বিশ্ব জলাভূমি দিবস ২০২৫ উপলক্ষে জামালপুরের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে এক বিশাল মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল জলাভূমি সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা। সকাল ১১টায় উপস্থিত সকলে জলাভূমি সংরক্ষণের প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন এবং পরিবেশ সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক জনাব মোঃ আমির উদ্দিন জলাভূমি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ সম্পদের সংরক্ষণের উপর জোর দেন। বক্তারা জলাভূমি সংরক্ষণের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের মধ্যে একটি করে কী-নোট পেপার বিতরণ করা হয়, যা উপস্থাপন করেন শিক্ষার্থী তন্ময় ফারহান। কী-নোট পেপারে জলাভূমির পরিবেশগত গুরুত্ব, বর্তমান সংকট এবং সংরক্ষণের কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ব্যক্তি জলাভূমি সংরক্ষণ এবং নদী ও খাল-বিল রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তারা বলেন, জলাভূমি ধ্বংসের ফলে আমাদের প্রকৃতি ও কৃষি ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অশনি সংকেত। জলাভূমি সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর ভূমিকা রাখা জরুরি। উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ এনামুল হক, প্রধান নির্বাহী, সমাজ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (এসপিকে), সূর্য তোরণ সমাজ সেবা সংস্থা’র নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী মো: খোরশেদ আলম, ডা. মোঃ নেহাজ উদ্দিন মাইজভান্ডারি, নির্বাহী পরিচালক, প্রত্যাশা সমাজ উন্নয়ন সংঘ, মোঃ এমদাদুল হক, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), আরিফুল ইসলাম প্রতিনিধি টিআইবি, জামালপুর ডাঃ মোঃ শফিকুল ইসলাম আযাদ খান এবং নানান শ্রেণী-পেশার মানুষ।
বক্তারা আরও বলেন, জলাভূমি সংরক্ষণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সরকারি পর্যায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ ও স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই উদ্যোগকে আরও বেগবান করা সম্ভব। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ছাড়াও একটি প্রিকেডেট স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষার্থীরা জলাভূমির গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের নিজস্ব মতামত তুলে ধরে এবং বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা ছড়িয়ে দেয়। সমাবেশে বক্তারা জলাভূমি ধ্বংসের ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে জলাভূমি সংরক্ষণের আহ্বান জানান। জলাভূমি দিবস উদযাপনের মাধ্যমে সকলের মধ্যে একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। স্থানীয় জনগণ, শিক্ষার্থী ও পরিবেশ কর্মীদের অংশগ্রহণ এই উদ্যোগকে সফল করেছে এবং ভবিষ্যতে জলাভূমি রক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সকলেই স্বীকার করেছেন।
সমাবেশের শেষে একটি প্রতীকী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা জলাভূমি সংরক্ষণের শপথ নেন। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এ ধরনের কর্মসূচি আয়োজনের জন্য আহ্বান জানানো হয়, যাতে জলাভূমির গুরুত্ব সম্পর্কে আরও বেশি মানুষ সচেতন হতে পারে।