পৌষের শুরুতেই সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলজুড়ে শনিবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এতে জমিতে থাকা পাকা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এছাড়াও হঠাৎ করে এমন বৃষ্টির প্রভাবে বেড়েছে শীতের তীব্রতা।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই পুরো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে, দেখা মেলেনি সূর্যের। সেই সঙ্গে শুক্রবার রাত থেকে উপকূলীয় এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে গুঁড়ি বৃষ্টি। এদিকে অসময়ে বৃষ্টিরসহ ভারী বৃষ্টির পূর্ব সতর্কতায় এ অঞ্চলের আমন ধান চাষীরা জমিতে থাকা পাকা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তার পড়েছেন। এছাড়াও বৈরি আবহাওয়ার কারণে আলুসহ সবজি চাষীদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার চিন্তার ভাঁজ।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে থেকে উপকূলবর্তী এলাকাজুড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। মাঝেমধ্যে জোরালো আকার ধারণ করলেও সারারাত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। সকাল থেকে আকাশ মেঘে ঢাকা থাকার পাশাপাশি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলবর্তী এ এলাকারজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। নদ-নদীসমূহে পানির স্বাভাবিক উচ্চতা বজায় থাকলেও গুমোট আবহাওয়ার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ভর করেছে।
এদিকে, রাতভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে উপকূলবর্তী জনপদের কাঁচা রাস্তাসমূহ কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। রাস্তা-ঘাটে মানুষের উপস্থিতি কম দেখা মিলেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে থাকা সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। এর অবস্থান যদিও অনেক দূরে, তবু এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আজ শনিবার কিছুটা বৃষ্টি হচ্ছে।
আর এই নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর উপজেলায় ১৬ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপন করা হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ৬০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৮৫ ভাগ ধান পেকে গেছে। আর বাকি ধানে কেবল শীষ আসতে শুরু করেছে।
উপজেলার মধ্যে ঈশ্বরীপুর, কৈখালী, ভূরুলিয়া, কাশিমাড়ি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ধান আছে। উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের সাপখালি গ্রামের কৃষক হামিদ গাজী এবার ৪ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আমনের ফলন ভালো হয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যায়ে রাত থেকে বৃষ্টি দেখে ওই এলাকার (কৈখালীর) সব কৃষকের হাসি মলিন হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তাঁর ২৫ ভাগ ধান ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানান তিনি। বৃষ্টির কারণে তার জমিতে থাকা কাটা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট হাঁসারচক গ্রামের নিমাই মন্ডল জানান, তার আমন মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির জন্য ধান লাগাতে দেরি হয়েছিল। তবে ধান তুলনামূলক অনেক ভালো হয়েছিল।
ধান কাটা শেষ করে বিলে শুকাতে দেওয়া। এখন কতটুকু ধান ঘরে তুলতে পারবেন সেটি নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরায় এক মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর পাশাপাশি জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হুদা জানান, বৃষ্টি বেশি হলে আলু ও ধানের বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। সোমবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হলে সবজি চাষের উপর এমন আবহাওয়া কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ জিয়াউর রহমান জানান, গত এক সপ্তাহে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিশু ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। হঠাৎ গতকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
এতে আজ হাসপাতালে কোনো রোগী আসেনি। তবে এমন আবহাওয়া শিশু ও বয়স্ক মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। পূর্ব সতর্কতা মেনে শিশুদের তুলনামূলক উষ্ণ স্থানে ও গরম কাপড়ে রাখা উচিত।
এই সাইটে নিজম্ব খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।