এক তরফা সংসদ নির্বাচন করে ভোটের বৈতরণী পার হয়ে গেলেও অভ্যুত্থানে ঢেউ এসে লাগে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। ফলে পদত্যাগ করে আউয়াল কমিশন বিদায় নিলে সৃষ্টি হয় সাংবিধানিক সংকট।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন সংস্কার উদ্যোগের মধ্যেই নিয়োগ পায় নাসির কমিশন, যারা এখন নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে ভাবছে।
বছরের শেষ সময়ে এসে পেছনে দিকে তাকালে যে চিত্র দেখা যায়, এতে শুরুতেই কোনো চ্যালেঞ্জ ছাড়াই নির্বাচন কমিশন তুলে আনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কমিশন।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি একতরফা ও ডামি নির্বাচন নিয়ে তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, বিএনপিসহ সকল দল ভোটে এলে আরও ভালো লাগত। তবে তারা না আসায় নির্বাচন আইনসিদ্ধ হয়নি, তা বলা যাবে না।
এ বিষয়টিকেও আইনসিদ্ধ বলে উল্লেখ করেন আউয়াল কমিশন।
জাতীয় নির্বাচনের পর তারা একে একে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করছিলেন। এতেও বিরোধী দলগুলো অংশগ্রহণ না করায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে যান। এ অবস্থায় সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে ইসির নির্বাচনী কার্যক্রমেও বাধা পড়ে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। অভ্যুত্থানের ঢেউ এসে লাগে ইসিতে।
সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। সিইসি হাবিবুল আউয়ালসহ অন্যরা কয়েকদিন অফিস আসা থেকে বিরত থাকেন। এরপর প্রায় একমাসের মধ্যে দুই থেকে তিন দিন সব কমিশনাররা কার্যালয়ে আসেন। একদিন নির্বাচন ভবনে এসে তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে করণীয় নির্ধারণে সাক্ষাতের সময় চান৷ ওইদিন বৈঠকে পাঁচ কমিশনার পদত্যাগের নীতিগত সিদ্ধান্তও নেন। পরবর্তীতে সময় দিয়েও রাষ্ট্রপতি কার্যালয় তা বাতিল করলে পদত্যাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন তারা। এর আগে সিইসি পত্রিকায় কলাম লেখেন, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন না করতে পারলে ফাঁসির সাজা হতে পারে তাদের। তবে এ নিয়ে আলোচনার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না৷
এ অবস্থায় সরকার পতনের ঠিক একমাস পর গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে আউয়াল কমিশন। ওইদিন তিনি দলীয় সরকারের অধীনে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় মন্তব্য করে নির্বাচনী পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ রেখে যান। আর এর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংকটের মধ্যে পড়ে ইসি। সাংবিধানিক এই সংস্থাটিতে ৭৯ দিনের শূন্যতা সৃষ্টি হয়। এতো লম্বা সময় ধরে ইসির সাংবিধানিক সংকট এবারই প্রথম।
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগের পর নানা মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমেই নির্বাচন কমিশন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের করা আইনের মাধ্যমেই সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় এক মাসের প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতি সাবেক সচিব এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন নিয়োগ পায়। গত ২১ নভেম্বর দায়িত্ব নেওয়ার পর এই কমিশন বর্তমানে বিভিন্ন আইনি সংস্কার নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পাশাপাশি কাজ করছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন তার কমিশনের পরিকল্পনা নিয়ে বাংলানিউজকে বলেছেন, সামনে হয়তো আরও চ্যালেঞ্জ আসবে। যখন সচিব ছিলাম, তখনও সফলতার সঙ্গে কাজ করেছি। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফল হবো ইন শা আল্লাহ। তবে এর আগে সংস্কার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন আইনি সংস্কারের পর সরকার যখন বলবে আমরা সে সময়ের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি রাখছি।