ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৯ আগস্ট ২০২৪
  1. অন্যান্য
  2. অভিযোগ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন বিচার
  5. আওয়ামী লীগ
  6. আগুন
  7. আটক
  8. আন্তর্জাতিক
  9. আবহাওয়া
  10. আমাদের পরিবার
  11. আরো
  12. আলোচনা সভা
  13. ইতিহাস ও ঐতিহাসিক
  14. ইসলাম
  15. ইসলামী জীবন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সোনাহাট স্থলবন্দরে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব লোপাট,মূল হোতারাও বহাল তবিয়তে

50
admin
আগস্ট ২৯, ২০২৪ ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

শরিফা বেগম শিউলী স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশের সর্বশেষ ২৪ ও ২৫ তম প্রস্তাবিত স্থলবন্দর দুইটি বাদ দিলে যে ২৩ টি স্থলবন্দর রয়েছে এর মধ্যে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় অবস্থিত সোনাহাট স্থলবন্দর টি ২০১২ সালের ১৭ই নভেম্বর থেকে চালু হয়। যেখানে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে।

বন্দরটি চালু হবার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে নিয়মিতভাবে পাথর কয়লা সহ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের ২১ টি পণ্য ও ভুটানের সুতা এবং আলু ব্যতীত উৎপাদিত ও প্রক্রিয়াজাত সকল পণ্যই অনুমোদিত রয়েছে। রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতীত সকল পণ্যই রপ্তানির জন্য অনুমোদিত বলে জানা গেছে।

এর মধ্যে রপ্তানি হয়ে আসছে তুলা, পার্টিক্যাল বোর্ড, প্লাস্টিক জাত পণ্য, তৈরি পোশাক পণ্য যেমন টি-শার্ট, শাড়ি, লুঙ্গি ইত্যাদি। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথা শুল্ক ও কাস্টমসের অভ্যন্তরীণ বিধি নিষেধ সম্বলিত বন্দর ব্যবস্থাপনায় যেখানে টু শব্দ করার কেউ নেই কিংবা যেখান থেকে কাক পক্ষীও কোন তথ্য সংগ্রহ করতে অপারগ সেই স্থানের প্রকৃত চিত্র কেবলমাত্র স্বচ্ছ, স্বাধীন সংস্থার পক্ষেই বের করা সম্ভব। তবে শত শত কোটি টাকা কিংবা হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি এবং দুর্নীতির বিষয়টি উঠে আসে সরকার পতনের পর গত ১৭ই আগস্ট ছাত্ররা যখন বন্দরে বিভিন্ন সময়ে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চায়।

তারই সূত্র ধরে বিভিন্ন সময়ে গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী যতটুকু পাওয়া গেছে তা দেখলেই যে কারো চোখ কপালে উঠবে। ভেতরের আরো ভয়ংকর প্রকৃত চিত্র যদিও এর মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়, তবে যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতেই এটি তৈরি করা হয়েছে। গত ১৭ই আগস্ট ছাত্র জনতার স্থলবন্দরে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের কারণে এসব সন্দেহ আরো প্রকট হয়।

তারা স্থল বন্দরের ওজন পরিমাপক যন্ত্র যাকে “নাশিদা ডিজিটাল স্কেল ওয়েব ব্রিজ” বলা হয় এখানে গাড়ির ও মালের পরিমাপ এবং কাস্টমস কর্মকর্তাদের লিখিত সরকারের তালিকায় ওঠা পরিমাপ সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। ছাত্ররা যখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে বলতে যান, তখন তাদের বক্তব্য থেকে একটা বিষয়ে উঠে আসে আর তা হচ্ছে তারা জানতে পারেন উক্ত স্থল বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ তাদের বন্দরে ওজন পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে (বাইরের স্কেল এর) পরিমাপ এবং তাদের সরকারি বহিতে উত্তোলিত পরিমাপের পার্থক্যের বিষয়ে এমন উত্তর দেন যে, “বাইরের ওয়ে ব্রিজের পরিমাপ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বহিতে লিখিত পরিমাপের পার্থক্যের অংশের রাজস্ব টি তারা অন্যভাবে সরকারের খাতায় জমা করেন”। কিন্তু এমন কোন পদ্ধতি সরকারী নিয়মে আছে বলে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

