রংপুরের মিঠাপুকুরে ‘গাছের সাথে বেঁধে কিশোরকে মারপিটের মামলার বাদিকে পাথর মেরে হত্যার হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের দুর্গামতি গ্রামের দিনমজুর সাহেব আলীর পুত্র রাজু মিয়াকে গত ১৯ অক্টোবর প্রভাবশালী এক প্রতিবেশির মেয়েকে ভালোবাসার অপরাধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে মধ্যযোগীয় কায়দায় বেধড়ক মারধর করেন হাফিজুর রহমান, আবদুল খালেক, করিম মিয়া, রবিউল, সেহেরুল, মোস্তা, আনারুল, রউফ, তালেব,চৌকিদার আশারাফুল, কুদ্দুস, মিজানসহ আরও কয়েকজন।
এ ঘটনায় ২২ অক্টোবর ৯ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন কিশোরের বাবা সাহেব আলী। সম্প্রতি, আসামিরা আদালত থেকে জামিন নেন। এর পরই তারা কিশোরের পরিবারকে নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। এতে, ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন ওই কিশোরের মা-বাবা।
সেখানে গিযে দেখা যায়, ছোটো একটি মাটির ঘরে মেঝেতে বিছানা পেতে শুয়ে কিশোের রাজু মিয়া (১৬)। একমাত্র ছেলের শিয়রের এক পাশে মা আফোজা বেগম, অন্য পাশে বাবা সাহেব আলী। তারা হাউমাউ করে কান্না করছেন।
সম্প্রতি, আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে কিশোরের পরিবারকে নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। এতে, ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন ওই কিশোরের মা-বাবা। তার বাবা সাহেব আলী হাউমাউ করে কান্না করে বলেন, আমরা গরীব মানুষ। কাম কিষাণী করি বউ ছইল নিয়া জীবন চলাই। ওরা আমার নিষ্পাপ ছেলেটাক ধরি নিয়া চোরের মতো মাইর ধর করল। ওদের সকলের বিচার চাই।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিঠাপুকুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিদ্যুৎ কুমার মজুমদার আসামীদের পক্ষ নিয়ে বলেন, তারা তো মিডিয়া এনে নিউজ করেছিল। আপনিও তাদের পক্ষে নিউজ করেন। মেয়েকে ডিস্টার্ব করবে, আর তাদেরকে নিয়ে এতো মাতামাতি। আমি বেশি কথা বলতে পারবোনা। সময় নেই। এ কথা বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন।
মিঠাপুকুর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি কিছুদিন আগে এই থানায় যোগদান করেছি। বিষয়টি ভালোভাবে জানিনা। খোঁজ নিয়ে দেখব।
উল্লেখ্য, সাহেব আলীর ছেলে রাজু মিয়া (১৬)। অভাবী সংসারে সে পড়ালেখা বাদ দিয়ে বাবার সাথে কৃষিকাজে সহায়তা করে আসছিলো। প্রতিবেশি ধনাঢ্য হাফিজুর রহমানের মেয়ের সাথে সম্প্রতি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। এ নিয়ে দুই পরিবারে মাঝে ঝগড়া-ঝাটি চলছিল। গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে নিজ বাড়ির সামনে সে দাঁড়িয়ে ছিল। সেখান থেকে মেয়ে পক্ষের লোকজন তাকে ধরে হাফিজুরের আঙ্গিনায় নিয়ে যায়। সেখানের একটি আম গাছের সাথে রশি দিয়ে শরীর এবং অন্য গাছের সাথে হাত শক্তভাবে বেঁধে ফেলে। এরপর আবদুল খালেক, করিম মিয়া, রবিউল,চৌকিদার আশরাফুল, সেহেরুল, মোস্তা, আনারুল, রউফ, তালেব, কুদ্দুস, মিজানসহ ১৫/২০ জন মিলে লাঠি দিয়ে রাজুকে বেধড়ক মারপিট করে। এতে, সে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এতেই তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি। পুলিশ ডেকে এনে ওই কিশোরকে তুলে দেয়। পুলিশ তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করে। আদালত থেকে পরের দিন জামিন পেয়ে ছেলেকে নিয়ে তার বাবা সাহেব আলী ভর্তি করান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, সেখানে টানা ১১ দিন চিকিৎসা শেষে ছেলে রাজুকে নিয়ে সাহেব আলী বাড়ি ফেরেন। একমাত্র ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঘরে যা কিছু ছিলো সব বিক্রি করে দিয়ে এখন তারা মাটিতে শুয়ে আছেন। সাহেব আলী আরও জানান,আমরা গরীব মানুষ হাতে কোনো টাকা নেই, ছেলের অসমাপ্ত চিকিৎসা করাতে গেলে অনেক টাকার দরকার। টাকার অভাবে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে এসেছি। এখন ছেলেটার প্রতিবন্ধীর অবস্থা হয়েছে। যা অবস্থা হয়েছে তাতে করে ওকে আর বাঁচাতে পারবো কিনা জানিনা।
এ বিষয়ে কথা হলে গোপালপুর ইউপি পারিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ তালুকদার বলেন, ওই ছেলেকে যে ভাবে প্রকাশো জনসম্মুখে মধ্যেযোগীয় কায়দায় ওই চৌকিদার আশরাফুল এবং অন্যানোরা মিলে যেভাবে মারধর করেছে, সেটা খুবেই অমানবিক।এরকম ন্যাক্কার জনক ঘটনা ইতিপূর্বে কেউ এই ইউনিয়নে ঘটায়নি। যারাই এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত আছে আমি তাদের সকলেরই দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি কামনা করছি।