ডেস্ক রিপোর্ট
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান সীমান্ত হত্যা ও ভারতবিরোধী অবস্থান জানান দিয়ে বলেছেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে কয়েকশো বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সীমান্তে বিগত কয়েকবছরে কয়েকশো বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এমন হিংসাত্মক রাজনীতি কে বিশ্বাস করে? দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দেশের সীমান্তে সাধারণ মানুষকে গুলি করে মারে?
- আরও পড়ুন:নড়াইলে আ.লীগে যোগ দিলো বিএনপির নেতা
কেবল মঈন খান নয়, বিএনপির নেতারা এখন প্রায় সবাই প্রকাশ্যে ভারত বিরোধিতা করছে, তীব্র ভাষায় ভারতের সমালোচনা করছে। মঈন খান থেকে শুরু করে রুহুল কবির রিজভী প্রত্যেকেই গত এক সপ্তাহে কোনো না কোনো ফোরামে ভারতের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন এবং বিএনপির নেতারা সুস্পষ্টভাবে বলছেন যে, ভারতের জন্যই সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে। এই সমালোচনায় সর্বশেষ সীমান্ত হত্যার বিষয়টি যু্ক্ত করেছে তারা।
যদিও ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে তাদের পক্ষ থেকে কিছু উল্লেখ করা হয় না। বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক বছর ধরেই সীমান্তে নিহতের বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। কখনও কিছুদিনের জন্য পরিস্থিতি ভালো থাকে, কখনও খারাপ হয়। এখানে এককভাবে সরকারকে অভিযুক্ত করা বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করার সুযোগ নেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের পর বিএনপি তার কূটনীতি কৌশল পরিবর্তন করেছে। নির্বাচনের আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর প্রিয়ভাজন হওয়ার জন্য বিএনপি ভারতবিরোধী অবস্থান জানান দিয়ে আসছিলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তারা ভূরাজনৈতিক ইতিহাস ভুলতে বসেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদন বলছে, বিএনপির ওই সরকারের শাসনামলে পাঁচ বছরে এই সংখ্যাটি ছিল ৫৬৪। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ১১৩ জন করে বাংলাদেশি হত্যা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০১ সালে ৯৪ জন, ২০০২ সালে ১০৫ জন, ২০০৩ সালে ৪৩ জন, ২০০৪ সালে ৭১ জন, ২০০৫ সালে ১০৪ জন এবং ২০০৬ সালে ১৪৬ জন বাংলাদেশি নিহত হয়। যদিও আওয়ামী-লীগের প্রথম শাসনামলে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সীমান্তে ৩শ ১২ বার হামলা চালানো হয়। এতে ১২৪ জন বাংলাদেশী নিহত হয়। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে ১৩০টি হামলায় ১৩ জন নিহত, ১৯৯৭ সালে ৩৯টি ঘটনায় ১১ জন, ১৯৯৮ সালে ৫৬টি ঘটনায় ২৩ জন, ১৯৯৯ সালে ৪৩টি ঘটনায় ৩৩ জন, ২০০০ সালে ৪২টি ঘটনায় ৩৯ জন নিহত হয়। এদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, গত সাত বছরে সীমান্তে ২০১ জন বাংলাদেশি হত্যার শিকার হয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ২১ জানুয়ারি ভোরে এক বিজিবি সদস্যর নিহত হওয়ার ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছে দুই দেশের সম্পর্ক। দুই দেশের মানবাধিকার কর্মীরাই এই অসঙ্গতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তেরও দাবি জানাচ্ছেন। এদিকে এই গোটা ঘটনায় ভারত আর বাংলাদেশের দুই দেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যৌথভাবে তদন্ত করুক, এই আবেদন জানিয়েছে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মাসুম। তারা বলছে, ভারতের সীমানায় প্রবেশ এবং কথিত পাচারের অপরাধে কখনই মৃত্যুদন্ডের সাজা দেওয়া যায় না ভারতীয় আইন অনুযায়ী। আর বিএসএফের সাজা দেওয়ার অধিকারও নেই। তারা গ্রেফতার করে আদালতে নিয়ে যেতে পারত, কাউকে গুলি করে হত্যা কেন করা হল?
নিরাপত্তা বিশ্লেষক লে. জেনারেল (অব) আবদুর রশীদ মনে করেন সীমান্তে একজন মানুষ হত্যা হলেও সেটা জাস্টিফাই করার সুযোগ নেই। তবে আগের তুলনায় সীমান্তে ভুল বুঝাবুঝি এখন অনেক কম। নব্বইয় দশকের তুলনায় এখন তা অর্ধেকের কমে নেমে এসেছে। তবে এটা আরও কমে আসতে হবে। এবং কূটনৈতিক বোঝাপড়ার জায়গায় বাংলাদেশকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। বিরোধীদল হিসেবে বিএনপির ভূমিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারত আমাদের বন্ধরাষ্ট্র কেবল না ভৌগলিকভাবে আমাদের মোটামোটি চারপাশেই তাদের অবস্থান। এই জায়গা থেকে এমন কোন পদক্ষেপ চাইলেই আমরা নিতে পারি না যাতে করে দুই দেশের সম্পর্কে ভাটা পড়ে। তিনি বলেন, সীমান্তে নিহতের ঘটনায় নানা ভাষ্য পাওয়া যায়। এটা সবসময়েরই ঘটনা। ফলে এখনকার সময়ে এসে এধরনের ঘটনার দ্বিপাক্ষিক তদন্ত ও সমাধানের পথ খোঁজা জরুরি। সেটা বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক রেখেই সম্ভব।