নেত্রকোনা প্রতিনিধি
নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌরশহরের একটি দোকানের জায়গা দখল নিয়ে বিএনপির দুইপক্ষের সংঘর্ষে অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন। বুধবার দিবাগত রাতে কেন্দুয়া পৌরশহরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে খবর সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহতরা কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। সংঘর্ষে জড়ানো দুটি গ্রুপই জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালীর অনুসারী বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে কেন্দুয়া শহরের সোহেল আমিন নামে এক ব্যক্তির একটি দোকান ঘরের জায়গা দখল করেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির খন্দকারের বড় ভাই আল আমিন খন্দকার ও পৌর যুবদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল খন্দকার। এসময় তারা দোকানটিতে তালা লাগিয়ে দেন।
একই সময়ে সোহেল আমিনের পক্ষ নিয়ে ওই দোকান ও জায়গা উদ্ধারে যান উপজেলা বিএনপি সভাপতি জয়নাল ভুঁইয়া ও বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন ভূইয়াসহ তাদের গ্রুপের লোকজন। একপর্যায়ে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে যুবদল নেতা নাসির খন্দকারের পক্ষে পৌরসভার দিগদাইর গ্রামের লোকজন এবং বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন ভূইয়ার পক্ষে উপজেলার চিরাং ইউনিয়নে চকবাট্টা গ্রামের লোকজন রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে জড়িত হয়।
এতে অন্তত উভয়পক্ষের অর্ধশত লোকজন আহত হন। এ দিকে সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে সেনাবাহিনী ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া জানান, কিশোরগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর দোকান ও জায়গা তারা কয়েক বছর আগে ভাড়া নিয়ে জাল দলিল করে দখল করতে চেয়েছিল স্থানীয় আল-আমিন খন্দকার।
কিন্তু জাল দলিল হওয়ায় স্থানীয় সালিশ ও প্রশাসন কোথাও তারা পাত্তা পায়নি। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার রাতে আল আমিন ও তার ভাই পৌর যুবদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল খন্দকারসহ তাদের লোকজন ওই দোকানে তালা লাগিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয় নিয়ে সালিশ করায় জাল-জালিয়াতির বিষয়টা আমরা জানি। তাই এ অনৈতিক এ কর্মকান্ডে বাধা দেওয়ায় তারা হামলা চালায়। এক পর্যায়ে ছাদের ওপর থেকে গুলি করেছে উজ্জ্বল। গুলিতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
তবে পৌর যুবদলের আহবায়ক উজ্জ্বল খন্দকার জানান, নিজেরদের কেনা দোকানের দখল বুঝে নেওয়া হয়েছে। এখানে দখলের কোন বিষয় নেই। কিন্তু উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন লোকজন নিয়ে এসে দোকানের তালা ভেঙেছে। তাঁর অনুসারী অগণিত লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমার মোটরসাইকেলটি পুড়িয়ে দিয়েছে। পরে সেনাবাহিনী এসে আমাদের রক্ষা করেছে।
গুলির বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, সংঘর্ষে সময় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কেউ গুলি করেনি। এদিকে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অনুপ কুমার সরকার জনান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫ জনের মতো চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, কেন্দুয়া পৌর শহরের মধ্যবাজারে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, দোকানটি জাল দলিলে দোকান দখলকারী আল আমিন খন্দকার আসলে আওয়ামী লীগের লোক। তার চাচাতো ভাই যুবদল নেতা উজ্জ্বল খন্দকারকে ম্যানেজ করে ওই দোকানটি দখলের জন্য তালা দেয়৷ স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকার গণ্যমান্য সবাই জানে দীর্ঘদিন ধরে আলামিন জায়গা ও দোকান জাল দলিলে দখল করতে চাইছে। বুধবার রাতে দোকানে তালা দেওয়ার ঘটনায় বাধা দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন। এতে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। দুইজন গুলিবিদ্ধসহ অনেক আহত হয়েছেন।