কয়েকটি গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল তারিখে ভারত থেকে আমদানি করা কয়লার বিল অফ এন্ট্রি (নং-১৫২৮) এর মাধ্যমে জানা যায়, উক্ত বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে দুইটি গাড়িতে (গাড়ি নং- AS09C3467 ও AS01DD4261) আমদানিকৃত ৪০ মেট্রিক টন কয়লার রাজস্ব প্রদান করা হয়। যার অর্থের পরিমাণ ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫৯২ টাকা কিন্তু উক্ত দুই গাড়িতে প্রকৃতপক্ষে আমদানি করা হয়েছে ৬৯ মেট্রিক টন কয়লা। যা লিখিত হিসাবের চেয়ে ২৯ টন বেশি এবং এই ২৯ টনের কোন রাজস্ব সরকার প্রাপ্ত হয়নি। যার মোট রাজস্ব দাড়ায় ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ৯৬ টাকা।

এখানে একদিনে মাত্র দুইটি গাড়িতেই সরকারি রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ৯৮ হাজার ৩০৪ টাকা। শুধু তাই নয় ওই বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে একটি গাড়ির ওজন বৃদ্ধি করে ও গাড়িতে থাকা মালের ওজন কম দেখিয়ে ফাঁকি দেয়া হয় আরো ১ হাজার ৮৬৪ টাকা। একই দিনে প্রাপ্ত আরেকটি বিল অফ এন্ট্রি (নং-১৫৩০)র বিপরীতে দেখা যায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হিসেব মতে ২ টি ভারতীয় গাড়িতে (যার নং- AS19C3486 ও AS01GC7872) আসা কয়লার পরিমাণ ৪০.৪৯ মেট্রিক টন যার বিপরীতে রাজস্ব দেখানো হয় ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ২৫৩ টাকা। কিন্তু ওই দুই গাড়িতে আসা প্রকৃত কয়লার পরিমাণ ছিল ৬৯.১ মেট্রিক টন।

যার রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ৯৬ হাজার ৯ শত ৮২ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য সূত্র মতে ২০২২, ২০২৩, ২০২৪ সালের এক মাস করে প্রাপ্ত তিনটি রিপোর্ট অনুযায়ী আমদানিকৃত পাথর ও কয়লার পরিমাণ জানা যায়। যাতে ২০২২ সালের শুধু মার্চ মাসেই ২ হাজার ২৯৯ টি গাড়িতে করে পাথর আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন । পাথরের ক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টন ১০ টাকা হারে স্পিড মানি (ঘুষ) র মোট টাকা দাঁড়ায় ৫ লক্ষ ৯৩ হাজার ৯০০ টাকা। কয়লা আমদানির পরিমাণ ৬২ হাজার ৩৯৬ মেট্রিক টন। স্পিড মানি (ঘুষ) কয়লার ক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টন ৬০ টাকা করে হলে মোট টাকা দাঁড়ায় ৩৭ লক্ষ ৪৩ হাজার ৭৬০ টাকা।

ওই সূত্র মতে জানা যায়, এর উপরে উল্লেখিত রাজস্ব ফাঁকির পাশাপাশি প্রতিটি বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে পাথরের ক্ষেত্রে ৭৫০ টাকা এবং কয়লার ক্ষেত্রে ৩০০০ টাকা করেও প্রদান করতে হয়। সে অনুযায়ী উক্ত মাসে পাথরের বিল অফ এন্ট্রি হয় ১২১ টি, যার জন্য স্পিড মানি (ঘুষ) ৭৫০ টাকা করে হলে মোট টাকার পরিমাণ আনুমানিক ৯০ হাজার ৭৫০ এবং কয়লার ক্ষেত্রে ৫০৪ টি বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে স্পিড মানি (ঘুষ) ৩০০০ টাকা করে হলে মোট দাঁড়ায় ১৫ লক্ষ ১২ হাজার টাকা। তাহলে উক্ত মাসেই রাজস্ব ফাঁকির বাইরে শুল্ক ও রাজস্ব কর্মকর্তাকে দেয়া এই স্পিড মানি (ঘুষ) এর পরিমাণ আনুমানিক ৫৯ লক্ষ ৪০ হাজার ৪১০ টাকা।

