মোঃ মিষ্টার ইসলাম স্টাফ রিপোর্টার
দিনাজপুর বিরামপুরে বিএনপির কার্যালয় এক মাস তালাবদ্ধ হয়ে পড় থাকতে দেখা যায়। এবিষয়ে দলটির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করে জানান,পুলিশের হয়রানি ও গ্রেপ্তারের ভয়ে কেউ কার্যালয়ে যায় না। বিরামপুর পৌর শহরের নতুন বাজারের তিনমাথা মোড়সংলগ্ন পাকা সড়ক ঘেঁষে অবস্থিত বিএনপির কার্যালয়।
অফিস ঘরের সামনের বড় দুটি জানালা খোলা। বাইরে বাতাসে জানালার ধুলামাখা পর্দা হালকা নড়ছে। ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। টর্চলাইটের আলোয় চোখে পড়ল ভেতরে সাজিয়ে রাখা চেয়ার-টেবিলে ধুলার আস্তরণের চিত্র। দরজায় তালা ঝুলার চিত্র বেশ ফুটে উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। উল্লেখ্য,এক মাস পূর্বে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিএনপির নেতা-কর্মীদের পদচারণে মুখর থাকত এই কার্যালয়।
দলটির নেতা-কর্মীদের অভিযোগে জানান,পুলিশের হয়রানি ও গ্রেপ্তারের ভয়ে কেউ এখন কার্যালয়ে যায় না। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে জানা যায়,গত ২৯ অক্টোবর বিরামপুর থানায় করা নাশকতার মামলায় বিএনপির বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর থেকে দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলতে দেখা যায়। কার্যালয়টি শহরের নুতন বাজার থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূরে আওয়ামী লীগের কার্যালয়। কদিন আগে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের মনোনয়ন পাওয়ার খবরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আনন্দমিছিল করে থাকেন।
কি এমন দৃশ্য পাশেই ছিল বিএনপির কার্যালয় তালাবদ্ধ। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি। দাবি পূরণ না হলে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি জৈষ্ঠ নেতারা। এবিযয়ে বিরামপুর উপজেলা বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পুলিশ বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ভিত্তিহীন মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করছে। নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে। তারা আরও জানান,মিথ্যা মামলায় সহ বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে আসামি করে হয়রানি করা হচ্ছে।
তাঁদের গ্রেপ্তার করতে রাতবিরাতে পুলিশ বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচতে বিএনপির অনেক নেতা–কর্মী আত্মগোপনে থেকে দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এবিষয়ে বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুব্রত কুমার সরকার বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁদের অফিস খুলবেন কি না,সেই সিদ্ধান্ত তাঁদের। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাঁরা নাশকতা করেন বা নাশকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের ধরা হবে। যাঁরা দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করতে চান,দেশের আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করতে চান,তাঁদের তো আমরা ধরবই। ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অভিযান চালায়। ২৯ অক্টোবর বিএনপি ও জামায়াতের ৪০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করা হয়েছে।
১২ নভেম্বর নাশকতার মামলা করা হয়,যাতে বিএনপি-জামায়াতের ৩৭ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ১৬ নভেম্বর বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশনের পাশে রেললাইনের ওপর আগুন জ্বালিয়ে নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে ৯ জনের নামে মামলা করেন পার্বতীপুর রেলওয়ে পুলিশ। ৩টি মামলায় বিএনপি-জামায়াতের মোট ৮৬ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
৩টি মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত বিএনপির ২৫,জামায়াতের ১১ জনসহ ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। দলের অন্য নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। মামলায় নাম না থাকলেও অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে আটকের পর গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর ঘটনা ঘটছে। ফলে এই আতঙ্কে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এখন ঘরছাড়া। দলটির বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তাঁরা কোথায় আছেন,এ ব্যাপারে তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও মুখ খুলছেন না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন,গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দিনের বেলায় এলাকায় থাকেন। তবে রাতের বেলায় সবাই ঘরছাড়া। রাতে কখনো আত্মীয়ের বাড়ি কখনো বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে থাকছেন বলে জানা যায়।