আব্দুস সালাম,দোয়ারাবাজার(সুনামগঞ্জ):
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লকের কাজ শেষ না করেই হস্তান্তর করতে তড়িঘড়ি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওয়াশ ব্লকের পানি ব্যবস্থায় নষ্ট মটর লাগিয়ে ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
অনিয়ম আর দূর্নীতিতে ২ বছরেও কাজ অসমাপ্ত ওয়াশ ব্লকটি উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের দ্বীনেরটুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে নির্মাণ কাজ শুরু করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। কাজের মান নিম্ন হওয়ায় নির্মাণ শেষ না হতেই দ্বীনেরটুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লকের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। ভেঙে পড়ছে দেয়াল। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের দ্বীনেরটুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মাণের কাজের দায়িত্ব পায় সেতু এন্টারপ্রাইজ নামের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর শুর হওয়া ওয়াশ ব্লকের কাজ শেষ হয় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে। ওয়াশ ব্লকটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৮ লাখ টাকা । বিদ্যালয় ভবনের সাথে সংযুক্ত করে নির্মাণ করা হয় দ্বিতল বিশিষ্ট ওয়াশ ব্লক। সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বীনেরটুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়য়ের দ্বি-তল ভবনের ওয়াশ ব্লকের সংযোগস্থলের বিম, মেঝে, ছাদ ও সানসেটের সকল জায়গায় ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত কাজের ফিনিশিং অসমাপ্ত রয়েছে। ভবনের একাধিক জায়গায় দেখা গেছে ঝড়ঝড়া অবস্থায় পলেস্তারা ভেঙে পড়ছে। স্কুল পরিচালনা কমিটি ও কর্মরত শিক্ষকদের অভিযোগ, বিদ্যালয় যেদিন বন্ধ থাকে সেদিন ওয়াশ ব্লকের নির্মাণ কাজ করা হয়। বিদ্যালয়ে পাঠদান চলাকালিন কোন কাজ করতে দেখা যায়না। শুক্রবারে ও কাজ করে ঠিকাদারের লোকজন। স্কুল বন্ধ থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছেমতো নিম্নমানের কাজ করেছে।
এছাড়াও, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত তদারকির অভাবে কাজের মান খারাপ করেছেন ঠিকাদার। বিদ্যালয়ের সভাপতি মো.রুহুল আমিন বলেন, কাজের মান নিম্ন ও সঠিক জিনিস ব্যবহার না করায় বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এনিয়ে একাধিকবার বাঁধা দিলেও কোনো কথাই আমলে নেননি ঠিকাদারের লোকজন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা.মাহমুদা বেগম বলেন, ওয়াশ ব্লকের কাজ অত্যন্ত নিম্ন মানের হয়েছে। কাজ ফিনিশিং করাও হয়নি।
বার বার পানি দিতে বলেছিলাম। তখন ঠিকাদারের লোকজন বলেছিলেন তারা এমন মানের সিমেন্ট ব্যবহার করছেন যে, যাতে পানি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এ অবস্থায় হস্তান্তরের আগেই ওয়াশ ব্লকের দেয়াল ভেঙে পড়ছে। পানির জন্য যে মটর দেওয়া হয়েছে সেটি ও নষ্ট। অনেক চেষ্টা করেও চালু করা যাচ্ছেনা। ঠিকাদারের ইঞ্জিনিয়ারকে কল দিলে বলে হস্তান্তরের দিন আসব। তিনি আরও বলেন, আমি হস্তান্তরপত্রে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করায় ঠিকাদারের লোকজন অনেক কিছু বলে গেছেন।
এখন যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে বা শিক্ষার্থীর কোনো ক্ষতি হয় তাহলে এর দায় কে নিবেন? কাজের মান নিম্ন হয়েছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে সেতু এন্টারপ্রাইজের কাজের দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার কাউসার আহমদ বলেন, কাজ সম্পন্ন হওয়ায় আমরা হস্তান্তর করতে চাচ্ছি। শিক্ষক স্বাক্ষর না করায় আমরা চলে এসেছি। চিকন বালুর পরিবর্তে মুটা বালু ব্যবহার করায় দেখতে একটু অন্যরকম হতে পারে।কোন বিষয়ে আপত্তি থাকলে আমরা দেখব।
দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন কুমার সানা বলেন,স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক বিষয়টি সম্পর্কে আমাকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন। আমি ছুটিতে থাকায় দেখতে পারিনি। এসে বিষয়টি দেখবো। আমি চাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দূর্নীতিটা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হৌক।
দোয়ারাবাজার উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন,আমি যতটুকু জানি ওয়াশ ব্লকের কাজ এখনো শেষ হয়নি। কাজ শেষ হওয়ার পর ওয়াশ ব্লক বুঝিয়ে দিবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওয়াশ ব্লকের দূর্নীতির বিষয়ে জেলা কর্মকর্তার অফিসে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেও নোটিশ দিয়েছি। দূর্নীতি ধরা পরলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।