মোঃ বুলবুল ইসলাম খানসামা – প্রতিনিধি:
মোছা: মমতাজ বেগম একজন বিধবা মহিলা। এই বিধবা মহিলার স্বামীর ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে জোরপূর্বক জায়গা দখল করে স্থাপনা করেছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের জিয়া সেতুর পূর্বপাড়ে বাইপাস সড়কে।
গত সোমবার (৫ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত বুধবার (৬ আগস্ট) রাত ৯ থেকে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকাল ৬টা পর্যন্ত এ জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে। অভিযুক্ত সিরাজুল ওই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। ভূমিদস্যুদের কবল হতে নিজ ভোগদখলীয় জমি উদ্ধারের জন্য গত বুধবার (২১ আগস্ট) উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী মমতাজ বেগম।
চার জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগে তিনি লিখেন, আমার মরহম স্বামী আব্দুল লতিফ রানা তার জীবদ্দশায় ২২ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে ২৬ শতাংশ জমি কোবলামূলে ক্রয় করে তার নিজ নামে নামজারী, বাংলাদেশ চলমান মাঠ জরিপে নিজ নামে খতিয়ান ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে ভোগদখলীকার অন্তে মৃত্যুবরণ করেন।
আমরা সেই জমি দীর্ঘ ২২ বছর যাবত শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করে আসতেছি। এমতবস্থায় সরকার পতনের পর উপজেলার বানগাঁও এলাকার মৃত তছির উদ্দিনের দুই ছেলে সাবেক মেম্বার মো. সিরাজুল ইসলাম ও মো. নজরুল ইসলাম এবং সাবেক মেম্বারের দুই ছেলে মো. সাজ্জাদ ইসলাম ও মো. আজম ইসলাম রাতারাতি ভূমিদস্যুর ন্যায় জোরপূর্বক দখল করে ঘেড়া দিয়ে ঘরবাড়ি তুলে। আমরা খবর পেয়ে উক্ত জমি দেখতে গেলে, তাদের তান্ডবলীলা দেখি। সেই সাথে প্রতিবাদ করলে, তারা মারমুখী আক্রমন করে।
আমি তাদেরকে আমাদের জমি থেকে চলে যেতে বললে তারা ধারালো ছোড়ার খুন জখমের আক্রমন মুখে প্রতিবাদ করতে না পেরে, ওই জায়গা থেকে পালিয়ে আসি। ভুক্তভোগী মোছা. মমতাজ বেগম বলেন, আমার মরহুম স্বামী বিষ্ণুপুর মৌজায় গত ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে ৫৩২ সাবেক দাগ, ২১৩ হাল দাগে ২৬ শতাংশ জমি ক্রয় করে। যার দলিল নং ১৭।
এরপর তিনি নিজ নামে বাংলাদেশ চলমান মাঠ জরিপে খতিয়ানভুক্ত হন। যার খতিয়ান নং ২০৯ এবং নিজ নামে খারিজ করেন। যার খারিজ মোকদ্দমা নং ২২৮/২০১৩-১৪। এছাড়া স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ১৪৩১ বাংলা সন পর্যন্ত ওই জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেছি। সব কাগজ ঠিক থাকার পরেও তারা কিসের বলয়ে জমি দখল করলো আমাদের বোধগম্য নয়। আমি অভিযোগ দেওয়ার পর আমাদের দুই পক্ষকে ডেকে ছিলেন এসিল্যান্ড সাহেব। সেখানে আমাদের কাগজপত্র দেখে প্রতিপক্ষকে বলেন আপনারা জমি ছেড়ে দেন।
এই জমির প্রকৃত মালিক আব্দুল লতিফ রানার ওয়ারিশগণ। এছাড়াও তাদের স্থাপনা সরাতে স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুলকে দায়িত্ব দেয়। এরপর ওই রাতেই এনামুল মেম্বার বলে তারা কোন স্থাপনা সরাবে না। আমি পরদিন আবার এসিল্যান্ড সাহেবের কাছে যাই তিনি বলেন যে, এ বিষয়ে ইউএনও স্যারের কাছে যান। আমি ইউএনও স্যারের কাছে গেলে তিনি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আমিনুল বিএসসির কাছে যেতে বলেন। তিনি আরো বলেন, আমিসহ আমার পরিবার শুধু ঘুরেই যাচ্ছি।
আমাদের সঠিক জমি ও কাগজ থাকার পরও দখল হচ্ছে। আমরা কি সঠিক বিচার পাবো না। এ দেশ থেকে কি আইন-কানুন উঠে গেল। আমি আমাদের সঠিক জমি উদ্ধারের জন্য এ সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি। এ বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে। তিনি বলেন, এই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। যদি আদালত আমাকে জমি ছেড়ে দিতে বলে, আমি সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিব।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদকে একাধিক বার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজ উদ্দিন বলেন, আমি ও এসিল্যান্ড ভুক্তভোগী পরিবারের জমির কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে সঠিক পেয়েছি। যারা অবৈধভাবে দখল করে আছে তাদের আমরা ছেড়ে দিতে বলেছি। উনারা আমাদের নির্দশনা প্রতিপালন করে নাই। তাই ভুক্তভোগী পরিবারকে আদালতের শরণাপন্ন হতে পরামর্শ দিয়েছি।