আবার ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উক্ত রাজস্ব ফাঁকির পাশাপাশি স্পিড মানি (ঘুষ)র পরিমাণ আনুমানিক ২২ লক্ষ ৪৯ হাজার ২৩০ টাকা। সি এন্ড এফ এজেন্টদেরকে প্রত্যায়ন দেয়া বাবদ তাদের কাছ থেকে ৫০০০ টাকা করেও নেয়া হয় বলেও একটি সূত্রে জানা যায়। এছাড়াও আমদানিকৃত পণ্যের ভিতরে অনুমোদনহীন বিভিন্ন পণ্য আমদানির অভিযোগও রয়েছে। যদি প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১২০ টি ভারতীয় গাড়ি বন্দরে পণ্য নিয়ে আসে সে অনুযায়ী শুধুমাত্র কয়লার ক্ষেত্রেই ২টি বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে উপরোক্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে ৪ টি গাড়ি থেকেই শুল্ক রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ২৮৬ টাকা হয় তাহলে ওই একদিনে আসা মোট গাড়ি থেকে রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ কত? এক মাসে আসা গাড়ির বিপরীতে মালের রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ কত? প্রতিবছরে কত এবং সর্বশেষ প্রশ্ন আমদানি রপ্তানি শুরু হওয়ার দিন থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিগত বছরগুলোতে কত শত কোটি কিংবা হাজার কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব হিসেবে না গিয়ে লোপাট হয়েছে এবং তার পাশাপাশি স্পিড মানি (ঘুষ) এবং দুর্নীতির পরিমাণ কত? এসব বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সরকারি শুল্ক কাস্টমস কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি তাদেরকে এসব কর্মকাণ্ডে সমর্থনকারী ক্ষমতাসীনরা কত অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন তা কি অনুমান যোগ্য? এমন তথ্য থেকে এমন প্রশ্ন আসা অমূলক নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থলবন্দরের লোড আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি আব্দুল বাতেন বলেন, “আমরা লোড আনলোডের টাকা ঠিকাদারের কাছ থেকে নেই না মূলত তা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেই। সে ক্ষেত্রে লোডের ক্ষেত্রে আড়াই টাকা সিএফটি ও আনলোডের ক্ষেত্রে গাড়ির প্রকারভেদে টন প্রতি ২৫ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকি’। প্রতিবেদন সূত্র মতে জানা যায়, এটি সরকারের কোন খাতে যায় না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমদানি রপ্তানি কারক সমিতির সভাপতি আবু তাহের এসব বিষয় অস্বীকার করেন। তবে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন, লোড আনলোড এর ক্ষেত্রে টন প্রতি নেয়া ২৭ টাকা স্থল বন্দরের ইজারাদারের কাছ থেকে গিভ অ্যান্ড টেকের মাধ্যমে সমন্বয় করি।

১৭ই আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা বন্দর সংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে গেলে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস কেন বাঁধা দিয়েছিলেন এমন প্রশ্ন করা হলে, তিনি নানা অজুহাত দিয়ে বলেন, বিষয়টি ভারত সীমান্তবর্তী এবং সে কারণে চাপ আসতে পারে এই হিসেবে তিনি বাধা প্রদান করেন এবং এ বিষয়ে তিনি দেখবেন বলে ওই সময় ছাত্রদেরকে তার সাথে বসতে বলেন। সরকারের রাজস্ব ফাঁকির পাশাপাশি যে পরিমাণ ঘুষ ও দূর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে সকল ক্ষেত্রে হিসেব করলে এর পরিমাণ কেমন হতে পারে তা অনুমান করা এক প্রকার অসম্ভব।

যার মাধ্যমে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতিবছর শতশত কোটি টাকা যা কয়েক বছরে হাজার কোটি টাকার বেশী ব্যতীত কম হবার সুযোগ নেই।

এই সাইটে নিজম্ব খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।