেম্বম প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে বেলা ১১ টায় প্রেসক্লাব সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খ্রীষ্টিয়ান ধর্মাবলম্বীর সাঁওতালদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কমল কিস্কু। এসময় অর্ধশত সাঁওতাল নারী পুরুষসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে কমল কিস্কু বলেন, গত ৭ জুন সারি ধর্ম সংগঠনের ফুলবাড়ী প্রেসক্লাব সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের নামে খ্রীষ্টিয়ান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে খ্রীষ্টিয়ান সম্প্রদায় ও খ্রীষ্টিয়ান এসোসিয়েশন প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে।
সে সংবাদ সম্মেলনে পাঠকৃত বক্তব্য সাঁওতালদের নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনগড়া কাল্পনিক ঘটনার কথা। শুধুমাত্র সাঁওতাদেরকে সামাজিকভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দ্যেশে করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনটি। সেখানে বলা হয়েছিল, ‘সাঁওতাল জাতি যদি খ্রীষ্টিয়ান ধর্ম পালন বা গ্রহণ করে তাহলে তাদের জাতীয়তা বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং তারা সাঁওতালদের কোনপ্রকার সংস্কৃতি, কৃষ্টিসহ কিছু পালন করতে পারবে না। যারা সাঁওতাল থেকে খ্রীষ্টিয়ান হয়েছে তারা খ্রীষ্টিয়ান জাতিতে রুপান্তর হয়ে যায়।’ আমরা দৃঢ়ভাবে এই যুক্তির প্রতিবাদ জানাচ্ছি যে, সাঁওতাল জাতি খ্রীষ্টিয়ান হলেও; তারা কোনভাবে কোন জাতিতে রূপান্তির হয়না। কারণ খ্রীষ্টিয়ান কোন জাতি নয়, এটি একটি ধর্ম।
তাদের বিশ্বাস বা ধর্মের কর্মকা- শুধু পরিবর্তন হয়। তারা বলেছেন, ‘সাঁওতালদের ধর্মের নাম হচ্ছে সারি ধর্ম।’ কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের রেকর্ডে এমন ধর্মের কোন উল্লেখ নেই। প্রাচীনকালে সাঁওতালদের নিজস্ব কোন ধর্ম গ্রন্থ ছিলনা। সাঁওতাল জাতি খ্রীষ্টিয়ান হওয়ার পূর্বে যুগ যুগ ধরে সাঁওতাল সম্প্রদায় প্রকৃতি পূজারী, অন্যদের ধর্ম অনুসরণ করে মূর্তিপূজা, মারাংবুরু, চাঁন্দু বংঙ্গাতে বিশ্বাসী হিসাবে ধর্ম-কর্ম পালন করে আসছেন। কিন্তু সারি ধর্ম বলে কোন ধর্ম ছিলো না।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এই ধর্মের আর্বিভাব কোথায় থেকে? পূর্বে যেকোন ধর্ম পালন করুক না কেন, খ্রীষ্টিয়ান হওয়ার পর শুধু সেই ধর্মের কর্মকা-ের পরিবর্তন হয়। যারা আজকে প্রতিবাদ করছে, তারা অবশ্যই কোন না কোন মূর্তি পূজা করছে। তাহলে তাদেরকে কেন হিন্দু জাতিতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে না? তাদেরকে কেন হিন্দু সম্প্রদায় স্বীকৃতি দিচ্ছে না? যদি কোন সাঁওতাল সারি ধর্ম পালন করে তাদের যুক্তি অনুযায়ী তারা আর সাঁওতাল জাতি হিসাবে দাবি করতে পারে না। তারা সারি জাতিতে পরিণত হয়। যারা খ্রীষ্টিয়ান ধর্ম নিয়ে সংবাদ সংম্মেলন করছে, তারা পূর্বে কি ধর্ম পালন করতো আমরা জানতে চাই? খ্রীষ্টানদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, খ্রীষ্টিয়ান মিশনারীরা বিভিন্নভাবে লোভ লালসা দিয়ে সাঁওতালদেরকে খ্রীষ্টিয়ান করছে।
এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও সাম্প্রদায়িক ধর্ম অনুভূতিতে আঘাতও বটে। তিনি আরো বলেন, খ্রীষ্টিয়ান মিশনারী ফাদার, পালক, পুরোহিত ও প্রচারকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে যে, তাদের বিরুদ্ধে যেন রাষ্ট্র ব্যবস্থাগ্রহণ করে। স্বাধীনতার পর যখন দেশ ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে তখন অনেক মিশনারীরা বিভিন্নভাবে জাতিকে, সরকারকে এবং পিছিয়ে পড়া জাতিকে সাহায্য ও সহযোগীতা করছে। তাদের সে সংবাদ সম্মেলন পুরোপুরিভাবে সাঁওতাল জাতির মধ্যে দাঙ্গা লাগানোর প্রচেষ্টা।
তথাকথিত সারি ধর্ম সংগঠনের কার্যক্রম পর্যালোচনা পূর্বক বিভেদ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাষনিক ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি (সাঁওতাল) সম্প্রদায়ের জীবনমান রক্ষার্থে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।