আবদুল মান্নান তামিম,স্টাফ রিপোর্টার
সাম্প্রতিক গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে ৬ হাজার হেক্টর জমির রোপা- আমন ধানের খেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। হঠাৎ করে এমন বৃষ্টিতে কষ্টের রোপণ করা আমন ধানের জমি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন অনেক কৃষক। এছাড়াও অব্যাহত বৃষ্টির কারণে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন খেটে খাওয়া কৃষকেরা। বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
তজুমদ্দিন কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, তজুমদ্দিন উপজেলায় মোট ১১ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে লাগানো হয়েছে রোপা-আমন ধানের চারা। ইতোমধ্যে উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে গেছে। শম্ভুপুর ইউনিয়ন ২ হাজার ৪ শত হেক্টর, চাদঁপুর ইউনিয়ন ২ হাজার হেক্টর, চাঁচড়া ইউনিয়ন ৮ শত হেক্টর, সোনাপুর ইউনিয়ন ৬ শত হেক্টর, মলনচড়া ইউনিয়ন ২ শত হেক্টর। এছাড়াও ২৪০ হেক্টর জমির শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হেক্টরের পর হেক্টর রোপা আমনের জমি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। চারা লাগানোর পর থেকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমেই বেড়ে উঠছিল সোনালি আমন ধান। কিন্তু হঠাৎ করেই টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে কৃষকের আমনের চারা। অনেকেই ধার-দেনা করে রোপা আমন আবাদ করেছেন। এই বৃষ্টি তাদের হাসি, ঘুম কেড়ে নিয়েছে। চরম হতাশা আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন কৃষকরা। অতিবৃষ্টির কারণে খাল-বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সদ্য রোপণ করা আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়লে ধানের খেত টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষকেরা।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, রোপা আমন আবাদের জন্য তারা লগ্নি করে অর্থ নিয়েছেন। যা ফসল তোলার পর শোধ করার চুক্তি ছিল। কিন্তু টানা বর্ষণে প্রতিটি কৃষকের ঘরে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
শম্ভুপুর ইউনিয়নের কৃষক মো.বশির মিয়া বলেন, টানা বর্ষণে আমাদের গ্রামের অধিকাংশ আমন ধানের জমি পানিতে ডুবে গেছে। আমি ১৬০ শতাংশ জমিতে রোপা- আমন ধান চাষ করেছি। তার মধ্যে ১২০ শতাংশ জমি পানিতে ডুবে আছে। ধানের চারা সব পচে যাচ্ছে। পানি কমলেও এই জমি থেকে আর ধান পাবো না কিনা সেটাও সঠিক বলা যায় না।
কৃষক মো. ইদ্রিস বলেন, আমার প্রায় ৮০ শতাংশ আমন ধানের জমি প্রায় এক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কয়েকদিন পানি স্থায়ী হলে সব ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। চাচঁড়া ইউনিয়নের কৃষক আকবর বলেন, ১২০ শতাংশ জমিতে আমন চাষ করেছিলাম। আমার বেশিরভাগ জমি এখন পানির নিচে।
জানতে চাইলে তজুমদ্দিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, টানা বৃষ্টিতে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর আমন ধানের খেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ২৪০ হেক্টর জমির শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বর্তমানে বিভিন্ন খাল দিয়ে পানি নিস্কাশন হচ্ছে। এছাড়াও প্রায় ৭০% জমিতে বন্য সহনশীল ব্রি ধান-৫২ আবাদ হওয়ায় রোপা আমনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কিছুটা কম হবে বলে আশা করা যায়। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।